ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ডাবল হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুইয়ে’

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

‘ডাবল হোয়াইটওয়াশ জিম্বাবুইয়ে’

মিথুন আশরাফ ॥ ‘আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় মাঝে/আর কিছু নাহি চাই গো’-রবীন্দ্রনাথের লেখা এ লাইনগুলোই যেন সোমবার গাইতে চেয়েছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। অভিষেক ওয়ানডেতেই হ্যাটট্রিক করেছেন তাইজুল ইসলাম। বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। তাঁর ঘূর্ণির জাদুতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশও করে বাংলাদেশ। এত সুখ আর কোনদিনই মেলেনি। বছরজুড়ে হারতে থেকে শেষে এসে এত শান্তি! আর কিছুই তো চাওয়ার নেই। জিম্বাবুইয়েকে পেয়ে সবটুকুই পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ! টানা আট ম্যাচে (টেস্টে তিনটি ও ওয়ানডেতে পাঁচটি) হার! কী ধোলাই না হয়েছে জিম্বাবুইয়ে। আর যেন চিগুম্বুরা, টেইলর, মাসাকাদজারা টিকতে পারছেন না, সিরিজ শেষ হলেই বাঁচেন। সেই সিরিজ শেষও হয়ে গেছে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটাররাও যেন কাজী নজরুল ইসলামের লাইনগুলোই বলতে চেয়েছেন, ‘চলরে জলের যাত্রী এবার/মাটির বুকে চল।’ সেই মাটির বুকে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা শেষ জিম্বাবুইয়ানদের। সিরিজ শেষ। শেষটাতেও কোন অর্জনই যুক্ত করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। সব অর্জন বাংলাদেশের কাছেই যুক্ত হয়েছে। শেষ ওয়ানডে তো আরও খারাপ খেলেছে জিম্বাবুইয়ে। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজে আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় জিম্বাবুইয়ে। সেই সুযোগটি পেয়ে ভাল করবে কী, উল্টো চার ওয়ানডের চেয়েও খারাপ করেছে। ৩০ ওভারে ১২৮ রানেই গুটিয়ে গেছে। তাইজুল হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুইয়ের ইনিংস ধসে দিয়েছেন। জবাবে বাংলাদেশও খুব অনায়াসে জিততে পারেনি। তবে নিশ্চিত জয় জিম্বাবুইয়ের ইনিংস শেষ হতেই যেন হয়ে যায়। শেষে ২৪.৩ ওভারে গিয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান করে জয় পায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫১ রান করেন। জিম্বাবুইয়ের দশা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। সাবেক অধিনায়ক এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল যেমন বলেছেন, ‘কেনিয়ার দশা হতে চলেছে জিম্বাবুইয়ের।’ সত্যিই সেই পথে এগিয়ে চলেছে জিম্বাবুইয়ে। প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টেও ১৬২ রানে হেরে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়। এরপর তৃতীয় টেস্টে ১৮৬ রানে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়। প্রথমবারের মতো তিন টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয় জিম্বাবুইয়ে। টেস্টে জিম্বাবুইয়ে হোয়াইটওয়াশ হওয়াতেই জিম্বাবুইয়ের ক্রিকেটে ‘গেল গেল’ রব উঠে যায়। বাংলাদেশ সমর্থকরা ওয়ানডে নিয়েও আশাবাদী হয়ে ওঠেন। সেই আশাবাদ আবার ৫-০’র দিকেই দৃষ্টি রেখে তৈরি হয়। বাংলাদেশ সেই কাজটিই করে দেখায়। প্রথম ওয়ানডেতে ৮৭ রানের পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৮ রানে জিতে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে জিতে ওয়ানডে সিরিজও জিতে নেয়। চতুর্থ ওয়ানডেতে গিয়ে জিম্বাবুইয়ে কিছুটা চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। এরপরও জয় হয় বাংলাদেশেরই, ২১ রানে। শুরু হয়ে যায় ৫-০ হওয়ার অপেক্ষা। পঞ্চম ওয়ানডেতে গিয়ে জিম্বাবুইয়েকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ। বরাবরের মতোই অবস্থা জিম্বাবুইয়ের। শুরুটা হয় দুর্দান্ত। এরপর দম ফুরিয়ে যায়। সোমবারও ১৬ রানেই ১ উইকেটের পতনের পর মাসাকাদজা ও সিবান্দা মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ৯৫ রানে গিয়ে জিম্বাবুইয়ের ইনিংসের বারোটা বাজিয়ে দেন জুবায়ের হোসেন। মাসাকাদজাকে (৫২) আউট করে দেন। এরপর থেকে মাত্র ৩৩ রানেই বাকি ৮ উইকেটেরও পতন ঘটে যায় জিম্বাবুইয়ের। তাইজুল ইসলাম বিশ্বরেকর্ড গড়েন। অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে এখন পর্যন্ত কোন বোলারই হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। তাইজুল তা করে দেখালেন। ২৬.১ ওভারে সোলোমন মিরের উইকেটটি নেন। এরপর ওভারের শেষ বলে গিয়ে পানইয়াঙ্গারার উইকেটটিও তুলে নেন। কে জানত তখন বাংলাদেশ একটি বিশ্বরেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। যেই তাইজুল ২৯তম ওভারে বল করতে আসলেন, পরপর দুই বলে নিয়ুম্বু ও চাতারার উইকেট শিকার করে নিলেন। হ্যাটট্রিক করলেন। বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেললেন। তাইজুল তাঁর শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নেয়ার সঙ্গে নিজের আগের ওভারের শেষ বলে একটি উইকেট নেয়ায় হ্যাটট্রিকটি হয়। টানা তিন বলে তিন উইকেট নেন তাইজুল। জিম্বাবুইয়ের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটতেই বাংলাদেশ আসলে ম্যাচ জিতে যায়। বাকি থাকে শুধু কতক্ষণে জিতবে দল সেই অপেক্ষার প্রহর কাটানোর। ম্যাচটি ছিল ‘দিবা-রাত্রি’র। অথচ এক ইনিংস শেষ হওয়ার পর ৪০ মিনিট বিরতিতে না গেলে ম্যাচটি দিনেই শেষ হয়ে যেত। হলো না। বিরতিতে যেতেই হবে। বাংলাদেশও বিরতিতে গেল। তবে এর আগেই ১৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান করে বাংলাদেশ। ৫৮ রানের মধ্যেই তামিম ইকবাল (১০), এনামুল হক বিজয় (৮), সৌম্য সরকার (২০), সাকিব আল হাসান (০) আউট হয়ে যান। বিরতিতে যাওয়ার আগে মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিক উইকেটে থাকেন। জিততে তখন প্রয়োজন পড়ে ৫৬ রানের। দলীয় ৯৩ রানে গিয়ে মুশফিকও (১১) আউট হয়ে যান। এরপর আর কোন উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ। সাব্বির রহমান অপরাজিত ১৩ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। জয়ের জন্য যখন ৩ রান প্রয়োজন, এমন সময় মিরের বলে মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ৫১ রান করার সঙ্গে দলকেও জেতান। এই জয়ে জিম্বাবুইয়েও হোয়াইটওয়াশ হয়। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও হোয়াইটওয়াশ হয় জিম্বাবুইয়ে।
×