ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চৌরাসিয়া গিরিজা দেবী আমজাদ আলী খান কৌশিকীরা মাতাবেন

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

চৌরাসিয়া গিরিজা দেবী আমজাদ আলী খান কৌশিকীরা মাতাবেন

মোরসালিন মিজান ॥ এবং অতঃপর শুরু হচ্ছে জমকালো উৎসব। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুভ সূচনা। উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পীরা গাইবেন। বাজাবেন। বিখ্যাত প-িত ওস্তাদদের অংশগ্রহণে আবারও মুখরিত হবে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। দেশের সবচেয়ে বড় বর্ণাঢ্য মঞ্চটি প্রস্তুত। রাত যত গভীর হবে, এখান থেকে ঘুম পালাবে। বিশুদ্ধ সঙ্গীতে অদ্ভুত সুন্দর জেগে উঠবে চারপাশ। বলা বাহুল্য, বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ জানেন। শুধু জানেন বলা কেন, সারা বছর প্রতীক্ষা করে থাকেন। ৫ দিনব্যাপী উৎসব সে প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবে। আয়োজক সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব বাংলাদেশ’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। প্রথম দিনের আয়োজনের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ছোট্ট এই পর্ব শেষে মূল অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের সম্মেলক বাংলা গান দিয়ে সূচনা করা হবে প্রথম দিনের অধিবেশন। এর পর একক পরিবেশনা। চলবে ভোর রাত পর্যন্ত। আয়োজক সূত্র জানায়, প্রথম দিনের মতো প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত পরিবেশিত হবে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত। কণ্ঠসঙ্গীত যন্ত্রসঙ্গীত ও ধ্রুপদী নৃত্যের পরিবেশনা নিয়ে আসবেন বিখ্যাত শিল্পীরা। আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের পরিবেশনা। আগে যাঁরা এসেছেন তাঁদের বড় অংশটি এবারও আসছেন। উৎসবে প-িত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশি যাঁরা শুনেছেন তাঁরা বার বার শুনতে চান। নতুন শ্রোতারাও মিস করতে চান না। তাঁদের জন্য সুখবরÑ প্রবীণ এ শিল্পী থাকছেন এবারও। বয়স বিবেচনায় আরও বেশি প্রবীণ বিদুষী গিরিজা দেবী। গতবারও তিনি মাতিয়ে গেছেন। মঞ্চ আলোকিত করবেন এবারও। ঢাকার শ্রোতাদের বহুকাল মুগ্ধ করে রেখেছেন ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। এবারও গাইবেন তিনি। শিব কুমার শর্মাও বিপুল জনপ্রিয় উৎসব মঞ্চে। যথারীতি আসছেন। আর অজয় চক্রবর্তী তো উৎসবের অংশ। একেবারে তরুণদের কথা বললে যাঁর নাম দৌড়ে চলে আসে তিনি কৌশিকী চক্রবর্তী। তাঁর কণ্ঠের জাদু শ্রোতাদের ভেতর বাহির এলোমেলো করে দেয়। ফলে থাকছেন তিনি। অবশ্য উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবে ছোট কোন শিল্পী নেই। নেই বললেই চলে। প্রায় সকলেই বিখ্যাত। প-িত উল্লাস কশলকার, বিদুষী মালবিকা সারুক্কাই, প-িত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদারের মতো শুদ্ধ শিল্পীরা যোগ দেবেন উৎসবে। একেবারে নতুন যোগ হচ্ছেন বিদুষী কিশোরী আমনকার। সব মিলিয়ে ৫৫ ঘণ্টার সঙ্গীতায়োজন। ভারত ও বাংলাদেশের ১৬০ জন শিল্পী এতে অংশগ্রহণ করবেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী জানান, উৎসবের প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়েছে। এখন একে সব দিক দিয়ে সফল করার জন্য রাতদিন কাজ করছে আমাদের অভিজ্ঞ টিম। গত বছর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নাজুক ছিল স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এর পরও হাজার হাজার মানুষ উৎসবে এসে সারা রাত গান শুনে কাটিয়েছেন। এবার অপেক্ষাকৃত সুন্দর একটি সময় পেয়েছি আমরা। তাই আরও বেশি আশাবাদী। আয়োজক বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, সঙ্গীতের প্রাণ শাস্ত্রীয়সঙ্গীত। এখানে প্রকৃত স্বাদটা পাওয়া যায়। এক সময় এই ধারার সঙ্গীতে আমাদের দেশ অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব সে ঐতিহ্য কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করেছে। আগামী দিনের শ্রোতা ও শিল্পী তৈরির লক্ষ্য নিয়েও কাজ করছি আমরা। সব মিলিয়ে আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে বলে মনে করেন তিনি। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসব উপভোগের জন্য কোন টিকিটের প্রয়োজন হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাঁরা বিনা খরচে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাঁরা প্রবেশ করতে পারবেন অনুষ্ঠানস্থলে। খাবার, পানীয়, যাতায়াতসহ সুবিধাদি এবারও আয়োজকরা নিশ্চিত করবেন। বর্ণাঢ্য উৎসব ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
×