ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দু’শ’ ছবিতে সাজানো আটদিনের চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

দু’শ’ ছবিতে সাজানো আটদিনের চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়ের ব্যাপ্তিতে ছোট হলেও অনেক সময় বিষয়ের গভীরতায় বড় হয়ে ওঠে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। অনেকটা ছোটগল্পের মতোই বড় বিষয়কে ধারণ করে পথ চলে চলচ্চিত্রশিল্পের এ মাধ্যমটি। স্বাধীন ধারার এ চলচ্চিত্র মাধ্যমটিতে উঠে আসে রাজনীতি, সমাজ, দর্শন, যাপিত জীবনের কথা ও বৈশ্বিক ভাবনাসহ নানা বিষয়। আর এমন বৈভবময় বিষয়ের চলচ্চিত্র নিয়ে সিনেপ্রেমীদের জন্য রাজধানীতে শুরু হলো বিশেষ আয়োজন। ত্রয়োদশতম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব। বিশ্বের ৪০টি দেশের দুই শতাধিক ছবি নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ১৩তম উৎসব। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে। এই প্রথম উৎসবে প্রধান সহযোগী হিসেবে সহায়তা করেছে সরকার। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি উৎসবে রয়েছে আন্তর্জাতিক বক্তৃতা, জাতীয় সেমিনার, চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা ও বিশেষ প্রদর্শনী। এ আয়োজনে সম্মাননা জানানো হবে ভারতীয় স্বাধীন ধারার বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগালকে। ‘মুক্ত ছবি, মুক্ত প্রকাশ’ সেøাগানে রাজধানীর ছয়টি ভেন্যুতে চলবে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত আট দিনের এ উৎসব। মূল তিনটি উৎসব কেন্দ্র হচ্ছে জাতীয় জাদুঘর, সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও শিল্পকলা একাডেমি। বাকি তিনটি কেন্দ্র হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ধানম-ির রাশিয়ান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার হেমন্তের বিকেলে মুখরিত পরিবেশে জাতীয় জাদুঘরের খোলা আঙ্গিনায় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শুরুতেই গীত হয় আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানের মধুমাখা চরণগুলো। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে পঞ্চভাস্করের শিল্পীরা। এরপর পরিবেশিত হয় উৎসব সঙ্গীত বিশ্ববীণা রবে বিশ্বজন মোহিছে...। গান শেষে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। যৌথভাবে পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও রাশিয়ার চলচ্চিত্র সমালোচক সার্গেই আনাশকিন। প্রাথমিক সূচনা পর্ব শেষে জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বসে উদ্বোধনী আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আলোচনায় অংশ নেন শর্টফিল্ম ফেরামের সভাপতি মানজারে হাসীন মুরাদ ও উৎসব পরিচালক তারেক আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। অনুষ্ঠানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় উৎসবে যোগ দেয়া বিদেশী অতিথি নেপালের খ্যাতিমান প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা কেসাঙ্গ লামা, ইতালির চলচ্চিত্রবোদ্ধা মারামাতা, ভারতের চলচ্চিত্রকার আফ্রিদা হোসেন ও রাশিয়ার চলচ্চিত্র সামলোচক সার্গেই আনাশকিনকে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, চলচ্চিত্র বিনোদনের মাধ্যম। আর বিনোদন হচ্ছে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার অন্যতম মাধ্যম। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হতে হবে শিক্ষা-তথ্য ও বিনোদনসমৃদ্ধ। মূলধারার চলচ্চিত্রের চেয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের চলচ্চিত্রকে উৎসাহিত করতে সরকার কাজ করছে। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহী মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলে উৎসব সার্থক হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। নাসির উদ্দীন ইডসুফ বলেন, পৃথিবীর নানা দেশের ৪০০ ছবি থেকে বাছাইকৃত ২০০ ছবি নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের উৎসব। সঙ্গে ২০ জন অতিথির অশগ্রহণ উৎসবে এনেছে ভিন্ন মাত্রা। চলচ্চিত্র নির্মাণকে একইসঙ্গে শ্রমসাধ্য ও মধুর বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেইন ইজ টেম্পোরারি, ফিল্ম ইজ এভারগ্রিন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হয় ইরাকের ছবি ‘বাগদাদ মেসি’ ও ভারতের চলচ্চিত্র ‘পনি এন্ড মি’। উৎসবে অংশ নিতে কাল শনিবার ঢাকায় ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খ্যামিন চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। রবিবার বিকেল চারটায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে তাঁকে সম্মাননা জানানো হবে। এছাড়া উৎসবে আলমগীর কবির স্মারক বক্তৃতার বক্তা হিসেবে উৎসবে যোগ দেবেন খ্যাতিমান ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মিজ. অরুণা বাসুদেব। জুরি সদস্য হিসেবে অংশ নেবেন শ্রীলঙ্কার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রসন্ন ভিথানাগে। উৎসবে হীরালাল সেন স্মারক সম্মাননা, আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (ডকুমেন্টারি ও ফিকশন), তারেক শাহরিয়ার বেস্ট ইন্ডিপেনডেন্ট শর্টস ও নেটওয়ার্ক ফর প্রমোশন অব এশিয়ান সিনেমা (নেটপ্যাক) জুরি পুরস্কার দেয়া হবে। আজ শুক্রবার সকাল ১১টা, বেলা ৩টা, বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা সাতটা এই চারটি জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। একই সময়ে গণগ্রন্থাগারেও দেশ-বিদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীগুলো হলো বেলা ৩টা, বিকেল পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাতটায়। এছাড়া জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে (৭-৯ ডিসেম্বর), ইন্ডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (৫, ৬ ও ১১ ডিসেম্বর) ও রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে (৫,৬ ও ৭ ডিসেম্বর) ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচীতে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে পিঠা উৎসব ॥ হৈমন্তী আমেজে পিঠা-পুলির মনমাতানো গন্ধে যেন গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপটি দৃশ্যমান হলো রাজধানীর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর মিলনায়তনে। বিশ্ববিদ্যালয়েটির শিক্ষার্থীদের কালচারাল ক্লাবের আয়োজনে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। ১৫টি স্টলে ঠাঁই পেয়েছে শতাধিক রকমারি পিঠা ও মজাদার গ্রামীণ খাবার। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্ব পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ মোর্শেদা চৌধুরী। উদ্বোধনী বক্তব্যে মশিউর রহমান বলেন, পিঠা উৎসব হচ্ছে বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির উৎসব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম নূরুল ইসলাম ও পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
×