ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন কাইয়ুম চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

চলে গেলেন কাইয়ুম চৌধুরী

চলে গেলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। রবিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা শেষে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে আসেন। এরপর কিছু বলার জন্য তিনি আবার মঞ্চে ফিরে আসেন। এ সময় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আমার একটি কথা বলার আছে।’ কিন্তু সেই কথাটি আর তাঁর বলা হয়নি। এরপর তিনি অচেতন হয়ে মঞ্চে ঢলে পড়েন। অচেতন কাইয়ুম চৌধুরীকে দ্রুত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি চিরতরে চলে যান না ফেরার দেশে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মারাত্মক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে রাত ৯টায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু সংবাদ টেলিভিশন ও অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীসহ সারাদেশে শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী শেষ মুহূর্তে তাঁর বক্তৃতায় কী কথা বলতে চেয়েছিলেন, এ নিয়েই সবার মধ্যে কৌতূহল থেকে যাবে দীর্ঘকাল। একজন শিল্পী, সাহিত্যিক, সমাজসেবক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গত ষাট বছরেরও বেশি সময় এই দেশে তিনি এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর এ অবদান কোনদিনই ম্লান হবে না। একজন সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি দেশে বিদেশে সর্বত্র। তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর ছিলেন প্রথমদিককার একজন ছাত্র। পরে দীর্ঘকাল সেখানে শিক্ষকতাও করেন। দেশের প্রকাশনা জগতে প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে তাঁর ছিল অতুলনীয় খ্যাতি। তাঁর আঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ ছিল কবি-সাহিত্যিকদের কাছে কাক্সিক্ষত বস্তু। ছবি আঁকার সময় এ দেশের মানুষ ও প্রকৃতির কথা ভাবতেন বেশি। তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি আঁকা। তিনি কয়েকটি পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পত্রিকার অঙ্গসজ্জাতেও তিনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষ। কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। সেই থেকে শামসুর রাহমানের ৬০টি কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশের প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিনি। কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন শিল্পী, সাহিত্যিক এবং দলমত নির্বিশেষে রাজনীতিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী মহল। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও অনেকে। কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের সুখ-দুঃখ ও জীবনাচরণ তুলে ধরেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের চিত্রকলা ও সংস্কৃতি জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হবে না। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।
×