ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

মুন্সীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান পল্লী বিদু্যুত সমিতি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। খোদ সমিতির লোকজনই জড়িয়ে পড়েছে মিটার, খুঁটি ও তার বাণিজ্যে। সমিতির লোকজনের যোগসাজশে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গ্রাহকসেবা। দালালদের টাকা দিয়েও বছরের পর বছর মিটার ও বিদ্যুত সংযোগ পাচ্ছে না গ্রাহকরা। গ্রাহকদের টাকা পকেটে নিয়ে দেই দিচ্ছি বলে হয়রানি করে চলেছে। পল্লী বিদ্যুতের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর জোগসাজশেই চলছে এ ওপেন বাণিজ্য। ঘুষ বাণিজ্যের কাছে গ্রাহকসেবা এখানে শূন্যে নেমে এসছে। বালুরবাজারে মোঃ দিদার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর একটি মিটার ছিল। ২০০৮ সালে তিনি দোকান বিক্রি করে মিটারটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে সারেন্ডার করেন। কিন্তু প্রায় ৬ বছর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে বকেয়া ৪২ হাজার ৫০ টাকা দাবিতে আদালতের ওয়ারেন্টে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে মিটারটির নাম বদল না করে খোকন সরকারকে ব্যবহার করতে দেয়। যোগসাজশে বকেয়া বাড়লেও লাইন কাটেনি। এমনভাবে বহু নিরীহ মানুষ জেল খাটা থেকে শুরু করে অকারণে গচ্চা দিচ্ছে। জানাজানি হলেও প্রভাবশালী চক্র তা ধামাচাপা দিচ্ছে নানা কৌশলে। পারপেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। সরজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিরাজদিখান উপজেলা পল্লী বিদ্যুত অফিসে গ্রাহক হয়রানি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সময়মতো টাকা জমা দিয়েও গ্রাহকরা বিদ্যুত সংযোগসহ মিটার পাচ্ছেন না। ২০-৩০ জনের একটি দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পল্লী বিদ্যুত অফিস। দালাল ছাড়া এখানে কোন কাজ হয় না। আবার দালালদের কাছে টাকা দিয়েও বছরের পর বছর সংযোগ পাচ্ছে না গ্রাহক। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে মিটারের মূল্য ৬ শ’ টাকা আর পল্লী বিদুতের সদস্য ফরমের মূল্য ১শ’ টাকা মোট ৭শ’ টাকা জমা দেবার বিধান থাকলেও এখানে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রায় ২ বছর পূর্বে বালুর চর ইউনিয়নের মোল্লা কান্দি গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে মোঃ সেলিম মিটারের জন্য ১২ হাজার টাকা দেয় পল্লী বিদ্যুতের দালাল হামিদুলের কাছে। কিন্তু দেই দিচ্ছি বলে ২ বছর হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত সে মিটার পায়নি। এ ব্যাপারে হামিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে পল্লী বিদ্যুতের সদস্য সেবক পরিচয় দিয়ে স্বীকার করে খুব শীঘ্রই মিটারের ব্যবস্থা করে দেবে। উপজেলা পল্লী বিদ্যুত সমিতি বোর্ড সদস্য মাহবুব মিন্টুর কাছেও টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে এরকম গ্রাহক সংখ্যাও কম নয়। কেয়াইন ইউনিয়নের ইসলামপর গ্রামের মৃত আঃ গফুর মিয়ার ছেলে বাচ্চু শেখ জানান, প্রায় ৮ মাস আগে ৪টি মিটারের জন্য মিন্টু ভাইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয় ৪৮ হাজার টাকায়। তারপর তাকে আমি ১২ হাজার টাকা দেই। অথচ আজও পর্যন্ত আমি মিটার পাইনি। এ ব্যাপারে মাহবুব মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও কাছ থেকে মিটার বাবদ টাকা পয়সা নেইনি। বালুরচর ইউনিয়নের নাসির মেম্বার নিজের ২টি মিটারসহ আরও কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেয় কিন্তু মাসের পর পর মাস গেলেও গ্রাহকরা মিটার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে নাসির মেম্বার জানান, জেলা পল্লী বিদ্যুত সমিতি বোর্ডের এক কর্মকর্তার কাছে আমি মিটারের জন্য টাকা দিয়েছি। সে আমার বন্ধু মানুষ খুব শীঘ্রই মিটারের ব্যবস্থা করবে। লতুব্দী ইউনিয়নের মাহমুদপুর মহিলা মাদ্রাসার জামাল উদ্দিনের কাছ থেকে প্রায় দু’বছর আগে বিদ্যুত সংযোগ পাইয়ে দেয়র কথা তিনি ৭৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। কিন্ত আজ পর্যন্ত তারা বিদ্যুত সংযোগ পায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, পল্লী বিদ্যুতের ওয়ারিং পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম ও কর্মচারী ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগসাজশে দালালরা নিরীহ গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। উপজেলা পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম দেব কুমার মালো জানান, আমাদের কাছে প্রায় ১১শ’ গ্রাহকের টাকা জমা পড়েছে। তার মধ্যে দেড় শ’ গ্রাহককে ইতোমধ্যে সংযোগ মিটার দেয়া হয়েছে।
×