ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আসুন, দেখুন বিনিয়োগ করুন

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

আসুন, দেখুন বিনিয়োগ করুন

বিডিনিউজ ॥ গত ছয় বছরে বাংলাদেশের সাফল্যগাথা ও আগামীর সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে কুয়ালালামপুরের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি বলেন, আপনাদের সবাইকে আমি বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাই-একবার আসুন এবং সত্যিকারের বাংলাদেশকে দেখুন। ‘বাংলাদেশ’ নামে আগামীর যে সাফল্যগাথা রচিত হচ্ছে, আপনিও তার অংশ হোন। ২০২০ সালের মধ্যেই উন্নতরাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। অন্যদিকে বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া। মালয়েশিয়ার শীর্ষ বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক দশকে আধুনিক মালয়েশিয়া গড়ে তুলতে আপনাদের অনেকেরই অবদান রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশও সেই সম্ভাবনা ধারণ করে। সব সীমাবদ্ধতা ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকার পরও বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের সুবিধা ও প্রণোদনা দিচ্ছে, যা আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে তিনদিনের সফরে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে মানবসম্পদ, পর্যটন, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়ে চারটি চুক্তি ও সমঝোতাস্মারক সই হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ, দ্রুততার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে সক্ষম জনশক্তি, সরকারের সহজ ও প্রতিযোগিতামূলক বিনিয়োগনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনা নিয়ে বাংলাদেশ নতুন সম্পর্কের সূচনা করতে প্রস্তুত। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণে কয়েক লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের অবদানের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির বড় বাজার মালয়েশিয়া। ছয় লাখের মতো বাংলাদেশী সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন (এসইজেড) গড়ে তুলছি। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য অবকাঠামোসহ সব ধরনের সমস্যা দ্রুত দূর করার চেষ্টা করছি। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে উপযুক্ত আইনী কাঠামো তৈরি, পুরো বিনিয়োগ সুবিধা সংস্কার, বিদেশী মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ আইন শিথিল এবং বিদেশীদের বাংলাদেশে কাজের অনুমতি দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করাসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন। বাংলাদেশে সড়ক, বিদ্যুত ও জ্বালানি, পর্যটন, সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ, খাদ্য ও কৃষি এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশ যৌথ এবং সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতেও বিনিয়োগ করতে পারেন। দেশের বিদ্যুত-জ্বালানি, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে সমস্যা থাকলেও সরকার এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি জানান। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পর মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী দেশ বাংলাদেশ। তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে মালয়েশিয়া এগিয়ে আছে অনেকদূর। বাংলাদেশ প্রতিবছর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য কেনে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যায় সাড়ে ১৩ কোটি ডলারের পণ্য। শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের এই পরিমাণ ২২০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দুই দেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। বাংলাদেশের দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি ২০২০ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথাও জানান তিনি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, বিশেষ করে নিটওয়্যার পণ্য রফতানি হয় প্রশান্তমহাসাগরীয় এই দেশটিতে। বিপরীতে আমদানি হয় জ্বালানি ও ভোজ্যতেল। বাংলাদেশে শতাধিক মালয়েশীয় কোম্পানির বিনিয়োগও রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন মালয় সাউথ-সাউথ এ্যাসোসিয়েশনের (এমএএসএসএ) সভাপতি আজমান হাসিম। বক্তৃতা দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বিনিয়োগের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা, বিশেষ করে গ্যাসের সুবিধা বিষয়ে মালয়েশিয়ার এক বিনিয়োগকারীর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের চাহিদার তুলনায় সরবরাহে এখনও ঘাটতি আছে। তবে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। গ্যাস আমদানি ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে সরকারের উদ্যোগের কথাও শেখ হাসিনা জানান। একজন বিনিয়োগকারী ঢাকার চারপাশে সার্কুলার রেলওয়ে নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানান। পর্যটন খাত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে রয়েছে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ এলাকা বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ দূতাবাস কর্মকর্তারা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন।
×