ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাত বছরে তিন শতাধিক ছিনতাই ও মাল লুট ;###;৫ বছরে অন্তত ৪ চালক খুন ;###;মহাসড়কে সক্রিয় ডাকাত, অজ্ঞান ও মলম পার্টি ;###;রফতানিযোগ্য পণ্য ডাকাতি বা খোয়া যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন;###;অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব

পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা চাই ॥ অরক্ষিত মহাসড়ক

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা চাই ॥ অরক্ষিত মহাসড়ক

রাজন ভট্টাচার্য ॥ পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তাহীন মহাসড়ক। সাত বছরে তিন শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সড়কে ওঁৎ পেতে থাকে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি। বছরে ৩০ থেকে ৪০টির বেশি এমন ঘটনা ঘটছে। চালককে মেরে পণ্যবাহী ট্রাক লুটের ঘটনাও কম নয়। পাঁচ বছরে হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন অন্তত ৪০ চালক। অনেকক্ষেত্রে চালকরাও জড়িত থাকে অপরাধে। রাজনৈতিক প্রভাবে অপরাধে যুক্তরা পার পেয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, বেনাপোল ও দৌলতদিয়া রুটে সবচেয়ে বেশি ডাকাতি ও ছিনাতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ডাকাতির জন্য মধ্যরাতকেই বেছে নেয় অপরাধী চক্র। তবে ছিনতাই হওয়া যান পরে পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খোয়া যাওয়া পণ্য আর উদ্ধার হয় না। আমদানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরি, ছিনতাই হয় ফেব্রিকস, কেমিক্যাল, র-কটন ও শোয়েটারের সুতো। এছাড়াও চাল, ডাল, রড, সুতো ও তুলা চুরি-ছিনতাইও হচ্ছে বেশ। রফতানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চুরি-ছিনতাই হয় গার্মেন্টসহ আর্থিকভাবে লাভজনক পণ্য। হাইওয়ে থেকে শুরু করে জেলা সড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় এসব ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবহন মালিক সমিতি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, গার্মেন্টসহ রফাতানিযোগ্য পণ্য ডাকাতি বা খোয়া যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিদেশী ক্রেতারা সহজেই বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। দাবি করেন ক্ষতিপূরণের। অনেক সময় চুক্তি বাতিল করেন। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে পণ্য আনা-নেয়ার কাজে নিয়োজিত ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ওপর। তারা বলছে, বিদেশী প্রতিষ্ঠানসমূহ পণ্য কেনার অর্ডার দেয় বিজিএমইএ সদস্যসহ সরাসরি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বার্ষিক পণ্য আনা-নেয়ার চুক্তি করে ট্রাক-কভার্ডভ্যান এজেন্সিগুলো। পণ্য রফতানির সময় মাল চুরি, ছিনতাই হওয়ার কারণে সঠিকভাবে মাল বুঝে পাননা ক্রেতারা। এতে ক্ষুব্ধ হন তারা। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন। এক পর্যায়ে দেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। এমনকি বকেয়া পাওনাও অনেক সময় পরিশোধ হয় না। ক্ষতিপূরণ হিসেবে কেটে রাখা হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ডভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব জনকণ্ঠ’কে বলেন, মহাসড়কে দিন দিন পণ্যবাহী যানবাহনে ছিনতাই, চুরিসহ ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের দাউদকান্দি থেকে কুমিল্লা ও ফেনী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত গার্মেন্টসের জন্য আমদানি ও রফতানি পণ্যসহ পরিবহন ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরি হচ্ছে। অনেক সময় রফতানি করা পণ্য কভার্ডভ্যানের ভেতর থেকে খুলে মাল লুটপাট হচ্ছে। চুরি ও লুট করে পণ্য নেয়ার পর কার্টনের ভেতরে ঝুট অথবা ঘর রেখে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ঢাকার কাঞ্চন ও মানিকগঞ্জ রুটে চালক ও হেলপারদের জিম্মি করে অহরহ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে বহুবার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবারই জনবল সঙ্কটের কথা বলা হয়। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে মাত্র ২ হাজার পুলিশ কর্মরত। এই সামান্য জনবল দিয়ে মোটেও সারাদেশের সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যান মালিকরা জানিয়েছেন, অর্থলিস্পা ও লোভের কারণে অনেক সময় চালকরাই ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। বিভিন্ন মামলায় পুলিশী তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত। অনেক সময় মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও শ্রমিকদের চাপ সৃষ্টি করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। তারা বলেন, মহাসড়কের স্পীডব্রেকারের সামনে বেশিরভাগ ডাকাতি, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টি তৎপর। তাই রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় স্পীডব্রেকার কমানোর দাবি জানান তারা। দেখা যায়, মানিকগঞ্জে ছিনতাই হওয়া কর্ভার্ডভ্যান একদিন পর পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের কোন নির্জনস্থানে। আবার অন্য রুটেও পরিত্যক্ত অবস্থায় গাড়ি উদ্ধার করা হয়। ৭০টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি রয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক কভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির অধীনে। এর মধ্যে প্রায় সবকটি এজেন্সির পরিবহন কোন না কোন সময়ে ছিনতাই বা ডাকাতির কবলে পড়েছে। মালিক সমিতির হিসেব অনুযায়ী সারাদেশে চলছে এক লাখ ২০ হাজার ট্রাক ও কভার্ডভ্যান। পরিবহন নেতারা বলছেন, মাইক্রোবাসে করেও পণ্য পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কোন না কোন অজুহাত তুলে গাড়ির সামনে মাইক্রোবাসে আসে অপরাধী চক্র। নিরূপায় হয়ে চালক গাড়ি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে অজ্ঞান পার্টি বা ডাকাত সদস্যরা। কখনও অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গাড়িসহ মাল নিয়ে যায়। আবার চালক ও হেলপারদের ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে দূরে কোথাও ফেলে দেয়। ঘটনার কয়েকদিন পর হয়ত তাদের খোঁজ মেলে। অজ্ঞান পার্টিরে খপ্পরে কিংবা ডাকাতের আক্রমণে তারা মারাও যান। ২০০৮-২০১৪ ॥ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের একাধিক মালিক সমিতির থাকায় সব তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয় না। ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর রিজওয়ান ট্রান্সপোর্টের ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৪৬৪৪ নম্বর গাড়িটি এন আর নিটিং মিলস লিঃ পণ্য পরিবহনের সময় মাল ছিনতাই হয়। ২০০৯ সালে আট জুন বাগদাদ পরিবহন সংস্থার ঢাকা মেট্রো ট-১১-৪৭৭১ নম্বর গাড়িটি সাভার রেনকন শোয়োটার ফ্যাক্টরির পণ্য পরিবহনের সময় মাল নিয়ে যায় ডাকাতদল। একই বছরের সাত জুলাই এরোমা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির খুলনা মেট্রো ট-১১-০৬০৩ নম্বর গাড়ি থেকে মাল ছিনতাই হয়। একই বছরে রুবেল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির একাধিক গাড়ি, জিএম ট্রান্সপোর্ট এ্যান্ড ট্রেনিং, স্প্রীড কার্গো এজেন্সির একাধিক গাড়ির মাল ছিনতাই ও লুট হয়। ২০১০ সালের ৩১ মার্চ এটি এম ট্রান্সপোর্টের ঢাকা মেট্রো ট-১১-৪৩৮৯ নম্বর গাড়িটি ক্যাসিওপিয়া এ্যাপারেলস লিমিডেটের পণ্য পরিবহনের সময় মাল চুরি যায়। একই বছরের ১৬ অক্টোবর এবি পরিবহনের চট্ট মেট্রো-ট-১১-১৬০৬ নম্বর গাড়িটি ইন্টারস্টপ এ্যাপারেলস লিমিটেডের পণ্য পরিবহনের সময় মাল ছিনতাই হয়। একই দিনে নোমান গ্রুপের পণ্য পরিবহনের সময় অনিকা ট্রান্সপোর্টের চট্র মেট্রো-ন-৪৬৯৮ নম্বর গাড়ি থেকে ডাকাতরা মাল নিয়ে যায়। একই দিনে অনিকা ট্রান্সপোর্টের আরেকটি পরিবহনসহ চৌদ্দগ্রাম ট্রান্সপোর্ট, মুনিরুল ইসলামের আরেকটি গাড়ি থেকে মাল খোয়া যায়। ২০১১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মঞ্জিল পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ট-১১-৪২৯২ নম্বর গাড়িটি দি নিউ ডেল্টা এ্যাপারেলস লিঃ পণ্য পরিবহনের সময় মাল লুট হয়। একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তারেক পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ট-১১-৬০২৩ নম্বর গাড়ির মাল ছিনতায়ের ঘটনা ঘটে। একই বছরে খাদিজা কার্গো সার্ভিস, আমির টান্সপোর্ট, সিকদার ট্রান্সপোর্ট, একটিভ ট্রান্সপোর্ট, আল বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট, মানি কার্গো সার্ভিস, এসআর কার্গো ক্যারেজ, এভারগ্রীন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস, মেসার্স মাল্টি মিডিয়া, ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, সোনার বাংলা, হাছিনা ট্রান্সপোর্ট এ্যান্ড কার্গো সার্ভিস, মেসার্স ভাই ভাই কার্গো সার্ভিস, মেসার্স করোনা ট্রেড এ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট, আলীরাজ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, মেসার্স তাজ ট্রেডিং এজেন্সিসহ বিভিন্ন পরিবহনের পণ্যবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যানের মাল ছিনতাই, চুরিসহ ডাকাতি হয়। ২০১২ সালের আট জানুয়ারি মেসার্স ফেন্ডস ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি ও মোকলেছ গাজী পিরোজপুর-ট-১১-০০৩৭ ও ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৩৮১৬ নম্বর গাড়ি দিয়ে মোহাম্মদী গ্রুপ এ্যাপারেলস ও এ্যাপারেলস লিমিডেটের পণ্য পরিবহনের সময় মাল চুরির ঘটনা ঘটে। একই বছরে, মেসার্স ফ্রেন্ডস ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, সেমার্স এভারসাইন পরিবহন সংস্থা, মেসার্স মডার্ন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস, মেসার্স এনএম কার্গো সার্ভিস, মেসার্স এমকে ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, মেসার্স