ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরে ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হবে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরে ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে শনিবার তিনদিনের সফরে ঢাকা আসছেন। সফরকালে বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। ভুটানী প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান। ঐতিহাসিক সেই দিনটিতেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ঢাকা আসছেন। আগামী ৬-৮ ডিসেম্বর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন। তাঁর এ সফরকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে। প্রতিনিধিদলে ভুটানের পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রীও রয়েছেন। এছাড়া ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলও ঢাকায় আসবে। তাঁর এই সফরের সময় বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন করা হবে। এছাড়া ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। সূত্র জানায়, সমুদ্রহীন দেশ ভুটান বাংলাদেশের নিকট ট্রানজিট সুবিধা চেয়ে আসছে। আর তাদের ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সমর্থনও রয়েছে। তবে এ সুবিধাটি ভুটানকে বাংলাদেশ উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় দিতে চায়। শুধু ভুটানকে ট্রানজিট না দিয়ে বাংলাদেশ নেপাল ও ভারতকেও সমানভাবে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন, বিদ্যুতসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিতে চায়। এরই মধ্যে ভুটান, নেপাল ও ভারতের ঢাকার মিশনপ্রধানরা সীমান্ত এলাকা, ট্রানজিটের রুট এবং যোগাযোগ অবকাঠামো ঘুরে দেখেছেন। ট্রানজিট সুবিধা পেলে ভুটানের আমদানিকৃত পণ্য মংলা অথবা চট্টগ্রামবন্দর হয়ে নৌ, সড়ক অথবা রেলপথ ধরে বাংলাদেশের বুড়িমারী-চেংরাবান্ধা কিংবা তামাবিল-ডাউকি শুল্কবন্দর ঘুরে ভারত হয়ে ভুটানে প্রবেশ করতে পারবে। বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে সম্ভাব্য ট্রানজিট হিসেবে দুটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে লালমনিরহাটের চিলমারী। অন্যটি মংলাবন্দর হয়ে কাওখালী, বরিশাল, চাঁদপুর, মাওয়া, আরিচা, সিরাজগঞ্জ হয়ে লালমনিরহাটের চিলমারী। সূত্র জানায়, শেরিং তোবগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশ-ভুটান ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ ও ট্রানজিট, কৃষি, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য বহুমাত্রিক ফোরামে সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও পর্যটনের বিষয়গুলো আসবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর এবং অন্যান্য বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়ও তুলে ধরা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ হাইড্রোবিদ্যুত নিয়েও আলোচনা করবে। বন্ধ থাকা লালমনিরহাট বিমানবন্দর এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর দিয়ে বিকল্প পন্থায় পণ্য ট্রানজিট রুট নিয়েও আলোচনা হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভুটান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার। সম্প্রতি বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনার বিষয়েও আগ্রহ জানিয়েছে ভুটান। এছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় বড় পাথর বা বোল্ডার রফতানির বিষয়েও আগ্রহ জানিয়েছে দেশটি। ‘ল্যান্ড লক’ দেশ হিসেবে পরিচিত ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেয়া করতে আগ্রহী। সে কারণে তারা বার বার বাংলাদেশ সরকারের কাছে ট্রানজিট চেয়ে আসছে। তবে তাদেরকে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এবারের সফরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। সূত্র জানায়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম রাষ্ঠ্র হলো ভুটান। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ভুটান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এ স্বীকৃতির বার্ষিকীতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে। এর আগে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সফরে ভুটান যান। তাঁর আমন্ত্রণে ফিরতি সফরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন। উলেল্লখ্য, ২০১১ সালে ভুটানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জিগমে ওয়াই থিনলে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সভাপতি হিসেবে ঢাকা সফর করেছিলেন। তার পর ভুটানের রাজা জিগমে কেশর নামগিয়েল ওয়াংচুক ২০১১ ও ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
×