ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুব রেজা

‘আমার আর একটি কথা আছে’

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

‘আমার আর একটি কথা আছে’

কাইয়ুম চৌধুরীÑ বর্তমান বাংলাদেশের শিল্পকলার অন্যতম প্রধান প্রাণপুরুষ। চিত্রকলাকে দেশের গ-ি থেকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শিল্প সমালোচকদের কাছে তিনি ‘রঙের রাজা’। রং নিয়ে তিনি দীর্ঘকাল তাঁর স্বপ্নকে রাঙিয়েছেন। আমাদের সংবাদপত্র ও প্রকাশনা শিল্পকেও তিনি সমানভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। অধ্যাপনা, ছবি আঁকা, প্রচ্ছদ তৈরি করা, পেশাগত কাজ সব কিছু মিলিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়ই প্রচ- ব্যস্ততায় কাটে তাঁর। তাঁর পেছনে মাস ছয়েক ঘোরাঘুরি। তারপর সময় বের করে তিনি সময় দিলেন সাক্ষাতকারের। সাক্ষাতকার শুরু করার আগে তিনি পরিষ্কার করে কয়েকটি কথা বললেন যার সরল তরজমা করলে মানে দাঁড়ায় এরকমÑ আমি সাধারণত বেশি কথা বলি না। যতক্ষণ কথা বলব ততটুকু সময়ে একটা নতুন কাজ, একটা নতুন চিন্তা করাকে আমি আমার আরাধ্য বলে মনে করি। দীর্ঘ দু’ঘণ্টা সাক্ষাতকার দেয়ার পর তিনি এ-ও স্মরণ করিয়ে দিতে ভুললেন না যে, গত ১৫-২০ বছরে তিনি নিজের সম্পর্কে এত কথা কারও সঙ্গে কখনও বলেননি। এমনিতে কম কথা বলার মানুষ কাইয়ুম চৌধুরীÑ জানিয়েছেন তাঁর বন্ধু প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। ৩০ নবেম্বর বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের চতুর্থ দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ছিলেন বিশেষ অতিথি। কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর নির্ধারিত বক্তব্যের পর প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর বক্তব্য দেয়ার জন্য মঞ্চে উঠে এলেন। তিনি কথা বলার জন্য মাইকের কাছাকাছি যাবেন অমন সময় কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর আসন ছেড়ে মঞ্চে উঠে গিয়ে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমার আর একটি কথা আছে’Ñ কথাটি তিনি শেষও করতে পারলেন না। ঢলে পড়লেন মঞ্চে। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৮টা ৪০ মিনিট। মঞ্চে ঢলে পড়ার সময় তিনি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি চলে যান সব কিছুর উর্ধে। রঙের দুনিয়া ছেড়ে কাইয়ুম চৌধুরী পাড়ি জমালেন আরেক রঙের দেশে। মাত্র ৮২ বছরের জীবনে কাইয়ুম চৌধুরী ৫২ থেকে শুরু করে আজ অবধি দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করেছেন। রঙে, রেখায়, লেখায় তিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদের অগ্রবর্তিত সৈনিক ছিলেন। ‘আমার আর একটি কথা আছে’Ñ কি কথা ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর মনে? তিনি তাঁর শেষ সাক্ষাতকারে (শিল্প ও শিল্পী, তৃতীয় বর্ষ, জুলাই-২০১৪) তিনি অনেক কথা বলেছেন। জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলোÑ প্রশ্ন : আপনি এত পেশা থাকতে চিত্রশিল্পী হয়ে উঠলেন কিভাবে? এটা কি শৈশব থেকেই আপনার মধ্যে কাজ করেছিল নাকি শৈশবের কোন রঙিন স্মৃতির সঙ্গে জড়িত? কাইয়ুম চৌধুরী : শৈশবে সবাই