ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাত্র দু’জনকে ফাঁসি দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

মাত্র দু’জনকে ফাঁসি দিন

পরীক্ষা ছাড়াই দেয়া হয় প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্ট। কম্পিউটারে সাজানো থাকে রিপোর্ট খাতা। রোগীর তথ্য টাইপ করে প্রিন্ট দিলেই বেরিয়ে আসে পরীক্ষার রিপোর্ট। নকল করা হয় চিকিৎসকের স্বাক্ষর। নেই কোন টেকনিশিয়ান। এমন ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই চিকিৎসা চলে রোগীর। আর চিকিৎসকরাও চালিয়ে যান তাঁদের চিকিৎসা কার্যক্রম। এভাবে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন অনেক রোগী। ২৪ নবেম্বর, সোমবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বিপরীতে মোহাম্মদপুরে ‘ন্যাশনাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে এমন একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে র‌্যাব-২-এর অভিযান পরিচালিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে মালিক আবদুল বাকী বকুলকে (৪০) ১ বছর কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং টেকনিশিয়ান সামায়ন আলীকে (২২) ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করে মোবাইল কোর্ট। দ্বিতীয় খবর : ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’-এ সাম্প্রতিক শেষ হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সহায়তায় ফেসবুকের পাঁচটি গ্রুপ ও ১৪টি এ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছেন। এই গ্রুপ তাদের ফেসবুক এ্যাকাউন্টে সমাপনীর বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন আপলোড করেছে বলে তদন্তকালে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন। তদন্তে দেখা গেছে, এসব এ্যাকাউন্টধারী বেশিরভাগই তাদের কনটেন্ট আপলোড করেছেন ময়মনসিংহ ও বগুড়া- এ দুটি জেলা থেকে। তাদের আপলোড করা কথিত প্রশ্নের ৬০ থেকে ৯০ শতাংশই পরীক্ষার মূল প্রশ্নপত্রে কমন পড়েছে। এখন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। চিহ্নিত ১৪টি ফেসবুক এ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর থানায় মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। প্রথম অপরাধী গ্রুপটি গরিব অসহায় মানুষদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে। কারণ মিথ্যা রিপোর্টের ভিত্তিতে অবধারিত তাদের ভুল চিকিৎসা হবে এবং ভুল চিকিৎসা তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আর দ্বিতীয় গ্রুপটি কোমলমতি শিশুদের জীবন ধ্বংস করছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে। এক শ্রেণীর কোচিং সেন্টার এই ভয়ানক কাজের সঙ্গে জড়িত যা বার বার মিডিয়ায় আসছে। মানবতা অপরাধের বিচার যদি আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৩ বছর পর করতে পারি তাহলে এই মানবতা বিরোধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার আমরা করতে পারব না কেন? ভুয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খবর এর আগেও বেরিয়েছে এবং তাদের জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই জেল জরিমানা যথেষ্ট নয়; সেই কারণেই অন্য কেউ সাহস পাচ্ছে এ জাতীয় অপরাধ বারবার করতে। সমাজের এই ভয়ঙ্কর অপরাধীদের একটাই শাস্তি, তা হলো ফাঁসি। প্রথম এবং দ্বিতীয় গ্রুপ থেকে একজন করে অপরাধীর ফাঁসি দিন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে, বাকিরা মেসেজ পেয়ে যাবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে যদি আমরা এক শতাংশ পরিমাণও ছাড় দেই, এদেশের ভবিষ্যত বলে কিছু থাকবে না। এটা আমরা যত দ্রুত বুঝব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব, ততই মঙ্গল। লেখক : শিক্ষক ও সাংবাদিক [email protected]
×