ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টাইগারদের সিরিজ জয়

এবার হোয়াইটওয়াশের পালা

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

এবার হোয়াইটওয়াশের পালা

মিথুন আশরাফ ॥ সেই ১৯৮৬ সাল থেকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলা শুরু। ২৮ বছরে বাংলাদেশ দুইবার মাত্র ২৬ নবেম্বর তারিখটিতে ওয়ানডে খেলে। দুইবারই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। দুইবারই সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে হয়। একবার ২০০১ সালে, আরেকটি বুধবার। কিন্তু দুইবারের মধ্যে কী বিস্তর পার্থক্য! প্রথমবার বাংলাদেশ ম্যাচে হেরে সিরিজও হারে। আর এবার ১২৪ রানে জিতে সিরিজ জিতে নেয়। বাংলাদেশ দল যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কতটা উন্নতি করছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। এ জয় বাংলাদেশকে আবার উৎসবে মাতিয়েছে। বছরজুড়ে হারতে থাকা দলটি যে বছরের শেষে এসে সিরিজই জয় এনে দিয়েছে। বল করছেন ৪ উইকেট নেয়া আরাফাত সানি। ব্যাট করছেন কামুনগোজি। যেই ১৭৩ রানে বোল্ড হয়ে গেলেন জিম্বাবুইয়ের সর্বশেষ এ ব্যাটসম্যানটি, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব উঠল স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ যে ২৯৭ রান করে অনায়াসেই ম্যাচ জিতে সিরিজও জিতে গেছে। উৎসবে মেতে উঠলেন ক্রিকেটাররাও। তবে এ উৎসবে পরিপূর্ণতা মিলল না। হয়ত চতুর্থ ও পঞ্চম ওয়ানডেতে জিতে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলে উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। উৎসব ক্রিকেটাররা করতেই পারত। শুরুতেই টস হেরে ব্যাট করে এনামুল হক বিজয়ের ৯৫, তামিমের ৪০, সাকিবের ৪০, মুশফিক ৩৩ ও মাহমুদুল্লাহ’র অপরাজিত ৩৩ রানে ৬ উইকেটে ৫০ ওভারে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান এটি। জবাবে আরাফাতের স্পিন ভেল্কিতে ৩৯.৫ ওভারে ১৭৩ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। মাশরাফি ও রুবেল ২টি করে উইকেট নেন। এলটন চিগুম্বুরা সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৩ রান করতে সক্ষম হন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এমন জয়ের পর ক্রিকেটাররা বিশেষ কোন ভঙ্গিতে উৎসবে না মাতলেও স্টেডিয়ামে আগতরা ঠিকই আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন। উৎসবে মেতেছে পুরো বাংলাদেশও! বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। যে দলটি ওয়ানডেতে বছরে একটি জয়ও পাচ্ছিল না। দলের ওপর থেকে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন উঠেই যাচ্ছিল। সেই ফেব্রুয়ারি থেকেই হারছে তো হারছেই। সেই দলটি জিম্বাবুইয়েকে পেয়ে বছরের শেষ সময়ে এসে টানা তিনটি জয়ই তুলে নিল। প্রথম ওয়ানডেতে ৮৭, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৮ রানে জেতার পর তৃতীয় ওয়ানডে জিতে জিম্বাবুইয়েকে আবারও সিরিজে হারাল। ইস্, আর ২৪টি রান হলেই হয়ে যেত। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার আগে ৪০০০ রান করার রেকর্ডটি গড়ে ফেলতেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু হলো না। অপেক্ষায় থাকতে হলো সাকিবকে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের রানের রেকর্ড না হলেও উইকেটের দিক দিয়ে একটি রেকর্ড ঠিকই হয়েছে। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে একটি স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ ৭৬ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৭৫ উইকেট নিয়েছিলেন এর আগে আব্দুর রাজ্জাক। সাকিব এ রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিলেন। সাকিবের সঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও একটি রেকর্ড ঠিকই গড়ে ফেলেছেন। দেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি ২৩ ক্যাচ ধরেছেন ফিল্ডার মাশরাফি। শুধু কী এ রেকর্ড! মাশরাফি তো অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার সিরিজ জিতলেন। তাঁর হাত ধরেই হারের গোলকধাঁধা থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। এমনই মুক্তি মিলেছে সিরিজই নিজেদের দখলে করে নিয়েছেন। তাই উৎসব যেন এটু বেশি। কিন্তু মাশরাফি আনন্দে উন্মাতাল হলেন না। শুধু ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলানোর মধ্য দিয়েই আনন্দের বহির্প্রকাশ ঘটালেন। অপেক্ষায় আছেন জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে পাগলের মতো আনন্দ করার! ম্যাচ শেষে মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য আনন্দের কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমি অনেক খুশি। সবাই অনেক খুশি। তামিম ও বিজয় দুর্দান্ত খেলেছে। এরপর সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ ও সাব্বির (২২ রান) মিলে স্কোরটাকে বড় করেছে। তাদের ইনিংসগুলো ছোট্ট হলেও দলের কাজে লেগেছে। এ বছরে আমরা হেরেই চলেছি। এমন সময় এ মুহূর্ত অনেক আনন্দই দিচ্ছে। আমরা এ ধারাবাহিকতা এখন ধরে রাখতে চাই।’ জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা যে হতাশ হবেন এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেনও। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল উইকেট ছিল। টার্গেট অতিক্রম করার সিদ্ধান্তও ঠিক ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি। পরপর তিন ম্যাচ হারা অনেক হতাশারই। আমরা এখন ভালভাবে শেষ করার দিকেই দৃষ্টি দিচ্ছি।’ মাত্র ৫ রানের জন্য শতক হাতছাড়া হয়েছেন এনামুল হক বিজয়ের। শতকের এত কাছে গিয়েও তা ছুঁতে পারেননি। ম্যাচসেরা হয়েছেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে বিজয় বলেছেন, ‘হতাশার বিষয়ই, দুই ম্যাচে শতকের কাছে গিয়েও তা করতে পারলাম না। তামিম ইকবাল বিশ্বের সেরা ওপেনারদের একজন। সে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। প্রথম ১৫ ওভারে ব্যাট করা সহজ ছিল না। আমরা উইকেট আঁকড়ে রেখে খেলেছি। ফলও পেয়েছি।’ এ ফলই বাংলাদেশকে সিরিজে জিতিয়ে দিয়েছে। বছরজুড়ে যে হতাশা ঘিরে ধরেছিল, তা দূর হয়ে উৎসব করার উপলক্ষ এনে দিয়েছে। উৎসবেও মেতেছে বাংলাদেশ।
×