কাগজ-পেন্সিল নিয়ে আঁকাআঁকি করে। আমিও সেরকম আঁকতে চেষ্টা করতাম। তবে বুক ইলাস্ট্রেশন আমাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করত। বিশেষ করে প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। দেব সাহিত্যকুটির থেকে প্রকাশিত বই আমাদের ঘরে প্রায়ই আসত। প্রতুলের কাজ দেখে সত্যি সত্যি আমার খুব ভাল লাগত। সেই ছবি দেখতাম আর মনে মনে ভাবতাম আমিও একদিন এই রকম ছবি আঁকব। দেব সাহিত্য ছাড়াও ‘সন্দেশ’ আসত বাড়িতে। সন্দেশে সমর দে, পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তীসহ অনেকের কাজ দেখতাম। কী ভীষণ সুন্দর কাজ। এছাড়া উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন অনন্যÑ তিনি কিন্তু পেশাদার শিল্পী ছিলেন না। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য, বাচ্চাদের ভালবেসে এত চমৎকার ছবি সন্দেশে আঁকতেন যা দেখলে মন ভরে যেত। শৈশবের নানা স্মৃতি, নানা ঘটনাও আমাকে ছবি আঁকার ক্ষেত্রে বেশ সহযোগিতা করেছে। আমি আজকে যে প্রফেশনে আছি সেখানে যদি আনন্দ না থাকে তবে তো আমি সেই প্রফেশনে দাস হয়ে গেলাম। আমি কখনই দাস হতে চাইনি। এখনও আমি পৃথিবীর নানা দেশের বিখ্যাত বিখ্যাত সব শিল্পীর কাজ দেখি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এসব কাজ দেখার সময় আমি কোন থিওরি (ঞযবড়ৎু) খুঁজতে যাই না। ব্যাখ্যা খুঁজতে যাই না। শিল্পীদের কাজ দেখি আর সেই কাজের মধ্য থেকে রঙের আনন্দ নেয়ার চেষ্টা করি, তুলি আর ব্রাশের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্পী যে আনন্দ ভোগ করেছেন আমিও তার ভাগ নেয়ার চেষ্টা করি। প্রশ্ন : রং আর ক্যানভাসকে আপনি অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছেন যে কারণে শিল্প সমালোচকরা আপনাকে ‘রঙের রাজা’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। আপনি কি নিজেকে সত্যি সত্যি ‘রঙের রাজা’ ভাবেন? কাইয়ুম চৌধুরী : আমি কখন থেকে রং আর ক্যানভাসকে ভালবাসতে শুরু করলাম তা হিসাব করে বলাটা খুব কঠিন। তবে আমি খুব সচেতনভাবে রং, ক্যানভাসকে নিজের মতো আপন করে নিয়েছি এটা বলতে পারি। রং আর ক্যানভাসের মধ্য দিয়ে শিল্পী যে কত রকম এ্যাফেক্ট আনতে পারেন তা বিস্ময়কর। আমি রং আর ক্যানভাসকে অন্যরকম মাত্রায় নিয়ে গিয়েছি এই কথাটা বোধ হয় ঠিক নয়। রবীন্দ্রনাথের একটা কথা আছে, জীবনে যত আনন্দ তা এই সৃষ্টির মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে। আমিও অন্যদের মতো সৃষ্টির মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করি। আমি ‘রঙের রাজা’? (কথাটা বলে তিনি শব্দ করে হাসতে লাগলেন আর মাথা দোলাতে থাকলেন যার অর্থ দাঁড়ায় মোটেও না) শিল্প সমালোচকরা আমার সম্পর্কে নিঃসন্দেহে ভুল বলেছেন। আমি একজন নগণ্য আঁকিয়ে মাত্র। ‘রঙের রাজা’ হওয়া বিশাল ব্যাপার। তবে রং আমি খুব পছন্দ করি। মানুষের জীবনের অন্য আরেক নাম রং। রং ছাড়া কী কোন কিছু হয়? মোটেই না। এখন যখন শুনি কারও সংগ্রহে আমার ছবি আছে তখন খুব ভাল লাগে। মনে আনন্দ লাগেÑ এই আনন্দটাও কিন্তু রং। আনন্দকে আমি রং বলে মান্য করি। আমাদের লোকশিল্প কিন্তু রঙের আঁধার। পৃথিবীতে যত রং আছে আমি মনে করি তার চেয়েও বেশি রং আমাদের