ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রটোকল সই হওয়ায় এ সুযোগ সৃষ্টি ॥ প্রথম পর্যায়ে যাবে ১২ হাজার শ্রমিক

মালয়েশিয়ার সারওয়াকে ৬০ হাজার বাংলাদেশী কাজের সুযোগ পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

মালয়েশিয়ার সারওয়াকে ৬০ হাজার বাংলাদেশী কাজের সুযোগ পাচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির বিষয়ে নতুন চুক্তি হওয়ায় সেদেশের সারওয়াক প্রদেশে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কাজের সুযোগ পাবে। আর তাদের বেতন হবে মালয়েশিয়ার মূল ভূখ-ের শ্রমিকের সমপরিমাণ। সেখানে বনায়নই কেবল নয় সব খাতেই শ্রমিকরা কাজ করতে পারবে। আর মালয়েশিয়ায় এসব শ্রমিক দ্রুত পাঠানো সম্ভব হলে সেদেশে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়া শ্রমিকের সংখ্যাও হ্রাস পাবে। পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালয়েশিয়া সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রম কর্মসংস্থান বিষয়ক চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মূল ভূখ-ের পাশাপাশি সারওয়াক প্রদেশে কাজ করার সুযোগ পাবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা। শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জি-টু-জি যে চুক্তি রয়েছে তার সংশোধন করা হয়েছে এই চুক্তির মাধ্যমে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে আগের চুক্তিটি মূল ভূখ-ের জন্য প্রযোজ্য ছিল, তবে নতুন করে প্রটোকল সই হওয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকরা দেশটির সারওয়াক প্রদেশেও কাজ করার সুযোগ পাবে। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে জনশক্তি রফতানি বিষয়ক চুক্তি হওয়ার ফলে সারওয়াক প্রদেশে প্রাথমিক অবস্থায় ১২ হাজার শ্রমিক যেতে পারবেন। এসব শ্রমিক যাবেন সরকার থেকে সরকারের (জিটুজি) মাধ্যমে। তবে পর্যায়ক্রমে সেখানে ৬০ হাজার শ্রমিক যেতে পারবেন। নতুন চুক্তি অনুযায়ী সারওয়াক প্রদেশের সবখাতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হবে। আগে সরকারী ব্যবস্থাপনায় শুধু বনায়ন খাতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যেতে পারত। তবে এখন বনায়ন খাতের বাইরেও উৎপাদন, নির্মাণ ও বিভিন্ন সেবাখাতে (সার্ভিস) শ্রমিক নেয়া হবে। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্রক্রিয়ায় জনশক্তি রফতানির জন্য ২০১২ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তিতে শুধু বনায়ন খাতে শ্রমিক পাঠানো যেত। তবে এবারের নতুন চুক্তিতে বনায়ন খাতের বাইরেও বিভিন্ন খাতে শ্রমিকরা যেতে পারবেন। এছাড়া এখন সারওয়াক প্রদেশে যাওয়া শ্রমিকরা মূল ভূখ-ে কর্মরত শ্রমিকের সমান বেতন পাবেন। কেননা মালয়েশিয়ার মূল ভূখ-ে কর্মরত শ্রমিকরা বেশি পরিমাণে বেতন পেয়ে থাকেন। আর অন্যান্য প্রদেশের শ্রমিকদের বেতন কম হয়ে থাকে। মালয়েশিয়ার মূল ভূখ-ে কর্মরত শ্রমিকরা মাসে বেতন পান ৯০০ রিঙ্গিত (প্রায় ২১ হাজার টাকা)। অন্যদিকে মূল ভূখ-ের বাইরে বিভিন্ন প্রদেশে মাসে বেতন পান সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রিঙ্গিত (প্রায় ১৬ হাজার থেকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা)। তবে সারওয়াক প্রদেশে যাওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকরাও মালয়েশিয়ার মূল ভূখ-ের শ্রমিকের সমপরিমাণ বেতন পাবেন। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে ৬০ হাজার শ্রমিক পাঠানো গেলে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়া শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাবে। কেননা এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে মালয়েশিয়া পাঠানো সম্ভব হলে নৌকাযোগে বা অবৈধ পথে পাড়ি দেয়া শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পাবে। সে কারণে চুক্তির পরে দ্রুত শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম গত আগস্ট মাসে ঢাকা সফর করেন। তিনি সে সময় বাংলাদেশ থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে সেখানে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের বায়োডাটা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক নেবে, সেসব শ্রমিক যেন দক্ষ হয় ও কোন ধরনের অপরাধমূলক কাজে যেন জড়িত না থাকে, সেটা নিশ্চিত হতে চায় মালয়েশিয়া। সে কারণে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের বায়োডাটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক পাঠানো হবে, তাদের অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। এর আগে মালয়েশিয়ার জন্য নিবন্ধিত হওয়া ১৪ লাখ লোকের মধ্যে থেকেই এসব শ্রমিক পাঠানো হবে। নিবন্ধনের বাইরে কোন শ্রমিক পাঠানো হবে না। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। কর্মরত এসব লোকের মধ্যে বেশিরভাগই শ্রমিক। বাংলাদেশী শ্রমিকরা দক্ষ ও কর্মঠ হওয়ায় তাদের সুনাম রয়েছে। এখন মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে আরও কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকেই শ্রমিক নিতে আগ্রহী। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার থেকে তিনদিনের সফরে মালয়েশিয়া যান। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরকালে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এসব আলোচনার মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জনশক্তি রফতানি, ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়গুলোকে জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরকালে সেদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চারটি চুক্তি সই হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে শ্রম কর্মসংস্থান বিষয়ক চুক্তি, ভিসা অব্যাহতি বিষয়ক চুক্তি, সংস্কৃতি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি ও পর্যটন সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি। আর শ্রম কর্মসংস্থান বিষয়ক চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশের ৬০ হাজার শ্রমিকের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
×