ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনজিও পর্যবেক্ষণ ও বিচারপতিদের পেনশন সুবিধা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

এনজিও পর্যবেক্ষণ ও বিচারপতিদের পেনশন সুবিধা বাড়ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কোন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কার্যক্রম পরিচালনায় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশী অনুদান খরচে নিবিড় পর্যবেক্ষণের বিধান রেখে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া অবসরে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের বিচারকদের পেনশনের ক্ষেত্রে আনুতোষিকের হার বাড়ছে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা ‘দ্য সুপ্রীমকোর্ট জাজেজ (লিভ, পেনশন এ্যান্ড প্রিভিলেজ) অধ্যাদেশের খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোন দেয়া হয়। সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে যে সকল বিদেশী কার্যাদেশ (ওয়ার্ক পারমিট) ব্যতীত চাকরি করছে তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া যে সকল বিদেশী নাগরিকের ভিসার মেয়াদ সম্পন্ন হয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে এখন বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন (এনজিও) কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ দুটি একত্র করে আইনে পরিণত করতে এ উদ্যোগ। তিনি বলেন, এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন না নিয়ে কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এ আইন পাস হলে একটি এনজিও ১০ বছরের জন্য নিবন্ধন পাবে। তবে আইন অমান্য করলে যে কোন সময় নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা যাবে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অনুমোদন ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এনজিওতে বিদেশী উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ছাড় নিতে হবে। বিদেশী অনুদান একটি তফসিলী ব্যাংকে হিসেব (মাদার এ্যাকাউন্ট) থাকতে হবে। ব্যয়ের হিসেব অডিট করার পর এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে দিতে হবে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এসব বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইন না মানলে প্রথমে সতর্ক করা হবে। নিবন্ধন বাতিল ও জরিমানার বিধানও আইনে রাখা হয়েছে। কোন এনজিও যদি ফৌজদারি অপরাধ করে- যেমন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে অর্থায়ন বা সহযোগিতা, নারী-শিশু পাচার, মাদক সংক্রান্ত অপরাধ ইত্যাদির জন্য দেশের প্রচলিত আইনে আলাদাভাবে বিচার করা হবে। ১৯৯০ সালে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত ব্যুরো ২ হাজার ৩০৩টি এনজিওর নিবন্ধন দিয়েছে, যার মধ্যে ২৩৩টি বিদেশী এনজিও রয়েছে। এনজিওগুলোর নেয়া বিদেশী অনুদানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নতুন এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের আনুতোষিকের হার বাড়ছে অবসরে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতের বিচারকদের পেনশন সুবিধার অংশ হিসেবে এককালীন অর্থের পরিমাণ বাড়াতে আইন সংশোধন করছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব উদাহরণ হিসেবে বলেন, অবসরের সময় একজন বিচারকের মাসিক মূল বেতন ৫৬ হাজার টাকা হলে পেনশন হিসেবে তিনি পান এর ৮০ শতাংশ বা ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা। এই পেনশনের ৫০ শতাংশ বা ২২ হাজার ৪০০ টাকা তাঁকে আনুতোষিক হিসেবে এককালীন (বাধ্যতামূলক সমর্পণ) দিতে হয়। বাকি টাকা তিনি পান মাসিক পেনশন হিসেবে। এককালীন অর্থের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ বাড়াতেই আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান সচিব। তিনটি স্তরে এই টাকার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ ৫৬ হাজার টাকা মূল বেতন নিয়ে ৪০-৪৫ বছর বয়সে অবসরে গেলে ওই ২২ হাজার ৪০০ টাকার ২৬০ গুণ টাকা পাবেন তিনি। অর্থাৎ তিনি মোট ৫৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা এককালীন পাবেন। বর্তমান নিয়মে এই বয়স শ্রেণীতে ২৩০ গুণ টাকা এককালীন দেয়া হয়। একইভাবে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে অবসরে গেলে আনুতোষিকের হার ২১৫ থেকে বাড়িয়ে ২৪৫ করা হচ্ছে। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই হার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৩০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসরের বয়স ৬৭ বছর।
×