ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পথচলায় স্বেচ্ছাচারিতা নয়

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

পথচলায় স্বেচ্ছাচারিতা নয়

সুস্থ দুটি পা থাকলে হাঁটার যোগ্যতা অর্জিত হয়; কিন্তু সুশীল পথচারী হতে হলে জানা চাই পথচলার নিয়মকানুন। একজন অন্ধ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীও পথ চলেন, সে জন্য থাকে তার প্রস্তুতি, সাবধানতা আর অবলম্বন। যিনি চক্ষুষ্মান, শ্রবণযন্ত্র সম্পূর্ণ সচল আছে যারÑ তার কাছে বরং প্রত্যাশা বেশি। তিনি নিয়ম মেনে পথ চলবেন, ঝুঁকি এড়াবেন এবং শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য বজায় রাখবেন। এর ব্যতিক্রম ঘটলেই বাড়ে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচার এবং দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা। সড়ক চলাচলে সুষ্ঠুতা ও শৃঙ্খলা বজায়ের স্বার্থেই তৈরি করা হয়েছে ট্রাফিক আইন। সড়কে তো কেবল যান্ত্রিক যান চলে না, থাকে অযান্ত্রিক যানও। আবার যান্ত্রিক যানও থাকে বিভিন্ন গতির। সেই সঙ্গে থাকেন হাঁটা মানুষ। ট্রাফিক আইন শুধু যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পথচারীর জন্যও রয়েছে পথ চলাচল নীতিমালা। ব্যস্ত রাজধানীতে প্রতিদিনই গড়ে যে এক হাজার ৪১৮ জন যোগ হচ্ছে তার সিংহভাগই দরিদ্র শ্রমজীবী শ্রেণীর। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সড়কপথের ওপর জনচাপ বাড়ছে। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর প্রায় আড়াই কোটি মানুষের চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা অত্যন্ত কম। নেই চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফুটপাথ। বিপুলসংখ্যক পথচারী পথ চলতে গিয়ে প্রধান রাস্তার ওপরেই অবস্থান নিয়ে থাকেন। ফলে দ্রুতগতির গাড়িচালকের সাবধানতায় ঘাটতি থাকলে সড়কের ওপর থাকা পথচারীর জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। রাস্তা পারাপারের সুবিধার জন্য রাজধানীতে নির্মাণ করা হয়েছে ফুটওভারব্রিজ (উড়াল পথ) ও আন্ডারপাস (পাতাল পথ)। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৭১টি ফুটওভারব্রিজ রয়েছে। সে তুলনায় আন্ডারপাসের সংখ্যা বেশ কম, মাত্র তিনটি। অধিকাংশ পথচারীর প্রবণতা হলো রাস্তা পারাপারের সময় ফুটওভারব্রিজগুলো এড়িয়ে যাওয়া। যেন মাথার ওপর শোভাবর্ধনের জন্য ওগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত উপস্থিত থাকছে। ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার ছাড়া রাস্তা পারাপার হলে আইন অনুযায়ী ২০০ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান প্রয়োগ করা হবে। যদিও ডিএমপি কর্তৃপক্ষ মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে জেল-জরিমানা নয়, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য। তবে এ কথাও মানতে হবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠুতার স্বার্থে যানবাহনের সমান্তরালে পথচারীর চলাচলের ওপরও নিয়ন্ত্রণ থাকা চাই। বলাবাহুল্য মহানগরীতে আরও ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা দরকার। এক্ষেত্রে সুবিবেচনাও জরুরী। কারণ বহু ফুটওভারব্রিজ বেশ খাড়া ও সিঁড়ির ধাপগুলো অপ্রশস্ত। ফুটওভারব্রিজগুলো ব্যবহার না করার পেছনে তাড়াহুড়ো এবং একটু বেশি পথ হাঁটার বা সিঁড়ি ভাঙ্গার কষ্ট না করার মানসিকতাই বড়। সচেতনতার অভাব তো রয়েছেই। ডিএমপির ওই উদ্যোগ পথচারীদের ভেতর সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ এনে দিয়েছে বটে! যদিও রাস্তা পারাপার নির্বিঘœ ও নিরাপদ রাখতে হলে মানুষের সদিচ্ছাটাই জরুরী। নিজের ভাল নাকি পাগলেও বোঝে। তবে এই সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশসহ সড়কে কর্তব্য পালনরত পুলিশদের মনে রাখতে হবে রাস্তায় সাময়িকভাবে অসুস্থ ও শারীরিকভাবে অসমর্থ এবং বয়স্ক বহু ব্যক্তিও থাকেন। তাঁদের ছাড় দেয়ার কথা বলছি না, অন্তত তাঁদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো মানবিক কর্তব্য। এক্ষেত্রে সহ-পথচারীর ভূমিকাটাও স্মরণ রাখা চাই।
×