ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজিমপুর কবরস্থানে দাফন

কাইয়ুম চৌধুরীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

কাইয়ুম চৌধুরীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ কি বলতে চেয়েছিলেন তিনি? যা বলার জন্য তিনি আবারও মঞ্চে উঠেছিলেন। অব্যক্ত কথা জানতে না পারার আক্ষেপ আর প্রিয়জন হারানোর তীব্র শোক নিয়ে দেশের সব দলমত, শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আকস্মিকভাবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে হৃদয়ের শেষ ভালবাসা জানাতে। সোমবার দুপুর পৌনে বারোটার দিকে শিল্পীর মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনার পর আবেগঘন ও স্তব্ধ শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘ আট দশকের চলার পথে হঠাৎ ইতি টানলেন তিনি। শেষ বিদায়ে তাই সিক্ত হলেন সর্বস্তরের মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালবাসায়। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আজিমপুরের শেখ সাহেব বাজারের বাড়িতে। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর আজিমপুর ছাপড়া মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বরেণ্য এই চিত্রশিল্পীকে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর শ্বশুরের কবরে চিরসমাহিত করা হয়। আগামী শুক্রবার তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আজিমপুর ছাপড়া মসজিদে বাদ জুমা মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য রহুল কবীর রিজভী, খায়রুল কবীর খোকন প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। এছাড়াও গণতন্ত্রী পার্টি, জাসদ, বাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় এই শিল্পীর কফিনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ছায়ানট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কণ্ঠশীলন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় ঢাকা আর্ট কলেজ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ, বাফা, ধরিত্রী বাংলাদেশ, গ্যালারি চিত্রক, নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, কালি ও কলম, শিল্প ও শিল্পী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ অসংখ্য সংগঠন শিল্পীর কফিনে শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, হাসেম খান, রফিকুন নবী, শিল্পী হামিদুজ্জামান, অধ্যাপক জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, কেরামত মওলা, ফয়েজ জহির, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষ। সবশেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, সাবেক সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুসহ অন্যান্য নেতাকর্মী শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধাঞ্জলির মাঝে কাইয়ুম চৌধুরীর প্রিয় দুটি গান ‘সম্মুখে শান্তি পারাবার ও অল্প লইয়া থাকি সুখে’ পরিবেশন করেন ছায়ানট ও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা। গান শেষে বাবা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ছেলে মাইনুল ইসলাম জাবেদ। তিনি বলেন, শিল্পী বলতে যা বোঝায় আমার বাবা তার চেয়ে অনেক বেশি বড় ছিলেন। আমার বাবা শুধু ছবিই আঁকেননি, ছবি আঁকার মধ্যে বাস করে গেছেন। দেশজ চিত্রকলায় গ্রাফিক ডিজাইনকে শূন্য থেকে শিখরে তুলেছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই গ্রাফিক ডিজাইন পূর্ণতা পেয়েছে। তিনি শুধু আমার বাবা নন, তিনি এদেশের বৃহৎ একটি সম্পদ। তাঁর আদর্শকে চর্চা করতে হবে। তবেই বাবার আত্মা শান্তি পাবে। শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতিচ্ছবি ও কথা প্রতিফলিত হতো। সেই কথা আমরা আর কোনদিনই শুনতে পারব না। কিন্তু তাঁর কর্ম, স্মৃতি এবং জীবনদর্শন আমাদের জন্য চির আদর্শ হয়ে থাকবে। তিনি শিল্পের শহীদ, শিল্পে সমাহিত এবং তাঁকে অনুসরণ করবে অমরত্ব। প্রথিতযশা শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, দেশের সৌভাগ্য যে, তাঁর মতো একজন শিল্পী এই দেশে জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁর হাত ধরে দেশের চিত্রকর্ম ও গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ বর্তমানের অবস্থায় এসেছে। তাঁর মতো গুণী ও সৃজনশীল শিল্পীর শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবার নয়। লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, তাঁর হাত ধরেই শিল্পের মাধ্যম মুক্ত হয়েছিল। বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে নতুন করে চিনতে শিখিয়েছেন তিনি। দেশের প্রকাশনা শিল্পকে অন্য একটি মাত্রায় নিয়ে গেছেন। অসাধারণভাবে কাজ করে গেছেন। এই কাজ দিয়ে তিনি সবাইকে মুগ্ধ করে দিতেন। সঙ্গীতের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, সুরের মূর্ছনার মধ্যেই তিনি চলে গেলেন। তিনি অমর। তিনি অমর হয়ে থাকবেন। এ্যামেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, তিনি ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের ছাত্র। তাঁর চিত্রকর্মই কথা বলতো। তিনি কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তা তাঁর চিত্রকর্ম দেখেই বোঝা যেত। এ দেশের শিল্পকলার মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে। সে আমার ভাল বন্ধু ছিল। বন্ধুকে হারানো ব্যক্তিগতভাবে খুবই কষ্টকর। তিনি শুধু বিশ্বমানের শিল্পীই ছিলেন না, একজন ভাল মানুষও ছিলেন। তিনি আজীবন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নতুন প্রজন্ম যাদের কাজে উজ্জীবিত হতো, অনুপ্রেরণা পেত, তিনি ছিলেন সেই দলের অগ্রভাগে। তাঁর এই শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। আমরা যদি তাঁর চেতনা ও জীবনদর্শন