ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিডনিবাণিজ্য রোধ করুন

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

কিডনিবাণিজ্য রোধ করুন

ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মানবদেহের কিডনি লেনদেন সম্পূর্ণরূপে বেআইনী হলেও এটি বন্ধ হচ্ছে না। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি এই মারাত্মক অপরাধ করেই চলেছে। এখন এই অপরাধ চক্রে জড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর কতিপয় বেসরকারী হাসপাতালও। সম্প্রতি মহানগরীর দুই প্রান্ত উত্তর ও দক্ষিণের দুটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপারেশনের নামে কিডনি চুরির ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। এর একটিতে পায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে কিডনি অপসারণ এবং অপরটিতে লেজার পদ্ধতির কথা বলে পাথর সরাতে গিয়ে রোগীর কিডনি কেটে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য এসব হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এভাবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কারও কারও জীবন নতুন করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। তিন বছর আগে মিডিয়ার কল্যাণে কিডনি ও লিভার ব্যবসার নিষ্ঠুর আদ্যোপান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নড়েচড়ে বসেছিল। ওই সময়েই পুলিশ এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মোট ৫৮টি চক্রের সন্ধান পায়। কিছু ধরপাকড়ও চলে। তারপর যথারীতি নীরবতা। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল ওইসব অমানবিক ব্যবসায়ীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে। বাস্তবে তা হয়নি বরং একে একে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর আবারও একই অবৈধ ব্যবসায় তাঁরা বহাল হন। মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে সরকার ১৯৯৯ সালে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন প্রবর্তন করে। এই আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি তার নিজের শরীরের কিডনি, হৃৎপি-, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, অস্থি, অস্থিমজ্জা, চক্ষু, চর্ম, টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য দিতে পারে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, সুস্থ ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তি তার দেহের যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (যদি বিযুক্তির কারণে তার স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা না থাকে), তা তার আত্মীয়ের দেহে দান করতে পারে। আরও বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য কোন ব্যক্তির দেহে সংযোজন করা যাবে না, যদি দাতার বয়স ১৮ বছরের কম হয়। মৃত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা যাবে না, যদি তাঁর বয়স ৬৫ বছরের উর্ধে হয়। আইন পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট নির্দেশনা উঠে আসে যে শুধু কিডনি নয়, মানবদেহের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই কেনাবেচা করা যাবে না। এমনকি এ উদ্দেশ্যে কোন বিজ্ঞাপনও দেয়া যাবে না। আইন অমান্যকারীদের জন্য তিন থেকে সাত বছর কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- হতে পারে। দেশের হতভাগ্য দরিদ্র মানুষ বার বার কিডনি খেকোদের লোভের শিকার হয়েছে। মঙ্গা অধ্যুষিত উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাটের শত শত অভাবী নারী-পুরুষ কিডনি বেচেছেন জীবন বাঁচানোর জন্য। তাদের কেউ কেউ প্রতারণার শিকার হয়ে কিডনির পাশাপাশি যকৃৎ হারিয়েছেন। তাঁদের দারিদ্র্য ঘোচেনি, বরং জীবন আরও সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছে। কিডনি ব্যবসায়ী ও দালালদের হাত থেকে গরিব মানুষকে রক্ষা করার কথা ভাবতে হবে প্রথমে। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ওই ভয়ঙ্কর ব্যবসায়ীরা যাতে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, রাজধানীর যে আটটি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে কিডনি অপারেশনের ব্যবস্থা আছে সেগুলোর প্রতিটি অপারেশনের তথ্য বিশদভাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। সমন্বিতভাবে এসব উদ্যোগ কিডনি বিক্রি বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
×