ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতির উন্নতি ॥ ১৭৯ জন পথচারীকে জরিমানা

হাত উঁচিয়ে রাস্তা পারের চেষ্টা করতেই পুলিশ হাজির

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

হাত উঁচিয়ে রাস্তা পারের চেষ্টা করতেই পুলিশ হাজির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পদচারী সেতু ও পাতালপথ ছাড়া রাস্তা পারাপারে পথচারীদের ঠেকাচ্ছে পুলিশ। নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপারে বিলি করা হচ্ছে প্রচারপত্র। কোথাও কোথাও মাইকে বারবার বলা হচ্ছেÑ ‘জীবনের ঝুঁকি এড়াতে নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপার হউন। ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার করুন। অন্যথায় নেয়া হবে আইনী ব্যবস্থা’। রাজপথে পুলিশ যখন জনস্বার্থে এমন তৎপরতায় ব্যস্ত তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই পথচারীদের। কথায় বলে, মানুষ অভ্যাসের দাস! তাই কে কি বলছে শোনার সময় নেই। রাস্তায় সেই পুরনো চিত্র। সড়কের মাঝখান দিয়ে রাস্তা পারাপারের চেষ্টা। কিন্তু এবার আর রক্ষা নেই। যখনি কেউ আইন ভেঙ্গে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখনই পুলিশ আটক করে সেই পথচারীকে! আবার পুলিশ দেখে ভৌ দৌড় দিয়ে পালিয়েছেন অনেকে। রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দ্বিতীয় দিনের অভিযানে এমন চিত্র দেখা গেছে। যত্রতত্র রাস্তা পারাপার ঠেকাতে বুধবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান শুরু হয়। জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিভিন্ন স্পটে আদালত বসে। তবে প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। অনেকে আদালতের জেল জরিমানা ও কারাদ-ের ভয়ে রাস্তা পার হতে ওভারব্রিজসহ আন্ডারপাস ব্যবহার করেছেন। পুলিশের আসামি ধরার দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষ আনন্দ উপভোগ করেছেন বেশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল কুদ্দুস ও সারওয়ার আলম এই আদালত পরিচালনা করেন। সকালে একটি আদালত বসে বাংলামোটরে অন্যটি বসে হোটেল সোনারগাঁও মোড়ে। পথচারী সেতু ও পাতালপথ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হওয়ায় সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত দুই আদালত ১৭৯ পথচারীকে জরিমানা করেছেন। এর মধ্যে সোনারগাঁও মোড়ে ১০২ ও বাংলামোটর মোড়ে ৭৭ পথচারীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২২ নবেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৫ নবেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর ঘোষণা দেয় ডিএমপি। নিয়ম না মানায় মঙ্গলবার প্রথম দিনে ৩৩১ পথচারীকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সর্বনিম্ন ২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। এ অপরাধে সর্বোচ্চ দ- ২০০ টাকা জরিমানা ও ৬ মাসের জেল। বাংলামোটর মোড়ে রাস্তার পাশেই বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড। এতে লেখা ছিলÑ মোবাইল কোর্টের অভিযান চলছে। রাস্তায় তখন বাড়তি পুলিশ মোতায়েন। এর মধ্যে হাত উঁচু করে রাস্তা পারাপারের চেষ্টা মাত্রই সামনে এসে হাজির পুলিশ। হাত ধরে আদালতের সামনে এনে হাজির করা হলো যশোরের মিজান রহমানকে। বিচারকের সামনে এসে তিনি আটক করার কারণ বুঝতে পারলেন। বললেন, আমি তো কিছুই জানি না। ঢাকার বাইরে থাকি। আজই এসেছি। না জেনে রাস্তা পার হয়েছি। আর ভুল হবে না। আমাকে ছেড়ে দিন। ততক্ষণে ভয়ে তটস্ত ভদ্রলোক। আদালত বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু পার পেলেন না ইস্কাটনের মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আসা রাসেল। তিন পুলিশ মিলে তাকে আটক করে। আটকের পর আবার দৌড় দেয়ার চেষ্টা করায় পুলিশ ক্ষেপে যায়। অনেকটা জোর করেই আদালতের সামনে হাজির করা হয় তাকে। একে তো অপরাধ। অন্যদিকে ভুল স্বীকার করতে নারাজ এ যুবক। তাই তাকে ১০০টাকা জরিমানা করা হয়। আইন অমান্য করে রাস্তা পারাপার হওয়ায় মহিলা পুলিশদের তৎপরতা ছিল বেশ। তাঁদের কাজ ছিল আইন অমান্য করে মহিলাদের যারা রাস্তা পারাপার হচ্ছেন তাঁদের পাকড়াও করা। দুই মহিলা পুলিশের হাত থেকে এক মহিলা পথচারী হাত ফসকে চলে যাওয়ায় উৎসুক মানুষের হাসির যেন শেষ ছিল না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পথচারী ধরতে সফল ছিলেন নারী পুলিশ। অভিযানের সময় আদালতের পাশেই রাখা ছিল প্রিজন ভ্যান। যারা জরিমানার টাকা দিতে পারেননি তাঁদের অনেককেই প্রিজন ভ্যানে আটকে রাখা হয়। কয়েকঘণ্টা আটক থাকার পর ছাড়া পান তাঁরা। অপরাধের ধরন অনুযায়ী ৬ মাসের দ- জোটে অনেকের ভাগ্যে। মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চলবে। নগরীর যেসব এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস আছে, সেখানেই বসানো হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। যেখানে রাস্তা পারাপারে বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই, সেখানে অভিযান হবে না।
×