ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

থেমে নেই সংঘাত ॥ খাগড়াছড়িতে ত্রিমুখী পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

শান্তি চুক্তি কার্যত পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনেনি

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

শান্তি চুক্তি কার্যত পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনেনি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন হলেও কার্যত পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি, থেমে নেই সংঘাত। ফলে পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো কখন শান্তি ফিরে পাবে সে প্রতীক্ষায় দিন গুনছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বান্দরবানে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠন। পার্বত্য শান্তিচুক্তিকে কালো চুক্তি দাবি করে মানববন্ধন করেছে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও বাঙালী ছাত্র পরিষদ বান্দরবান জেলা শাখা। খাগড়াছড়িতে ত্রিমুখী পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর মাধ্যমে চুক্তির ১৭তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে। সরকারীভাবেও পালন করা হয়েছে বর্ষপূর্তির আনন্দ উৎসব। চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে জেএসএসের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশী বাধায় হাতাহাতি ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। অপরদিকে চুক্তি বাতিলের দাবিতে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ শহরের বিক্ষোভ মিছিল করে। রাঙামাটির ১০ উপজেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। আগামী ১ মে থেকে সন্তু লারমার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয় এ সব অনুষ্ঠানে। এদিকে বরিশালে আনন্দ র‌্যালি ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার শান্তিচুক্তির ১৭ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। মঙ্গলবার সকালে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন করে। এ সময় বাঙালী ছাত্র পরিষদ ও নাগরিক পরিষদের নেতা কামরান ফারুক, আতিকুর রহমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা অনতিবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাতিলের দাবি জানান। বাঙালী সংগঠনগুলো শহরের বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন করে। অন্যদিকে স্থানীয় পুরাতন রাজার মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমাবেশ করে পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নের দাবি জানান। বাঙালী সংগঠনের কর্মসূচী ও জেএসএস সমাবেশকে ঘিরে জেলায় নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির বান্দরবান জেলা আহ্বায়ক ছোটন কান্তি তংচঙ্গা বলেন, সরকার জেএসএসের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তা মৃতপত্রে পরিণত হয়েছে। বান্দরবানের জেএসএস নেতা জলি মং মার্মা বলেন, সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি নিয়ে গড়িমসি করছে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এটা বিপজ্জনক। খাগড়াছড়িতে পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচী ॥ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে পার্বত্য জেলা পরিষদ নানা কর্মসূচী মধ্য দিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি পালন করে। সকাল ১০টায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালিটি উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। র‌্যালিটি চেঙ্গী স্কয়ার, শাপলা চত্বর হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে এসে আলোচনা সভার মধ্যে শেষ হয়। র‌্যালিতে হাজার হাজার পাহাড়ী বাঙালী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন, জেলা আওয়ামী লীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। পার্বত্য জেলা পরিষদ চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। অপরদিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। দুপুরে লারমা স্কয়ার হতে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে জিয়া স্কয়ারের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বাস, মাইক্রোসহ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। পরে এক সমাবেশে জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি ও সাবেক গেরিলা নেতা সুধাসিন্ধু খীসা অস্তিত্বের স্বার্থেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। তিনি আদর্শগত বা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। অপরদিকে পার্বত্য চুক্তি বাতিল দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ। রাঙামাটিতে নানা কর্মসূচী ॥ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১ মে থেকে সন্তু লারমা ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে চুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। জেলার ১০ উপজেলায় বর্ণাঢ্যভাবে বর্ষপূর্তি পালন করা হয়। বরিশালে আনন্দ র‌্যালি ॥ ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির অঙ্গীকার, সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক’ সেøাগান সামনে রেখে মঙ্গলবার নগরীতে আনন্দ র‌্যালিসহ নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৭ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের করা হয়। সমাবেশ শেষে ফেস্টুন উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়। অপরদিকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির প্রণেতা আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নিজ নির্বাচনী এলাকা গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে চুক্তির ১৭তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে।
×