ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছিটমহলের নাগরিক বিনিময় কেন্দ্রে নাম লেখাতে কেউ আসেনি

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

ছিটমহলের নাগরিক বিনিময় কেন্দ্রে নাম লেখাতে কেউ আসেনি

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২ ডিসেম্বর ॥ এবার ছিটমহল ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর ভাষায় বাংলাদেশ হতে অবৈধ অভিবাসীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও ভারতের জনগণের সুরক্ষায় ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় চুক্তি করা হচ্ছে। পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও বাংলাদেশে সফরে আসছেন। ছিটমহলগুলোতে দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য । ছিটমহলগুলোতে খোলা হয়েছে নাগরিক বিনিময় রেজিস্ট্রার কেন্দ্র। সেখানে ছিটমহলের অধিবাসীরা কেউ বা কোন পরিবার ছিটমহল বিনিময় হলে মূল ভূখণ্ডে ফিরে যেতে চাইলে রেজিস্ট্রারি খাতায় নাম লেখাতে হবে। এখনও পর্যন্ত কেউই মূল ভূখ-ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। ছিটমহলের অধিবাসীরা নিজ ছিটমহলে বসবাস করে যে দেশের ভেতরে ছিটমহলটি সেই দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে ছিটমহলে বসবাসকারী ভূমিহীন কয়েকটি পরিবার সরকারের কাছে তার পরিবারগুলোকে পুর্নাবাসন ও ঘরবাড়ি নির্মাণে সহায়তা চেয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, ভারতে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে ২৪ নবেম্বর। দুই দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলগুলোতে কোন দেশের সরকারের কোন নাগরিক সেবামূলক কর্মকা- পৌঁছেনি। ছিটমহলগুলোর জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সুষ্ঠু সমাধানের দিকে এগিয়ে চলেছে। রাজনীতি, ধর্মনীতি, সমাজনীতি সবকিছু মানুষের কল্যাণে হয়। ছিটমহলের মানুষগুলোর কল্যাণে এবারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একযোগে কাজ করছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অসম রাজ্যে জনতার উদ্দেশে ছিটমহল বিনিময় ও স্থল সীমান্ত চুক্তির সুফল সর্ম্পকে অবহিত করেন। এদিকে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিট ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিটি ছিটমহলের ভেতরে তথ্যকেন্দ্র খুলেছে। ছিটমহল গুলোর কোন নাগরিক ও কোন পরিবার ভারত অথবা বাংলাদেশর মূল ভূখ-ের ভেতরে থাকা ছিটমহলগুলো হতে নাগরিকত্ব নিয়ে ছিটমহলগুলোতে না থেকে ভারত ও বাংলাদেশের স্ব স্ব দেশের মূল ভূখ-ে যেতে পারবে বলে জানান। ছিটমহলের নাগরিকরা যদি মূল ভূখ-ে যেতে চায় তাহলে তাদের ছিটমহলের তথ্যকেন্ত্র ও রেজিস্ট্রার কেন্দ্রে এসে নাম লেখাতে বলা হচ্ছে। এই কেন্দ্র খোলার দুইদিন অতিবাহিত হলেও কোন ছিটমহলবাসী ছিটমহল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায়নি। ছিটমহলের অধিবাসীরা ছিটমহলে অবস্থান করে যে দেশের অভ্যন্তরে ছিটমহলটি সেই দেশের নাগরিকত্ব নিতে চায়। তবে ভূমিহীন পরিবারগুলো সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে। সরকারের সহায়তা পেলে তারা ছিটমহল ছেড়ে সরকার যেখানে পুনর্বাসন করবে সেখানেই যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে দুই-একটি বাদে সকল ছিটমহল ভৌগোলিক অবস্থানে দুই দেশের উত্তরাঞ্চলে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ খুবই সহজ-সরল, ধৈর্যশীল, আত্মীয়পরায়ণ, আনন্দপ্রিয় । এই সুখ্যাতি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের রয়েছে। কিভাবে এই ছিটমহলের জন্ম হয়েছে ছিটমহলবাসী তা জানে না। শুধু জানে তারা ছিটমহলের বাসিন্দা। তাদের কোন পরিচয় নেই। তাদের পরিচয় তারা ছিটমহলের নাগরিক। ’৪৭ সালে ভারতবর্ষের সচেতন মানুষের দেশপ্রেম ও পরাধীনতার সংগ্রামে বিজয় হয়। যার কারণে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কূটবুদ্ধির ব্রিটিশরাই ভারতবর্ষে দ্বন্দ্ব ও ধর্মীয় সংঘাত জিয়ে রাখতে এই ছিটমহলগুলোর সমাধান না করে জিয়ে রেখেছিল। ’৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দুইটি পৃথক ধর্মীয় অনুভূতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র জন্ম নেয়। একটি পাকিস্তান, অন্যটি ভারত বা ইন্ডিয়া। পাকিস্তান মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র ও ইন্ডিয়া হিন্দু অধ্যুষিত রাষ্ট্র। ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে ১১১টি ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশের ভেতরে । ৫১টি বাংলাদেশের ছিটমহল ভারতের ভেতরে। লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। ১৭ হাজার ১৫৮ একর জায়গা নিয়ে এসব ছিটমহল। বর্তমানে এসব ছিটমহলে ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন মানুষের বসবাস রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের ভূখ-ের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। এই ছিটমহলগুলোর সবকয়টি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিচার জেলার মধ্যে পড়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানে ছিটমহলগুলোর আয়তন ৭ হাজার ১১০ একর জায়গাজুড়ে। এই ছিটমহলগুলোতে বসবাস করছে ১৪ হাজার ২১৫ জন মানুষ। আন্তর্জাতিক ভূমি আইনের বেড়াজালে আটকে গিয়ে ৬৭ বছর ধরে দুই দেশের ভেতরে থাকা ছিটমহলগুলোর মানুষ মানবেতন জীবনযাপন করছে।
×