ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যাটো গড়বে ॥ দ্রুত মোতায়েনযোগ্য বাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ন্যাটো গড়বে ॥ দ্রুত মোতায়েনযোগ্য বাহিনী

ন্যাটো এক অন্তর্বর্তী সামরিক বাহিনী গঠন করবে বলে পশ্চিমা সামরিক জোটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষ সীমান্ত ছাড়িয়ে গেলে দ্রুত মোতায়েন হওয়ার মতো প্রস্তুতি এ বাহিনীর থাকবে। ন্যাটো কোন রুশ হামলা নিবৃত্ত করার সামর্থ্য বাড়ানোর চেষ্টা চালানোর প্রেক্ষাপটে ঐ পদক্ষেপ নিল। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। এ অগ্রবর্তী বাহিনী জার্মান, ডাচ ও নরওয়েজিয়ান সৈন্য নিয়ে গঠিত হবে। এতে এক ব্রিগেড (৩ থেকে ৪ হাজার) সৈন্য থাকবে। এ বাহিনী আগামী বছরের প্রথম থেকেই প্রস্তুত থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হয়। এর গঠন হবে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের পর ন্যাটোর সবচেয়ে বড় সামরিক সম্প্রসারণ। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভেরি হাই রেডিনেস জয়েন্ট টাস্কফোর্স নামে পরিচিত হবে। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্স বলেন, বিরাট কার্যগত ও আর্থিক চ্যালেঞ্জের কারণে কোন স্থায়ী দ্রুত কার্যমক্ষম বাহিনী ২০১৬ সালের আগে গঠন করা যাবে না। তিনি মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে ভাষণ দিচ্ছিলেন। অন্তর্বর্তী বাহিনী রাশিয়ার আরও আগ্রাসনমূলক সামরিক অবস্থানের বিরুদ্ধে এক সাময়িক প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ন্যাটো সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এর শীর্ষ সম্মেলনে এর জন্য ৬ হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত এক স্থায়ী দ্রুত কার্যক্ষম বাহিনী প্রয়োজন বলে এক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। এতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিসহ ন্যাটোর ২৮টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগই প্রতিফলিত হয়েছিল। কিন্তু এখন রুশ সৈন্যরা ইউক্রেন ক্রেমলিনপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা দিচ্ছে, রুশ সামরিক বিমানগুলো বার বার ন্যাটোর আকাশসীমায় টহল দিচ্ছে এবং সিরিয়া ও ইরাকের ইসলামিক স্টেট চরমপন্থীরা ন্যাটো সদস্য তুরস্কের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ন্যাটো কোন স্থায়ী বাহিনী প্রস্তুত করার জন্য এক বছর অপেক্ষা করতে পারে না বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। নতুন অন্তর্বর্তী অগ্রবর্তী বাহিনী ন্যাটোর বাল্টিক ও মধ্য ইউরোপীয় সদস্যদের প্রতিরক্ষায় কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে ছুটে যাওয়ার মতো প্রস্তুত অবস্থায় থাকবে বলে মনে করা হয়। অন্তর্বর্তী বাহিনী ১ জানুয়ারির মধ্যে গঠন করা হবে বলে ন্যাটোর এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান। তিনি জানান, ঐ বাহিনীর ইউনিটগুলো তাদের নিজ নিজ দেশেই থাকবে, না তাদের অন্য কোনস্থানে রাখা হবে; সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি। মস্কো আগামী বছর সামরিক মহড়া বৃদ্ধি করবে বলে ঘোষণা করার পর রাশিয়ার সঙ্গে আরও বড় সংঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে সোমবার কর্মকর্তারা উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। স্টোলটেনবার্গ বলেন, আমরা যা করছি তা রাশিয়ার প্রতি জবাব দিতেই করছি। সীমান্তে আরও সামরিক উপস্থিতি, সৈন্যদের আরও মহড়া, আকাশপথে আরও সামরিক তৎপরতার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে বিপদ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেরি বলেন, ন্যাটোর প্রতিটি সদস্যেরই জোটের সীমান্ত রক্ষায় সহায়তা করা প্রয়োজন। প্রত্যেক মিত্রেরই অন্যের মতো পরিশ্রম করা উচিত বলে তিনি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমরা একুশ শতকে সস্তায় নিরাপত্তা পেতে পারি না। ন্যাটো বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনীয় সরকারকে সমর্থন করেছে। রাশিয়া প্রথমে মার্চ মাসে ক্রিমিয়া নিজ ভূখ-ভুক্ত করে ইউক্রেনের জাতিগত রুশ অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলের কোন কোন অংশে হস্তক্ষেপ করে ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব উস্কে দিয়েছে। মঙ্গলবার ন্যাটোর এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পূর্ব ইউক্রেনের স্থিতিশীলতা অব্যাহত ও পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি। বিবৃতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ট্যাঙ্ক, বিমানবিধ্বংসী কামান ও ভারি অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার দায়ে মস্কোকে অভিযুক্ত করা হয়। মস্কো গোলযোগের জন্য ন্যাটোকেই দায়ী করে। রুশ উপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সি মেশকভ বলেন, তারা বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল অঞ্চল উত্তর ইউরোপে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সীমাহীন সামরিক মহড়া, পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম এমন বিমান বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর কাছে সরবরাহ করা- এ বাস্তবতা খুবই নেতিবাচক। তিনি বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের সঙ্গে এক সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। ন্যাটো প্রাণঘাতী নয় এমন সহায়তা ইউক্রেনকে দিচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে হেলমেট, বর্ম, যানবাহন ও রেডিওসহ ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের সহায়তা প্রদান করেছে। ইউক্রেন সংঘর্ষে হস্তক্ষেপ করায় রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মঙ্গলবার কেরি স্বীকার করেন যে, নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দেয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তিনি ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন।
×