ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর রাতের ষড়যন্ত্রে জড়িতরা ॥ পার পাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

গভীর রাতের ষড়যন্ত্রে জড়িতরা ॥ পার পাবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, একটি দেশ পাশে না থাকলে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে-এখন এটা ভাবা উচিত হবে না। কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না, এমন চিন্তা না থাকাই ভাল। কারণ, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। একাত্তরেও দেশটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি। বরং যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্যও দেশটি সব চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। শুনেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে কোন ধরনের বোর্ডমিটিং ছাড়াই বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা লড়াই করে টিকে থাকতে পারি তাহলে স্বাধীন দেশ হিসেবে এখন পারব। রাতের অভিসার বন্ধ করে দিনের আলোতে রাজনীতি করার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকলে উনি (খালেদা জিয়া) অশান্তিতে ভোগেন। বিএনপি নেত্রীকে জিজ্ঞাসা করি, গভীর রাতে চুপি চুপি দেখা কেন? উনি কথায় কথায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। উনি হুমকি ধমকি দিয়ে যাক, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাবই। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না! কিছু সরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। যদি কোন সরকারী কর্মকর্তা আইনের বরখেলাপ করে থাকে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুক্রবার বিকেলে সরকারী বাসভবন গণভবনে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের অবস্থা থাইল্যান্ডের মতো হতো। দেশে মার্শাল ল্য কিংবা ওয়ান-ইলেভেনের মতো জরুরী অবস্থা জারি করে কথিত কেয়ারটেকার সরকার আসত। তখন কি আপনারা ভাল থাকতেন? নির্বাচন হয়েছে বলেই তো দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায়ও কার্যকর করছি। নির্বাচন না হলে তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও হতো না, বরং যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি তারা বেরিয়ে এসে অনেককেই কচুকাটা করত। সম্প্রতি তাঁর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফর নিয়ে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, টিআইবির রিপোর্ট, টকশো, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দলীয় নেতাদের অতিকথন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এন মাহমুদ আলী, কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। টিআইবি’র অর্থের উৎস খুঁজে বের করা হবে ॥ টিআইবির সম্প্রতি প্রকাশিত দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের ভয়াল দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, যারা ওই সময় দুর্নীতি করে হাজার হাজার টাকা কামিয়েছে, বিদেশে অর্থপাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে টিআইবিকে একটি কথাও বলতে শুনিনি। হঠাৎ এ সময় টিআইবির রিপোর্ট প্রকাশের উদ্দেশ্যটা কী? ২০০১ সালেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে টিআইবি জুন মাসে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, এখন করল ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু তাদের রিপোর্ট তো সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রকাশ করার কথা। কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেয়নি কেন টিআইবি? টিআইবির আয়ের উৎস সম্পর্ক খোঁজ নেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সরকারই এত বেসরকারী টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছে। অথচ টিভির মালিকরা এমন একজনকে তাদের সভাপতি করল যিনি (মোসাদ্দেক আলী ফালু) বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। টিভি চ্যানেল, ব্যাংকসহ এত শিল্পের মালিক উনি হলেন কীভাবে? তার আয়ের উৎস নিয়ে টিআইবি টু-শব্দটিও করে না কেন? দুর্নীতির অর্থ দিয়ে তারা (ফালু) নিজেদের ইজ্জত কিনছে, সে ব্যাপারেও টকশোতে কোন কথা শুনি না। টিআইবির আয়ের উৎস কী, কোথা থেকে টাকা আসে সেটাও খোঁজ করতে হবে। সেটি দেখা হবে। কারণ, সবারই জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর পুত্ররা দুর্নীতির অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। আমরা কিছু অর্থ উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থাকতে এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। এই মামলা মোকাবেলা করতে উনি ভয় পান, পালিয়ে বেড়ান। দুর্নীতির পাচারকৃত অর্থ দিয়ে তাঁর পুত্ররা লন্ডনসহ বিদেশে বিলাসিতা করছে। টকশোতে তো তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু বলতে শুনি না। টিআইবি তাদের দুর্নীতি খুঁজে বের করে না কেন? যারা হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে তাদের সম্পর্কে কোন কথা নেই, শুধু ছোটখাট কিছু বিষয় নিয়ে এমন ফলাও রিপোর্ট প্রকাশের উদ্দেশ্যটাই বা কী? সামরিক স্বৈরাচাররাই দেশে দুর্নীতির বীজ রোপণ করে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর সামরিক স্বৈরাচাররা ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশে দুর্নীতি বাসা বাঁধতে শুরু করে। আর দুর্নীতির বীজ রোপণই করে গেছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতি করলে বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপর রাখতে পারতাম না, দেশের এত উন্নতি হতো না। মাথাপিছু আয় ১২শ’ মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেত না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে দুর্র্নীতি হয় না? পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও কিছু খুঁজে পায়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আমাদের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে বিদেশ থেকে লোক পর্যন্ত ভাড়া করে এনেছিল। কিন্তু কোথাও কিছু পায়নি। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরাচাররা যে দুর্নীতির বীজ রোপণ করে গেছে, একদিনেই তার শিকড় উপড়ে ফেলা কখনই সম্ভব নয়। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে সরকার কারোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তাকে রেহাই দিচ্ছে না। গভীর রাতের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গ ॥ সরকারী কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর গুলশানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যদি সরকারী কর্মকর্তারা আইন ভেঙ্গে বৈঠক করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিগত উত্তরা ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, এত রাতে বৈঠক কেন? বিএনপি নেত্রীর এই যে গভীর রাতে চুপকে চুপকে দেখা করা; এটা কেন? তিনি বলেন, মানুষের মনে যখন শান্তি থাকে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তাতে অশান্তি হয়। বিএনপি নেত্রীকে বলব- তিনি যদি এই রাতের অভিসারটা বাদ দেন, যা করার দিনের আলোতে করেন; তা হলে সবার জন্যই ভাল হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ ॥ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল সম্পর্কে একটি মন্তব্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে কিনা, এ প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে সহকারী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন, তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁকে নিয়ে যদি কেউ কোন মতামত দিয়ে থাকে তাহলে সে দায়িত্ব তার। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল, আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নির্দেশেই তা করা হয়েছিল বলে শোনা গেছে। আমার বিরুদ্ধেও অপবাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সারা বিশ্ব তন্ন তন্ন করে খুঁজেও প্রমাণ পায়নি। পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এটা পূর্ব না পশ্চিম, উত্তর না দক্ষিণ; তা আমি বিবেচনায় নিতে চাই না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে কার কার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে হয়, তা করব। আজ পূর্ব বলব, কাল পশ্চিম বলব, এটা ঠিক নয়। পৃথিবীটা গোল, আমরা ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে বাস করছি। তবে কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না, এমন চিন্তা না থাকাই ভাল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথ অনুযায়ী আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথাই হচ্ছে; সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে শত্রুতা নয়। তাই আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আত্মবিশ্বাস থাকলে সবই হয়। বিশ্বব্যাংক ছাড়াই আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। দেশের মানুষ ভাল থাকলে বন্ধুর অভাব হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন সমস্যা হলেই কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে, এটা আমি মনে করি না। আর একটা দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) পাশে না থাকলে আমরা একেবারে শেষ হয়ে যাব? একাত্তরেও তো যুক্তরাষ্ট্র বিরুদ্ধে ছিল, বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যাতে না হয় সেজন্য সব রকম চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র করেছিল। