ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষী দিলীপ দাশের জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সিরাজ মাস্টার কুপিয়ে আমার খালাত ভাইকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সিরাজ মাস্টার কুপিয়ে আমার খালাত ভাইকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের কসাই সিরাজ মাস্টারসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে জবানবন্দী প্রদান করেছেন প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী দিলীপ দাশ। তিনি জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামি সিরাজ মাস্টার কুপিয়ে আমার খালাতো ভাই গোবিন্দ দাশকে হত্যা করে এবং শৈলেন দাশ গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়া রাজাকার বাহিনী ওইদিন গ্রামের ৬০ জনকে হত্যা করে । সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে সংক্ষিপ্ত জেরা করেন। পরবর্তী জেরার জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে ৯ ডিসেম্বর। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ ও ২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের কসাই সিরাজসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে জবানবন্দী প্রদান করেছেন প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী দিলীপ দাশ। এর আগে তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সূচনা বক্তব্য শেষে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেছেন। সাক্ষীর পরবর্তী জেরার জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষী দিলীপ দাশ জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম দিলীপ দাশ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম রনজিৎপুর, থানা ও জেলা- বাগেরহাট। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ২৩ বছর। আমাদের গ্রামটি বাগেরহাট শহর হতে আনুমানিক ১৬/১৮ কিলোমিটার দূরে এবং গ্রামের অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। এ সময় আমরা রাজাকার হিসাবে রজব আলী ফকির, আসামি সিরাজুল হক মাস্টার, ইছহাক, আকিজ উদ্দিনসহ অনেক রাজাকারের নাম শুনতে পাই। আমরা এদের চিনতাম। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, আমরা লোক মুখে শুনতে পাই ১৩মে ১৯৭১ সালে ওই রাজাকার বাহিনী আমাদের গ্রাম আক্রমণ করবে। ওই দিন সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আমাদের গ্রামের পূর্ব দিকে যৌখালী নদীর অপর পাড়ে খানপুর গ্রামে রাজাকার বাহিনীর লোকজন সমবেত হয়। তখন আমরা আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। আমাদের প্রস্তুতি দেখে রাজাকার বাহিনী পিছু হটে যায়। কিন্তু ওই দিনেই দুপুর ২টার দিকে রাজাকার বাহিনী এসে আমাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে। তখন আমরা ছুটাছুটি করতে থাকি। গ্রামের অধিকাংশ লোকজন আত্মরক্ষার জন্য রনজিৎপুর হাইস্কুলে ও পিছনে বড় বাগানের ভেতর অবস্থিত আমার খালাতো ভাই গোবিন্দ দাস এবং শৈলেন দাসের বাড়িত আশ্রয় গ্রহণ করি। রাজাকার বাহিনীর লোকজন গোবিন্দ দাসের বাড়িতেও আক্রমণ করে। আসামি সিরাজ মাস্টার গোবিন্দ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং শৈলেন দাসকে কুপিয়ে জখম করে। ওইদিন ওই ঘটনায় আমাদের গ্রামের কনেক দাস, কানাই লাল দাস, পরিতোষ চক্রবর্তী, নিশিকান্ত চক্রবর্তী, বিনোদ চক্রবর্তী, সতীশ দাস, সনাতন দাস, রাধাকান্ত দাস, নির্মল দাস, নকুল দাস, শ্রীবাস দাস, চিত্ত রঞ্জন দাস, গণেশ দাস, বাবুল দেবনাথ, বিজয় দাস, কালীপদ দাশসহ ৬০ জনকে হত্যা করে। এদের মধ্যে আমাদের গ্রামের ২৪ জন এবং বাকিরা আমাদের গ্রামে আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন গ্রামের লোকজন ছিল। রাজাকার বাহিনীর লোকজন হত্যাকা- সংঘটিত করার পর আমাদের গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ঘরে লুটপাট চালায়। অগ্নিসংযোগ করে মেয়েদের উলঙ্গ করে তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। ফোরকান মল্লিক ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চার্জ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে ৯ ডিসেম্বর। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুস সালাম খান ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের ৮টি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।
×