লোকশিল্পে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আমাদের লোকশিল্প পৃথিবীর যে কোন লোকশিল্পের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। বাংলার লোকশিল্প আমাকে শিল্পী করেছে। আমি অবাক হই গ্রামীণ শিল্পীদের কথা ভেবে যাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই অথচ কী নিপুণ তাদের কাজ, কী নিপুণ তাদের রং নির্বাচন। গ্রামীণ শিল্পীরা তাঁদের ব্যবহার্য (ঈৎধভঃ) জিনিস দিয়ে নিছক আনন্দের জন্য শিল্প রচনা করেন। আমি আমার কাজের মধ্যে গ্রামীণ শিল্পীদের সেই ভাবধারা তুলে ধরবার চেষ্টা করি। আমি তাঁদের কাজের ঘরানা ফলো করারও চেষ্টা করি। সবচেয়ে বড় কথা গ্রামীণ শিল্পীদের ফর্মটাকে (ঋড়ৎস) অনুধাবন করি। ওদের রঙের ব্যবহারের দিকটি আমাকে মারাত্মকভাবে আকৃষ্ট করে। ওদের কাজের মধ্যে আমরা সিমপ্লি­ফিকেশন (ঝরসঢ়ষরভরপধঃরড়হ)-এর বহুমাত্রিক ব্যবহারও দেখতে পাই। শখের হাঁড়ির উদাহরণ দেই। জয়নুল আবেদিন স্যার সবসময় আমাদের বলতেন গ্রামীণ শিল্পীদের পরিমিতিবোধ, সেন্স অব প্রোপোরশন অনেক বেশি। তিনি বলতেন, দেখ ওরা যে মাটির হাঁড়ি বানায় তা কত রকম। হাঁড়ির এই রকমভেদ কিন্তু প্রয়োজনীয়তা থেকে এসেছে। ভাত রান্নার জন্য একরকম হাঁড়ি, মাছ রান্না করার জন্য আরেক রকম হাঁড়ি আবার দেখা যাচ্ছে মুড়ি ভাজার জন্যও অন্য আরেক ডিজাইন। জয়নুল আবেদিন স্যার বলতেন ডিসটোরশন (উরংঃড়ৎঃরড়হ) অনুযায়ী, প্রয়োজনের তাগিদে ওরা মনোহারী হাঁড়ি তৈরি করে নিজেদের শিল্পীসত্তাকে ফুটিয়ে তোলে। এখানে পিকাসোর কথা এসে যাচ্ছে। আফ্রিকাকে সবসময়ই বলা হতো ডার্ক কন্টিনেন্ট। পিকাসো আফ্রিকার রং-বেরঙের মুখোশ (গঁংশ) দেখে ভারি অবাক হলেন। পিকাসো দেখলেন আফ্রিকার মুখোশের মধ্যে চমৎকারভাবে নানা উপকরণ উঠে এসেছে। মাছ, হরিণ, পাখি, কুমির, বাঘসহ কত রকম নকশা যে মুখোশের মধ্যে উঠে এসেছে! পিকাসো আফ্রিকার সেই মুখোশ দেখে নতুন করে শিল্প তৈরি করলেন। তাহলে কী দাঁড়াল? আফ্রিকা নট অনলি ডার্ক কন্টিনেন্ট আফ্রিকা অলসো মোস্ট মডার্ন কন্টিনেন্ট। পিকাসো তাঁর অবজার্ভেশন (ঙনংবৎাধঃরড়হ) দিয়ে দেখলেন এবং শিল্প তৈরি করলেন। একজন শিল্পীকে মনের আনন্দে কাজ করার পাশাপাশি মনের আনন্দে তাঁকে পর্যবেক্ষণও করে যেতে হবে। পর্যবেক্ষণও একজন শিল্পীকে অনেক কিছু দেয়। প্রশ্ন : আপনি তো জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলামদের মতো নামকরা শিল্পীদের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন এবং সেই সূত্রে তাঁদের খুব কাছে থেকে দেখারও সৌভাগ্য হয়েছিল আপনার। শিক্ষক এবং শিল্পী হিসেবে তাঁদের কেমন করে দেখেছেন। কাইয়ুম চৌধুরী : তখনকার দিনে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। স্যারদের মনে হতো না যে, তাঁরা আমাদের স্যার। পড়াশোনার ব্যাপারে তাঁরা আমাদের একরকম ছেড়েই দিতেন। তাঁরা আমাদের কোন ঘেরাটোপের মধ্যে রাখতেন না। আমাদের মধ্যে অনেকেই তখন স্যারদের ভাই বলে ডাকতাম। শিক্ষক হিসেবে তাঁদের পেয়ে আমাদের জীবন ধন্য হয়েছেÑ একথা বলাই যায়। তবে জয়নুল আবেদিনের কথা না বললেই নয়। আমি যদি জয়নুল আবেদিনের সংস্পর্শে না আসতাম তাহলে এই দেশটাকে কখনই চেনা হতো না আমার। দেশ চেনানোর ক্ষেত্রে জয়নুল আবেদিন স্যার