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে। তাদের সহযোগিতা বাংলাদেশ সব সময় পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি আমরা লড়াই করে টিকে থাকতে পারি, তা হলে স্বাধীন দেশ হিসেবে এখন পারব। দেশের প্রত্যেক নাগরিককে বলব, এটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। সে মর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কেউ পাশে না থাকলে বাঁচব, না থাকলে মরে যাব; এটা ঠিক না। পাকিস্তানের কাছে চাওয়ার কিছু নেই ॥ পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানের কাছে আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। এর পরও কোন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা সমীচীন নয়। তিনি বলেন, একাত্তর সালেই তাদের আমরা পরাজিত করেছি। পাকিস্তান একটি পরাজিত শক্তি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তারাই এখন জানতে চাইছে আমরা কীভাবে উন্নতি করছি। কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের প্রশ্ন নাকচ করে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কারোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করা সমীচীন নয়। সমস্যা থাকতে পারে, দ্বন্দ্ব চলতে পারে, পাশাপাশি আলোচনাও চলতে পারে। সেটাই নিয়ম। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান যেমন তাদের পরাজয় মেনে নিয়েছে তেমনি বাংলাদেশের বিজয়কেও মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন, সব সময় আমি মনে রাখি, আমরা বিজয়ী জাতি। সার্কে সে অনুযায়ীই আমি আচরণ করেছি। তাছাড়া সার্ক চার্টার অনুযায়ী এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের কঠোর শাস্তি ॥ প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাঝে মাঝে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আসে। আমার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই, তদন্ত করে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করি। বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে হতো না, দলীয় ক্যাডারদের হাতে পুরো প্রশ্নপত্রই সরবরাহ করা হতো। আমরা কোন ঘটনা ঘটলে বসে থাকি না, সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেই। বিমানের কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে চরম অব্যবস্থাপনায় পুরো বিমানই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। আমরা নতুন বিমান কিনেছি, নিজস্ব বিমানেই হজযাত্রীরা যাতায়াত করেছে। কঠোর নজরদারিতে এনেছি বলেই বিমানে বিপুল পরিমাণ সোনা-গহনা ধরা পড়ছে। বিএনপির আমলে সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্ররাই এসব চোরাকারবারিতে জড়িত ছিল বলে কিছুই ধরা পড়ত না। এখন বিমানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছি, কিছু ঘটলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন ঘটনায় বিমানের যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন। তাতে দল ও সরকারের সমস্যা হয়। আমরা তো কারোর কথা বলার ওপর ট্যাক্স বসাইনি। যেকোন ব্যক্তির কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে। উনি ঠিক কী বলেছেন, তা এইচটি ইমামকেই প্রশ্ন করুন, উনিই ভাল উত্তর দিতে পারবেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। শত প্রতিকূলতা ও নাশকতা সত্ত্বেও নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। অনেক উন্নত দেশেও এত ভোট পড়ে না। ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে অপরাধী অপরাধীই, কোন দলের নয়। কেউ কোন ধরনের অন্যায় বা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হলে সে ছাত্রলীগ বা যাই করুক না কেন, আমরা তা বিবেচনায় না নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। অনেকেই আছে যারা পার্মানেন্ট গবর্নমেন্ট পার্টি; যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে দলের হয়ে যায়। তারাই নানা অপকর্ম করে সরকারের দুর্নাম করে। কিন্তু কেউ অপরাধ করে রেহাই পাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় কাউকেই আমরা ছেড়ে দেয়নি। কে কার জামাই বা আত্মীয়, কে কোন্ দলের সেটি আমরা দেখি না। আমাদের কাছে অপরাধী অপরাধীই। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, পাচ্ছেও না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী আগে বলেছিলেন আমি নাকি কোনদিন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। কিন্তু তাঁর কথা তাঁর বেলায় সত্য হয়ে গেছে। এখন উনি বিরোধী দলের নেতাও নন। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় উনি সরকারকে অনেক হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের পায়ের তলার মাটি অত্যন্ত শক্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড মেরে উনি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন, কিন্ত পারেননি। তাই উনি হুমকি ধমকি দিয়ে যাক, আমরা উন্নয়ন করে যাব।
×