ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আজ আসছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আজ আসছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে আজ শনিবার তিনদিনের সফরে ঢাকা আসছেন। ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। ভুটানী প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে উপআঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে শনিবার সকাল নয়টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন। হযরত শাহজালাল (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন। সকাল দশটায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই দিন গণভবনে বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসছেন। এই প্রতিনিধি দলে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিনজিন দর্জি ও অর্থমন্ত্রী নরবু ওয়াংচুক রয়েছেন। এছাড়া ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলও ঢাকায় আসছেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করা হবে। এছাড়া ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে অন্যান্যের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হবে। বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সন্ধ্যা সাতটায় সোনারগাঁও হোটেলের ব্যাঙ্কুয়েট হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান। ঐতিহাসিক সেই দিনটিতেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ঢাকা আসছেন। গত বছর জুলাই মাসে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকায় শেরিং তোবগের এটাই প্রথম সফর। ঢাকা সফরকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিমের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, সমুদ্রহীন দেশ ভুটান বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছে। আর তাদের ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সমর্থনও রয়েছে। তবে এ সুবিধাটি ভুটানকে বাংলাদেশ উপআঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় দিতে চায়। শুধুমাত্র ভুটানকে ট্রানজিট না দিয়ে বাংলাদেশ নেপাল ও ভারতকেও সমানভাবে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন, বিদ্যুতসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিতে চায়। এরই মধ্যে ভুটান, নেপাল ও ভারতের ঢাকার মিশন প্রধানরা সীমান্ত এলাকা, ট্রানজিটের রুট এবং যোগাযোগ অবকাঠামো ঘুরে দেখেছেন। ট্রানজিট সুবিধা পেলে ভুটানের আমদানিকৃত পণ্য মংলা অথবা চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে নৌ, সড়ক অথবা রেলপথ ধরে বাংলাদেশের বুড়িমারী-চেংরাবান্ধা কিংবা তামাবিল-ডাউকি শুল্ক বন্দর ঘুরে ভারত হয়ে ভুটানে প্রবেশ করতে পারবে। বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে সম্ভাব্য ট্রানজিট হিসেবে দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে লালমনিরহাটের চিলমারী। অন্যটি মংলা বন্দর হয়ে কাওখালী, বরিশাল, চাঁদপুর, মাওয়া, আরিচা, সিরাজগঞ্জ হয়ে লালমনিরহাটের চিলমারী। সূত্র জানায়, শেরিং তোবগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশ-ভুটান ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ ও ট্রানজিট, কৃষি, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বহুমাত্রিক ফোরামে সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও পর্যটনের বিষয়গুলো আসবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর এবং অন্যান্য বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয় তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইড্রো বিদ্যুত নিয়েও আলোচনা করা হবে। সদ্য সমাপ্ত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে বিদ্যুত ও জ্বালানি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে চায়। আর ভুটানও বাংলাদেশকে বিদ্যুত সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিদ্যুত আমদানির বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হবে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা লালমনিরহাট এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর দিয়ে বিকল্প পন্থায় পণ্য ট্রানজিট রুট নিয়েও আলোচনা হবে।
×