আমাকে, আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় দুঃখ আমরা দেশের মর্মটা বুঝি না। প্রশাসনের অনেকের মধ্যে এই জিনিসটা বেশি রকম মাত্রায় দেখা যায়। চোখের সামনে নদী, খাল-বিল, হাওর, মাঠ, জলাশয়, সরকারী জমিÑ সব দখল হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই ভাবছে দেশটা বুঝি একটা ভূখণ্ড, কিন্তু এটা তো ভুল ধারণা। জয়নুল আবেদিন স্যার আমার মধ্যে গ্রামীণ লোকশিল্পের ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি নিজেও কম বিস্মিত হইনি গ্রামীণ শিল্পীদের কাজ দেখে, তাঁদের রঙের ব্যবহার দেখে। আমার ছবির বিষয়ে ঘুরেফিরে তাই বার বার গ্রামীণ বিষয়-আশয় ফুটে উঠেছে। গ্রামীণ নকশাকে আমি বিভিন্নভাবে আমার কাজে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। গ্রামবাংলার নাম না জানা অসংখ্য শিল্পীর কাছে আমি ঋণী। প্রশ্ন : আপনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। ছাত্রদের কাছেও আপনি অসম্ভব জনপ্রিয়Ñ এই জনপ্রিয়তার কারণ কী? কাইয়ুম চৌধুরী : আসলেই শিক্ষকতার সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে আছি। আমার শিক্ষকতার পেশায় আসার পেছনেও কিন্তু জয়নুল আবেদিনের সরাসরি হাত ছিল। আমি ছাত্রদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় কিনা তা বলতে পারব না। তবে আমি যখন ছাত্রদের ক্লাসে ঢুকি তখন আমি ছাত্রদের নার্ভটা বোঝার চেষ্টা করি। ছাত্রদের কাছে আমি কখনও বড় বড় তত্ত্ব কথা ঝাড়ি না, সোজা ভাষায় ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করি। ছাত্রদের ভাল কিছু শেখানোর চেষ্টা করেছি। আর ছাত্রদের সবসময়ই আমি বলি, তোমরা ছবি আঁকাটা ভালো করে শেখো। পাশাপাশি সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক, সিনেমাসহ সংস্কৃতির নানা অঙ্গনের বিষয়ও বোঝার চেষ্টা করবে। জয়নুল আবেদিন স্যার আমাদের সবসময়ই একটা কথা বলতেন, ভাল ছবি আঁকতে পারলেই কিন্তু ভাল শিল্পী হওয়া যায় না। প্রশ্ন : ভাষা আন্দোলন আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দুটোর প্রত্যক্ষদর্শী আপনি। তখন কিভাবে আপনার দিন কেটেছে। তখন কোথায় ছিলেন আপনি? কাইয়ুম চৌধুরী : ভাষা আন্দোলনের সময় আমি আর্ট কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আমরা সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও আমাদের বন্ধু মুর্তজা বশীর, ইমদাদ হোসেন প্রমুখ প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। তবে যেদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলি হলো সেদিন নিমতলী জাদুঘরে আমাদের একটা চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। উদ্বোধন করার কথা ছিল তৎকালীন গবর্নর ফিরোজ খান নূনের স্ত্রী মিসেস নূনের। পরে আর সেটা হয়নিÑ ভ-ুল হয়ে গিয়েছিল। আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। আজিমপুরের শেখ সাহেব বাজার রোডে। আমার বড় শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আমাদের আজিমপুরের বাসায় মুক্তিযোদ্ধারা থাকত। মুক্তিযুদ্ধের সময় বড় বোনের সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতেও ছিলাম বেশ কিছুদিন। এখনও মনে হয় একাত্তরটা চোখের সামনে দিয়ে বুঝি চলে গেল।
×