ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দৃঢ় বন্ধন

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দৃঢ় বন্ধন

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও এক ধাপ অগ্রগতি হলো। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশ দুটি পারস্পরিক সহযোগিতার হাত আরও সুদৃঢ় করতে সম্মত হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ মালয়েশিয়া। বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির বড় বাজারও দেশটি। ছয় লাখের মতো বাংলাদেশী সেখানে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। ভারত ও পাকিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী দেশ বাংলাদেশ। তাই উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর ও জোরদার করার প্রচেষ্টায় দুই দেশই সক্রিয়। তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মালয়েশিয়া এগিয়ে আছে অনেক দূর। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। আগামী ৬ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া। উভয় দেশ তাই নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সম্প্রসারিত করছে। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র মালয়েশিয়া। দ্বিপক্ষীয় কল্যাণ ও সহযোগিতা জোরদার করে সমৃদ্ধ হওয়ার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে উভয়ে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশ নিজ অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করতে চায়। তাই জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে যে সব প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান তা দূরীভূত করতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া। ফলে আরও বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হবে সেদেশে। অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানকে মালয়েশিয়া গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়ায় তিনদিনের সফরে বাংলাদেশ সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে জোরদার করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য সরকার প্রধানের মধ্যে আলোচনাও ফলপ্রসূ হয়েছে। দেশ দুটি ১টি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে। জনশক্তি রফতানি, পর্যটন ও সংস্কৃতি খাতে সম্পাদিত চুক্তির ফলে এই তিনটি খাতে মালয়েশিয়ার সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়ার পথ বাংলাদেশের জন্য আরও প্রসারিত হলো। ভিসা শর্তাবলীর আংশিক বিলোপন করে কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে এখন থেকে দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা বিমানবন্দরে নেমেই ‘আগমনী ভিসা’ পাবেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মালয়েশিয়ার একটি প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশীর কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এটি পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে। বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সমঝোতা আলোচনা করেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক অসাম্যতা রয়েছে, যা কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৮টি অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে তুলেছে। যাতে অবকাঠামোসহ সব ধরনের সমস্যা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা সে দেশের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বানও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেই ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই। এই সম্পর্ক ক্রমশ গাঢ় বন্ধনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করে তুলবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
×