ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ যেসব এলাকা হানাদার মুক্ত হয়

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

আজ যেসব এলাকা হানাদার মুক্ত হয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আজ বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর। একাত্তর সালের এই দিনে দিনাজপুরে ফুলবাড়ী, শেরপুরের ঝিনাইগাতী, লক্ষ্মীপুর, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও জামালপুর হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের পাঠানো- দিনাজপুর ॥ আজ ৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড পাকবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে পাকিস্তানী পাক দখলদার বাহিনীকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করে ফুলবাড়ী এলাকা দখলদার শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। ফুলবাড়ী স্বাধীন হওয়া মাত্র ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাজোয়া যান যমুনা নদী পার হয়ে চকচকা রাইস মিলের নিচ দিয়ে ওপরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে একটি গাড়ি চুরমার হয়ে যায়। সাজোয়া যানে থাকা একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসারসহ ৩ জন নিহত হয়। যা ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে যমুনা নদীর তীরে সরকারী কলেজ সংলগ্ন স্থানে সেই শহীদের সমাধি দেয়া হয় এবং সেখানে তাঁদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। শেরপুর ॥ আজ ৪ ডিসেম্বর; শেরপুরের ঝিনাইগাতী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে হারিয়ে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলা মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকহানাদার বাহিনী যখন ঢাকার বুকে হত্যাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেই রাতেই ৩-৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরিত স্বাধীনতার ঘোষণার টেলিগ্রাম মেসেজ ঝিনাইগাতী ভি এইচ এফ ওয়্যারলেস অফিসে পৌঁছে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মেসেজটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করেন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি শেরপুর নিউ মার্কেট মোড়ে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে পাঠ করা হলে সমবেত জনতা মুহুর্মুুহু সেøাগানে মুখরিত করে তোলে শেরপুরের পরিবেশ। ৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাকবাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদনগর হেডকোর্য়ারটারের সৈনিকদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। এভাবে রাতের আঁধারে বিনাযুদ্ধে ঝিনাইগাতী শত্রুমুক্ত হয়। ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ায়। লক্ষ্মীপুর ॥ আজ ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এই দিন লক্ষ্মীপুর হানাদারবাহিনী মুক্ত দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-সাম্সের সহায়তায় তৎকালীন লক্ষ্মীপুরের ৪টি থানায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ শেষে বহু নিরীহ নারী-পুরুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই সময় মুক্তি সেনারা ১৭ বার সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার বাহিনীদেরকে প্রতিহত করে ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরকে মুক্ত করে। দামুড়হুদা ॥ আজ ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার দর্শনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই দামুড়হুদার সীমান্ত এলাকার সাব-সেক্টর ও অ্যাকশান ক্যা¤েপর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ শুরু করে। ৩ ডিসেম্বর ভোরে হায়েনা দলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দর্শনায় তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের চাপে দিশেহারা হয়ে দর্শনা ছেড়ে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে পলায়ন করে। ৪ ডিসেম্বর সাধারণ মানুষ গেয়ে ওঠে বিজয়ের গান। বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন দর্শনায় উড়িয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন দর্শনায় নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। জামালপুর ॥ ৪ ডিসেম্বর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়াকামালপুর হানাদার মুক্তদিবস। ১৯৭১-এর এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয় পাকিস্তানী সেনারা। শত্রুমুক্ত হয় ১১নং সেক্টরের ধানুয়াকামালপুর রণাঙ্গন। স্বাধীন বাংলার আকাশে ওড়ে অহংকারের বিজয়ের পতাকা। ধানুয়াকামালপুর থেকে ২কিলোমিটার দূরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জে ১১নং সেক্টরের সদরদপ্তর ছিল। এ সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন, শহীদ লেফটেনেন্ট কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম। যুদ্ধপরিচালনার সুবিধার্থে ১১নং সেক্টরকে মহেন্দ্রগঞ্জ, মানকারচর, পুরাকাশিয়া, ডালু, বাগমারা, শিববাড়ী, রংড়া ও মহেশখোলা মোট এ আটভাগে ভাগ করা হয়। ধানুয়াকামালপুরে ছিল একটি শক্তিশালী পাকসেনা ঘাঁটি। এ সেক্টরের নিয়মিতবাহিনীর ৩ হাজার ও ১৯ হাজার গণবাহিনীসহ মোট মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ২২ হাজার। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ধানুয়াকামালপুর হানাদার দিবস নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হবে। এ উপলক্ষ্যে ধানুয়াকামালপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকালে র‌্যালি ও আলোচনা সভা উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোরশেদ খান বীর বিক্রম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এমপি। সভাপতিত্ব করবেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আলহাজ মাহবুবুল হক বাবুল চিশতী।
×