ইকবাল পরিবহন, মেসার্স এভারেস্ট কার্গো সার্ভিস, মেসার্স শাহচান্দ পরিবহন সংস্থাসহ বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ট্রাক ও কভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহনের সময় ডাকাতি ও চালক বা ছিনতাইসহ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে। ২০১৩ সালের তিন মে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টের চুয়াডাঙ্গা-ট-১১০১৪৬ নম্বর গাড়িটি মেসার্স সেটার্ন টেক্সটাইল লিঃ পণ্য পরিবহনের সময় মাল চুরি যায়। একই বছরের দুই জুন অম্বর এক্সপ্রেসের ঢাকা মেট্রো-ট-১১-৬৪৪৯ নম্বর গাড়িটি গেজ ফ্যাশন লিঃ পণ্য পরিবহনের সময় মাল লুট হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা-মেট্রো-ট-ইউ-১১০৩৭৩ নম্বর গাড়িটি টেক্সপোর্ট গার্মেন্টের পণ্য পরিবহনের সময় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চালক জিতুকে হত্যা করে মাল লুটে নেয় ডাকাতরা। পরবর্তীতে নরসিংদী উপজেলা চেয়ারম্যানের গোডাউন থেকে মাল উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় হেলাল ও বাচ্চুকে। তবে ঘটনার অন্যতম হোতা রমজানকে পাওয়া যায়নি। অপর হোতা শাহ আলমের বাড়ির সামনে চালককে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর পরই বিভিন্ন জেলায় লুট হওয়া মাল পাঠিয়ে দেয়া হয়। জানা গেছে, নোয়াখালীর মাইজদীর চালক জিতু ছিলেন মায়ের একমাত্র সন্তান। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর পর ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তাঁর মা। এছাড়াও চলতি বছরের ২০ আগস্ট যমুনা ডেনিম লিঃ পণ্য পরিবহনের সময় ঢাকা মেট্রো-উ-১১-০২৩৭ নম্বর গাড়িটির মাল নিয়ে যায় ডাকাত দল। একই দিনে মডার্ন সার্ভিসের পিরোজপুর-ট-১১-০০৫৯ নম্বর গাড়িটির পণ্য খোয়া যায়। ২৩ জুলাই খান কুরিয়ার এ্যান্ড কোম্পানির ঢাকা-মেট্রো-ট-১১-৬৪৭১ গাড়িটির পণ্য লুট হয়। নয় নবেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়ায় পণ্য পরিবহনের সময় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢাকা মেট্রো-ট-১৫৫২৩৯ নম্বর গাড়িটির চালক। পরে গাড়ির মাল নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সড়ক-মহাসড়কে পণ্যবাহী পরিবহনের মাল চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি রোধসহ চালকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সমিতির সদস্যরা এসব রোধে আন্দোলনের পক্ষে মত দেন। অপরাধে কারা জড়িত ॥ অনুষন্ধানে জানা গেছে, মহাসড়কে শতাধিক গ্রুপ পণ্যবাহী মাল চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত। পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মূলত তিনটি চক্র এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এরমধ্যে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, ডাকাতদল ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। প্রথমে ব্যবসায়ীরা মাল লুট করার জন্য ডাকাতদলকে ভাড়া করে। পণ্য হাতে আসার পর দ্রুত বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এমনকি গুদামজাত করা হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করা হলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। পুলিশের চার্জশীটে তাদের নাম আসে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাক- কভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, পণ্য ডাকাতি বা চালক হত্যার বেশিরভাগ ঘটনায় ন্যায়বিচার পাই না। দিনের পর দিন মামলা ঝুলে থাকে। এক সময় মহাসড়কে মাল ডাকাতি বা ছিনতাই হলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করত না। পরে আইজিপির হস্তক্ষেপে মামলা নিলেও প্রভাবশালীদের প্রভাব বিস্তারের কারণে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রকৃত অপরাধীদের নাম উঠে আসে না। তিনি জানান, ঘটনার পর পরই পুলিশী তৎপরতা শুরু হলে অনেকক্ষেত্রেই লুট হওয়া মাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশ বাস ট্রাক কভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিমাসে কমপক্ষে ৫/১০ ডাকাতি ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ গার্মেন্টসের আমদানি করা পণ্য ডাকাতি হয়। শ্রমিকদের আহত করে কখনও বা হত্যা করে মাল লুটে নেয় অপরাধী চক্র। সমস্যা সমাধানে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মহাসড়কে যাত্রী ও পণ্যের নিরাপত্তার দাবিতে আমরা হাইওয়ে পুলিশ গঠনে আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু এই পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা মিলছে না। শতভাগ নিরাপত্তা নিয়ে পণ্য পরিবহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে চালকরাও যেমন জড়িত থাকে তেমনি প্রকৃত ডাকাতির ঘটনাও যথেষ্ট। বেড়েছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির তৎপরতা। অনেক সময় অপরাধী চক্র মাল লুটে নিতে চালকদের হাত করতে না পারলে হামলা চালায়।
×