ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাতে লেখা পা-ুলিপি সৃষ্টিসম্ভার, রহস্যে ভরা জীবন

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৪

হাতে লেখা পা-ুলিপি সৃষ্টিসম্ভার, রহস্যে ভরা জীবন

মোরসালিন মিজান ॥ মাত্র কিছুদিন আগেও বেঁচে ছিলেন। শুধু কি বেঁচে থাকা? আশ্চর্য রকমের প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন তিনি। এর পরও তড়িঘড়ি থামতে হলো। অনেকটা হঠাৎ করেই পৃথিবীকে বিদায় জানালেন হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত কথাশিল্পী চলে গেছেন। তবে তাঁকে ঘিরে যে কৌতূহল, নানা রহস্য, এখনও তা আগের মতোই। সাম্প্রতিক উদাহরণÑ জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত প্রদর্শনী। জনপ্রিয় লেখক নাট্যকার পরিচালককে নিয়ে নলিনিকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনের দিন থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভক্ত অনুরাগীদের মোটামুটি ভিড় লেগেছিল সেখানে। গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, বেশ বড়সড় আয়োজন। হুমায়ূনের সৃষ্টি সম্ভার তুলে ধরা হয়েছে। আছে কর্মময় জীবনের ছবি। রহস্যে ঘেরা ব্যক্তি জীবন আছে। লেখক প্রচুর লিখেছেন। তাঁর দু’হাতে লেখা পা-ুলিপি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। বইয়ের ঝকঝকে ছাপায় হুমায়ূনকে পড়া পাঠক কৌতূহল নিয়ে পা-ুলিপি দেখছেন। লম্বা সাদা কাগজ। বলপয়েন্টে লেখা। ছোট ছোট অক্ষর। সুন্দর পড়া যায়। অনেকেই পড়ছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, লেখায় কাটাকাটি খুবই কম। কোন কোন পাতায় বাড়তি একটি দাগও নেই। ‘পায়ের তলায় খড়ম’ বা ‘বাতেনি চিকিৎসক আবদুস সোবাহান’-এর পা-ুলিপি দেখে অনুমান করা যায়, লেখা শুরুর আগেই বইয়ের শিরোনাম ঠিক করে ফেলতেন হুমায়ূন। প্রদর্শনীতে পা-ুলিপির পাশাপাশি আছে লেখকের বইয়ের বিপুল সংগ্রহ। গ্লাস শোকেসে শত শত বই প্রদর্শিত হচ্ছে। দেয়ালে বড় করে সাজানো প্রথম বইয়ের প্রচ্ছদ। ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে শুরু করেছিলেন হুমায়ূন, সে কথাটি বলার চেষ্টা। ছোট্ট একটি টেবিল বলছে, মেঝেতে বসে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে লিখতেন তিনি। লেখার সময় টেবিলের এক কোনে থাকত চায়ের পেয়ালা। এখনও তা-ই আছে। চশমাটি এই বুঝি খুলে রেখে গেছেন লেখক! হুমায়ূন সৃষ্ট বিভিন্ন চরিত্রের উপস্থাপনাও চোখে পড়ে। আলাদা করে বলতে হয় হিমুর কথা। এই চরিত্রের ভক্ত দেশজুড়ে। সে চিন্তা থেকেই হয়ত দেয়ালে ঝোলানো হয়েছে হলুদ পাঞ্জাবি। প্রদর্শনীতে আরও আছে পরিচালক হুমায়ূনের একটি চেয়ার। সে চেয়ার যেন ঘোষণা করছে অদ্ভুত শূন্যতা। গ্যালারির দেয়ালজুড়ে আবার নানা রং ঢঙের হুমায়ূন আহমেদ। বেশ কিছু আলোকচিত্রে লেখক ভাই বা মায়ের সঙ্গে। কখনোবা পাশে স্ত্রী সন্তান। লেখার পাশাপাশি ছবি এঁকে হরেক চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন হুমায়ূন। এমন বেশি কিছু ছবি রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। সব মিলিয়ে ভাল একটি আয়োজন। আর সীমাবদ্ধতার কথা বললে, প্রদর্শনীতে হুমায়ূনের খুব চেনা জানা জগতটাই ওঠে এসেছে। দুর্লভ নিদর্শন খুব একটা চোখে পড়ে না। একেবারে সাধারণ সাদামাটা আলোকচিত্রের প্রাধান্য। একজন লেখকের বড় কোন ইতিহাস এগুলো ধারণ করে না। এর বাইরে জোর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে আয়োজক জাতীয় জাদুঘরের। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান একেবারেই সমকালীন একজন লেখকের ওপর প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। যে কারও মনে হতে পারে, আর সবার মতোই জনপ্রিয়তার বিচারে হুমায়ূনকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। এই সমালোচনার প্রধান কারণ, বাংলা সাহিত্যের বহু কীর্তিমান কিংবদন্তি হুমায়ূনের আগে গত হয়েছেন। তাঁদের কাউকে নিয়ে এমন আগ্রহ দেখায়নি জাদুঘর। দেখালে বর্তমান আয়োজনটি আরও প্রাসঙ্গিক হতো। বিষয়গুলো নিয়ে নিশ্চয়ই ভাববে জাতীয় জাদুঘর। ১২ নবেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনী মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। তবে, প্রদর্শনীর সময় বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
×