ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় তিন রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকায় তিন রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল এনআইএর দেয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে রোহিঙ্গা জঙ্গী দল রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) ৩ জঙ্গী সদস্যকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগ রবিবার রাতে গ্রেফতার করেছে। ২ অক্টোবর বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হায়দ্রাবাদে খালিদ ওরফে খালিদ মোহাম্মদ নামে মিয়ানমারের এক নাগরিককে অক্টোবর মাসে আটক করে এনআইএ। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ জানিয়েছে, খালিদ মিয়ানমারের উগ্রপন্থী সংগঠন তেহরিক-ই-আজাদি আরাকানের হয়ে পাকিস্তানের তেহরিক-ই তালিবানের কাছ থেকে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়েছে খালিদ। খালিদ ওরফে আব্দুর নূরই ঢাকায় গ্রেফতারকৃত এই তিন রোহিঙ্গা জঙ্গীর ‘আদর্শিক গুরু’ বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ মিয়ানমার তিনদেশীয় জঙ্গী নেটওয়ার্কের সূত্র নিশ্চিত হয়েছেন ভারত-বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন জামা’আতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) যোগাযোগ রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লালবাগ এতিমখানা মোড় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘এরা রোহিঙ্গা জঙ্গী। মিয়ানমারের জঙ্গী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টারের (জিআরসি) সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।’ রাজধানীর লালবাগ থানার এতিমখানা মোড় এলাকা থেকে এই তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মোঃ নূর হোসেন প্রকাশ রফিকুল ইসলাম (২৬), ইয়াসির আরাফাত (২২) ও ওমর করিম (২৫) আরএসও, জিআরসি ও এআরইউর রোহিঙ্গা জঙ্গী সদস্য। এই জঙ্গীদের আস্তানা থেকে ৫টি ডেটোনেটর, ২টি জেল বোমা ও ১০০ গ্রাম সাদা ও কমলা রংয়ের বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ উদ্ধার করে পুলিশ। ২ অক্টোবর ভারতের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর আন্তঃদেশীয় জঙ্গী নেটওয়ার্কের খোঁজে বাংলাদেশ এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনার সময়ে এই তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয় বলে এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার জানালেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এনআইএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসে ১৭ নবেম্বর বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা এদেশের গোয়েন্দাদের জানান। এর পর এনআইএর তথ্যসূত্র ধরে বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতর করা হয়। তাদের মধ্যে শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ নারায়ণগঞ্জের মাসুম বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও নিশ্চিত হয়েছেন। কৃষ্ণপদ রায় জানান, বর্ধমানের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দারা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে দু’জনের সঙ্গে নূর হোসেন ও ইয়াসিরের মিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নূর হোসেন চার বছর, ফারুক ১২ বছর এবং আরাফাত ১ বছর ধরে বাংলাদেশে রয়েছে বলে জানান তিনি। বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় নূর হোসেন ও ইয়াসিরের যোগাযোগের যোগসূত্র পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এর আগে কলকাতায় গ্রেফতার জেএমবি জঙ্গী সাজিদের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে (২৫) গত ২২ নবেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়। পরদিন চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে এক পাকিস্তানী নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়, যারা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের ধারণা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায় যে, বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত রোহিঙ্গা নাগরিক এবং বর্ধমানের শিমুলিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা খালেদ মোহাম্মদ প্রকাশ আব্দুর নূরকে তারা তাদের আদর্শিক গুরু মনে করে। এরা প্রত্যেকে মিয়ানমারের নাগরিক। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রেবেশ করে হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী পরিচালিত, মাদ্রাসায় পড়ালেখা করত। সূত্রে প্রকাশ, এই জঙ্গীরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জঙ্গীবাদ পরিচালনা করত এই জঙ্গীরা। এদের সঙ্গে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন ইসলামিক এনজিও, এতিমখানা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়ালে জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর ছাত্র আরেক রোহিঙ্গা জঙ্গী ওমর করিম ১২ বছর অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছেন। হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র আরাফাতের ভাই তার সঙ্গেই অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসে পাসপোর্ট বানিয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায় বলে জানিয়েছে আরাফাত। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দিলপাড়া মসজিদের ইমাম ওমর করিম হাটহাজারীর মাদ্রাসায় পড়ার সময়ে জঙ্গীবাদে প্রশিক্ষণ নেয়। দলের নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুদের কোরান হাদিস শেখানোর নামে জঙ্গীবাদে দীক্ষা দেয় ওমর ফারুক। ডিবির উপপুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন পিপিএমের (বার) তত্ত্বাবধানে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ রহমত উল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
×