ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত ঘোষণার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর নড়ে উঠলেন

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

মৃত ঘোষণার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর নড়ে উঠলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর মৃত্যু। ‘মৃত্যুর প্রমাণপত্রে’ (ডেথ সার্টিফিকেট) আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পন্ন করতে সাড়ে তিন ঘণ্টা পার। এর পর মরদেহ নিতে মর্গের লোকজন হাজির। মর্গ অফিসে নেয়ার জন্য ট্রলিতে ওঠার পর হঠাৎ মৃত ব্যক্তি নড়েচড়ে উঠলেন। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে ডেথ সার্টিফিকেট লেখা চিকিৎসকের তোড়জোড়। তোলপাড় শুরু হয় হাসপাতালে। অবশেষে সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে মৃত ঘোষণা করা অজ্ঞাতপরিচয় নারীর শরীরে স্যালাইন পুশ করা হলো। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর ইউনিটে। শিহরণ জাগানো এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন ওই ইউনিটে চিকিৎসা নেয়া রোগীসহ তাদের স্বজনরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাটি শুনে দায়ী চিকিৎসকের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে পুরো ঢামেকে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২ ডিসেম্বর ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছিল অজ্ঞাতপরিচয় (৪৫) ওই নারীকে। তার স্থান হয় ঢামেকের নতুন ভবনের ৮০২ নং ওয়ার্ডের ৭ নং ইউনিটে। দু’দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করলে ওয়ার্ডবয় বেলাল মৃত ঘোষণার কাগজপত্র নিয়ে মর্গ অফিসে যায়। মর্গ অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তা নূরে আলম বাবু মৃত ঘোষণার কাগজপত্র গ্রহণ করেন। পরে আজিজ নামে এক কর্মীকে মৃত নারীর লাশ আনতে পাঠান। বেলালকে নিয়ে আজিজ লাশ আনতে গেলে লক্ষ্য করেন, ‘মৃত’ নারীর হাত-পা নড়ছে। এতে পুরো ওয়ার্ডসহ ঢামেকজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তবে চতুর ওয়ার্ডবয় বেলাল মর্গ অফিসের কর্মী আজিজের কাছ থেকে মৃত ঘোষণার কাগজ কেড়ে নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে চলে যান। খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে ছুটে যায়। ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে নাম জানাতে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট নারী চিকিৎসক জানান, আসলে আমরা যখন তাকে মৃত ঘোষণা করেছি তখন তার হৃদকম্পন বা শারীরিক কোন সচলতা ছিল না। ওই নারী চিকিৎসক আরও জানান, মৃত ঘোষিত নারী দুর্ঘটনার শিকার নাকি অন্য কিছু। জবাবে তিনি বলেন, অপুষ্টির কারণে তার এ দশা। এরপর রোগী এখনও বেঁচে আছে কিনা জানতে চাইলে ওই নারী চিকিৎসক জানান, অবশ্যই বেঁচে আছে। কথাটি বলেই তিনি ওয়ার্ডবয় বেলালকে স্যালাইন দেয়ার নির্দেশ দেন। হাতে ক্যানোলা করে ওই নারীকে স্যালাইন দিতে থাকেন বেলাল। ওই নারী সম্পর্কে জানতে চাইলে তার ভর্তি ফাইলে দেখা যায়, প্রযতেœ (কেয়ার/অব): পরিচালক। কোন্ ‘পরিচালক’ প্রশ্ন করা হলে ওয়ার্ডবয় বেলাল জানান, ঢামেক পরিচালকের রেফারেন্সে তাকে ভর্তি করা হয়েছে এখানে। এ বিষয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢামেক জরুরী বিভাগ সংলগ্ন রাস্তায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদকালে ২ ডিসেম্বর ওই নারীকে ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখি। তখন লোকজন দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করি। ‘মৃত’ ঘোষণার পর ওই নারী জেগে ওঠার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, দোষী চিকিৎসককে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। এ বিষয়ে ওই ওয়ার্ডের রোগীর পাশে আরেক রোগী আত্মীয় জানান, দুপুরে চিকিৎসকরা ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। বিকেল ৫টার দিকে মর্গের লোকজন তাকে ভ্যানে ওঠাতে গেলে তিনি নড়েচড়ে ওঠেন। তখন আশপাশের লোকজনই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন।
×