ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধ হোক নারী নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

বন্ধ হোক নারী নির্যাতন

অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমাজকণ্ঠ অনেক বেশি বলিষ্ঠ ও সরব। আগেও যৌতুক, এ্যাসিড নিক্ষেপ, সরাসরি শারীরিক লাঞ্ছনাÑ নানা উপায়ে নারীর ওপর সহিংসতা, আর্থিক যন্ত্রণা ও নির্যাতন চালানো হতো। এখনও সবই বহাল আছে বিপুল ও বিস্তৃতভাবে। তবে তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন ধরন, অভিনব কৌশল। প্রযুক্তিগত উন্নতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে নারী-উন্নতির প্রতিপক্ষ হিসেবে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির অপব্যবহার ঘটছে নারীর গোপনীয়তা, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যকে আঘাত করার অভিপ্রায়ে। ফটোশপে তৈরি একটি মাত্র ছবি বহু সচল নারীর জীবনকে স্থবির, স্থিরচিত্র বানিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। প্রেমিক হয়ে উঠছে প্রতারক ও প্রতিহিংসা চরিতার্থকারী। আগে এ্যাসিড ছুড়ে নারীর মুখ সৌন্দর্যকে বিকৃত করে দেয়া হতো। এখন একটি আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে তার বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে। নারীর ওপর পুরুষের এমন অপরাধের তুলনায় ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধও যেন ম্লান হয়ে পড়ছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে নতুন পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে যে দেশে ধর্ষণও বেড়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হন ৫৪৪ জন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১৫০ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৭৮ জনকে। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয় ৯৩ জনকে। অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ বছরে তিন হাজার ৯২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দেশে বহু বালিকা ও কিশোরীর শিক্ষাজীবন হয়ে গেছে শুধু বখাটে উচ্ছৃঙ্খল ‘রোমিওদের’ কারণে। ইভটিজিং বিশাল দগদগে ঘা হয়ে বিরাজ করছে সমাজে। আমরা তা যেন শুনেও শুনছি না। লজ্জার কথা, এর তেমন কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়নি। মেলেনি প্রতিকার। বার বার নানাভাবে বলা হচ্ছে পারিবারিক পর্যায়ে মেয়েদের সম্মান প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল অল্পবয়সী ছেলেটি বিপথগামী হবে না, একটি মেয়েকে অশ্লীল বাক্যবাণে জর্জরিত করবে না। এ সবই হয়ে উঠছে অরণ্যে রোদন। গত মঙ্গলবার দেশে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হলো। এ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট নারী সংগঠন মহিলা পরিষদের মতবিনিময় সভায় নানা দরকারি কথা উঠে এসেছে। বিশেষ করে গণমাধ্যমে কর্মরত নারীর ক্যারিয়ার এবং কর্মপরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়। এসবের দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই। নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মৌলবাদকে। বলা হয়েছে মৌলবাদী শক্তির হুমকির মুখে সততা, মেধা এবং একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে পেশাজীবী নারীসমাজ কাজ করে চলেছে। নারীর অগ্রযাত্রার পথে বড় বাধা হিসেবে সেকেলে ধ্যান ধারণা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকেই প্রথমে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বহু পরিবারের স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করলেই উঠে আসবে নীরব নারী পীড়নের সূক্ষ্ম উপাদান। বিশেষ করে অর্থকরী কাজের সঙ্গে যুক্ত নন এমন গৃহিণীদের ওপর বহু তথাকথিত শিক্ষিত স্বামীরা যে মনোভাব পোষণ করেন তা কোনক্রমেই স্ত্রী তথা নারীর জন্য সম্মানজনক নয় অথচ সামগ্রিক বিচারে নারীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এখন নারীর পেশা বলে আলাদাভাবে কোন পেশাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে না। প্রতিটি পেশাতেই নারী তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই যেখানে নারী সেখানে নারী নির্যাতনের মতো বর্বরতা দিয়ে সমাজ প্রগতিতে নারীর অংশগ্রহণে বাধা দেয়া হলে এ সমাজ খঞ্জ, বিকৃত ও দূষিত থেকে যাবে। তাই নারী-পুরুষ সবাইকে এককাট্টা হয়েই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারী নির্যাতনকারীদের দমন করতে হবে কঠোর হাতে, আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে।
×