ধরে রাখতে পারি তাহলেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে। এর আগে সকাল সোয়া এগারোটার দিকে তাঁর মরদেহ রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রিয় শিক্ষক ও শিল্পীকে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অনুষদের বর্তমান ডিন নেসার হোসেন, কালি ও কলমের সম্পাদক আবুল হাসনাত, শিল্পী রফিকুন নবী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক সমরজিৎ রায়, অধ্যাপক ইউনুস, অনুষদের প্রাক্তন ডিন শিল্পী আবুল বারাক আলভী, নাট্যব্যক্তিত্ব তৌকির আহমেদ, বিপাশা হায়াতসহ অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। এ সময় ডিন নেসার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, চলতি ডিসেম্বরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কাইয়ুম চৌধুরীকে উৎসর্গ করা হয়েছে। তিনি এই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর আগের দিন বিকেলেও তিনি কমিটির একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত রবিবার রাতে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে হঠাৎ ঢলে পড়েন কাইয়ুম চৌধুরী। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত এই গুণী শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ফেনীতে, ১৯৩২ সালে। ক্ষয়িঞ্চু জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও পরিবারে শিক্ষা ও উদার মানসের জোরদার অবস্থান ছিল। বাবা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় কর্মকর্তা। স্কুলজীবন থেকে আঁকাআঁকির ঝোঁক দেখে কাইয়ুম চৌধুরীর বাবা ঢাকার আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তির বিষয়ে শিল্পী জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর কৃতিত্বের সঙ্গে ১৯৫৪ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। পড়ার সময়ই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার পর আর্টস ইনস্টিটিউটের নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনিও শরিক হন। ১৯৫৩ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম বার্ষিকীতে সদরঘাট থেকে বের হওয়া মিছিলে চিত্রিত ফেস্টুন নিয়ে আর্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছিলেন এবং মিছিলের পুরোভাগে রশীদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীরের সঙ্গে ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরীও। ২২ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালে ফাইন আর্টস বিভাগ থেকে পাস করার পর তিনি কোন পেশায় যোগ না দিয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থেকে বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজ করেছেন। ১৯৫৬ সালে সহশিল্পী মুর্তজা বশীর ও সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘পেইন্টার্স ইউনিট’। ঢাকা প্রেসক্লাবে আয়োজিত হয় পেইন্টার্স ইউনিটের প্রথম চিত্র প্রদর্শনী, যাতে কাইয়ুম চৌধুরী ছয়টি জলরং নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী আর্ট কলেজে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি চলছিল তাঁর ডিজাইন ও প্রচ্ছদ অঙ্কনের কাজ। ব্যবহারিক শিল্প সংক্রান্ত কাজে কাইয়ুম চৌধুরী আনন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন। বিশেষভাবে তাঁর স্ফূর্তি ছিল বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কনে এবং এই কাজে তিনি অচিরেই এক অতুলনীয় মাত্রা অর্জন করেন। ১৯৬০ সালে ফাইন আর্টস বিভাগে তাঁর সহপাঠী তাহেরা খানমের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ওই বছরই আর্ট কলেজ ছেড়ে যোগ দেন কামরুল হাসানের নেতৃত্বে নবগঠিত ডিজাইন সেন্টারে। ১৯৬১ সালে ডিজাইন সেন্টার ছেড়ে অবজারভার হাউজে চীফ আর্টিস্ট হিসেবে যোগদান করেন। ইংরেজী দৈনিক ছাড়াও সিনে-সাপ্তাহিক চিত্রালীতেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৬৫ সালের ২০ অক্টোবর তিনি আবার আর্ট কলেজের কমার্শিয়াল আর্ট বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সহকারী অধ্যাপক, ১৯৮৬ সালের ১৬ জানুয়ারি সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান কাইয়ুম চৌধুরী। পরিবর্তিত নাম চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান ১৯৯৪ সালে। তবে সর্বশেষ ২০০২ সাল পর্যন্ত সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে পাঠদান অব্যাহত রাখেন। এরপর থেকে তিনি ফ্রিল্যান্স শিল্পী ও গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে থাকেন। ১৯৬০-৬১ সালে চারুকলায় বিশেষ অবদানের জন্য কাইউম চৌধুরী জাতীয় পুরস্কার পান। ১৯৬১ সালে অল পাকিস্তান আর্ট এক্সিবিশনে প্রদর্শিত ‘বটম’ নামের একটি চিত্রের জন্য প্রথম পুরস্কার পান। চার বছর পর রয়্যাল কোর্ট ইন তেহরান বিয়েনাল পদক পান। ১৯৭৭ সালে শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে একুশে পদক, ১৯৯৪ সালে ৬ষ্ঠ বঙ্গবন্ধু পদক ও ১৯৮৩ সালে বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য লাইপসিস বুক ফেয়ার পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া ১৯৭৫ সালে ন্যাশনাল বুক সেন্টারের বইয়ের নকশার জন্য স্বর্ণপদক পান তিনি। সেরা প্রচ্ছদের জন্য ১৯৮৮, ৮২, ৮১, ৭৯, ৭৮, ৭৫, ৭০, ৬৬, ৬৪ ও ৬৩ সালে প্রথম পুরস্কার পান তিনি। ১৯৫৯ এবং ১৯৬১ সালে রেলওয়ে টাইমটেবিলের প্রচ্ছদ এঁকে সেরা পুরস্কারটি লাভ করেন কাইয়ুম চৌধুরী। এছাড়া ২০০২ সালে শেলটেক পুরস্কার ও ১৯৯৯ সালে সুলতান পদক পান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ডিজাইন এবং ম্যুরাল কমিটির সদস্য ছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী। বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েকটি টাকার নোটের ডিজাইন তাঁরই করা।
×