ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ডেভিস কাপ শিরোপা জিতে গর্বিত ফেদেরার

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

ডেভিস কাপ শিরোপা জিতে গর্বিত ফেদেরার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেনিস কোর্টে দীর্ঘ ১৬ বছর কাটিয়ে দেন রজার ফেদেরার। অসাধারণ সব কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু বাকি ছিল ডেভিস কাপের শিরোপাটা। শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নিল। সব গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট নিজের করে নেয়ার পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডের হয়ে এখন ডেভিস কাপ জয়ের গর্বিত মালিকও টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি ফেদেরার। চারটি গ্র্যান্ডস্লাম মিলিয়ে সর্বমোট রেকর্ড ১৭টি, ছয়টি এটিপি ট্যুর ফাইনালের শিরোপা, ২৩টি মাস্টার্স শিরোপা, অলিম্পিক স্বর্ণপদক যার দখলে তার ঝুলিতে শুধু ডেভিস কাপ থাকবে না তা কি আর হয়? সেটাই সম্ভব করে তুললেন ফেদেরার। বেজিংয়ে ২০০৮ সালে অলিম্পিক স্বর্ণপদকটি এসেছিল স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কাকে সঙ্গী করে ডাবলসে। যদিও এতসব অর্জনের পরেও এখনও তিনি রাফায়েল নাদাল এবং আন্দ্রে আগাসীর কৃতিত্বকে ধরতে পারেননি। এই দুজনই চারটি গ্র্যান্ডস্লামের পাশাপাশি অলিম্পিক এককে স্বর্ণ এবং ডেভিস কাপের শিরোপা জিতেছেন বেশ অনায়াসেই। কিন্তু সবকিছুর পরেও সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে একজন খেলোয়াড়কে বিবেচনা করতে হলে সেখানে অনেক কিছুই দেখা হয়, যার সব গুণই ফেদেরারের মধ্যে রয়েছে। সব শিরোপার মধ্যে ফেদেরারের কাছে ডেভিস কাপ জয়ই সবচেয়ে কঠিন, কারণ এখানে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সের পাশাপাশি সতীর্থদের সাফল্যের ওপরও নির্ভর করতে হয়। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো উইম্বলডনের শিরোপা জেতা রবিবার সুইজারল্যান্ডের হয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে জয়ী হয়ে ডেভিস কাপের শিরোপা জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ফেড এক্সপ্রেস বলেন, ‘এখানে তুলনা করার কিছু নেই। যখন আমি উইম্বলডন জিতেছিলাম তখন সত্যি বলতে কী একেবারে বিস্মিত হয়ে পড়েছিলাম। ডেভিস কাপ সম্পর্কে আমার একটি আত্মবিশ্বাস ছিল ক্যারিয়ারের কোন না কোন সময় আমি এই শিরোপা জিতবই। অবশ্যই সবকিছুকে মানিয়ে নিয়ে শিরোপা অর্জন করার একটি চাপ তো থাকেই এবং একটি দল হিসেবে এখানে সবাইকে খুশী করারও একটি বিষয় থাকে। তাই এই অনুভূতিটা একেবারে ভিন্ন। আমি এখানে একা খেলিনি। তাই সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল।’ প্রথম পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে ফেদেরার গাসটাডের সুইস স্কি রিসোর্টে ১৯৯৮ সালে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ৩২তম রাউন্ডে পরাজিত হন। বিশ্বের সর্বকালের সেরা জুনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তার সময়ে বিবেচিত হয়েছিলেন। তখন অবশ্য সত্যিকার অর্থেই কোন ইঙ্গিত ছিল না পেশাদার জীবনে এসে টেনিস বিশ্ব তাকে কোন অবস্থায় দেখবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক টেনিস তারকা পিট সাম্প্রাস যুগে মূলত অন্য কোন খেলোয়াড়ের দিকে কোন নজরই ছিল না। কিন্তু ২০০১ সালে উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে পিটকে পরাজিত করার পরেই প্রথম ফেদেরারের ওপর সকলের দৃষ্টি পড়ে। তারপরে অবশ্য গ্র্যান্ডস্লাম ইভেন্টে ফেদেরার প্রায়ই ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০০৩ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ডে লুইস হোরনার কাছে পরাজিত হওয়াটা তার ক্যারিয়ারের একটি কালো অধ্যায়। ফেদেরার যে সময় তার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছিলেন সেই সময়ে তার সঙ্গে কয়েকজন উঠতি তারকার উত্থান হয়েছিল যাদের মধ্যে লেটন হিউয়েট, এ্যান্ডি রডিক, মারাত সাফিন অন্যতম। তার সতীর্থরা যেখানে র‌্যাঙ্কিংয়ের উন্নতি থেকে গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিততে থাকেন সেখানে ফেদেরারের সাফল্য হয়ে পড়ে অনিয়মিত। পরের বছরই ফেদেরার বলেছিলেন, আমি হতাশ এ কথাটা কখনই বলতে চাই না। কিন্তু আমি সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পারছি না কেন আমার সঙ্গেই এমন হচ্ছে। এ ধরনের পারফর্মেন্সের সঙ্গে আমাকে মানায় না। হয়ত আমাকে আরেকটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে। প্যারিসে ব্যর্থ হওয়ার একমাস পরেই নতুন রূপে যেন আবির্ভূত হন সুইস তারকা। উইম্বলডনের ফাইনালে সরাসরি সেটে মার্ক ফিলিপোসিসকে হারিয়ে তার যাত্রা শুরু। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি টেনিস বিশ্বের এই উজ্জ্বল প্রতিভাকে। পরবর্তী চার বছরে টেনিস বিশ্ব ফেদেরারের দোর্দ- প্রতাপ দেখেছে। ১০টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতে তিনি প্রমাণ করেছেন কেন তিন বিশ্বসেরা। এর মধ্যে ২০০৪ ও ২০০৭ সালে চারটির মধ্যে তিনটি গ্র্যান্ডস্লামই ছিল তার দখলে। এর মধ্যে শুধু স্প্যানিশ ক্লে কোর্ট বিশেষজ্ঞ রাফায়েল নাদাল ফেদেরারের পাশে নিজেকে কিছুটা সামনে নিয়ে আসেন ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা জয়ের মাধ্যমে। একমাত্র নাদালকেই পুরো ক্যারিয়ারে ফেদেরার তার সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ২০০৯ সালে রবিন সোদারলিংয়ের কাছে নাদাল রোলা গ্যাঁরোতে পরাজিত হওয়ার পরে ফেদেরার শেষ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে গ্র্যান্ডস্লামের কোটা পূরণ করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ওয়ারিঙ্কাকে নিয়ে ২০০৮ সালে অলিম্পিক স্বর্ণ, ২০১২ সালে উইম্বলডন জিতে সর্বকালের সেরা ১৭টি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ড গড়েন। কিন্তু তারপরও ডেভিস কাপের আক্ষেপটা ছিলই ৩৩ বছর বয়সী ফেদেরারের। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে ফেদেরার ৬-৪, ৬-২ এবং ৬-২ গেমে হারান রিচার্ড গ্যাসকুয়েটকে।
×