ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় স্থলবন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অতিষ্ঠ

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় স্থলবন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অতিষ্ঠ

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বাস্থবক) এর চেয়ারম্যান মোঃ মোয়েজ্জদ্দীন আহমেদ এখন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত; এমনকি দলাদলি, কোন্দল, আঞ্চলিকতা সৃষ্টি করে তিনি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকা-ে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন। ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ ও চরম হতাশা। যার পরিণতিতে দেশের স্থলবন্দরসমূহের সামগ্রিক কর্মকা-ে গতিহীনতা ও পশ্চাদমুখিতা দেখা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে লোকটি বর্ণচোরা; যার গোপন সম্পর্ক রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ‘ক্রিমিনাল’ সংগঠন ‘জামায়াত’ এর সঙ্গে। জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত এই জামায়াতপস্থী আমলা কাজ করে যাচ্ছেন দুর্দান্ত প্রভাবে। জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে গোপন নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে পর্দার অন্তরালে আওয়ামীপন্থীদের নিধন এবং স্থলবন্দরের ভবিষ্যত প্রজম্মকে আওয়ামীমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১২ সালের ১৩ নবেম্বর যোগদানের পর আওয়ামীপন্থী এবং জামায়াত-বিএনপি পন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃথক তালিকা তিনি প্রণয়ন করেন। এর কিছুদিন পরেই বিভিন্ন বন্দরে জামায়াত-বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেন। বেনাপোল স্থলবন্দরে তার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বিএনপি নেতা বাবু গয়েশ্বর রায়ের আত্মীয় সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) পার্থ ঘোষ বলে অভিযোগ আছে। ছাত্র জীবনে জামালপুর জেলা ছাত্র শিবিরের দপ্তর সম্পাদক মেহেদি হোসেন এখন বেনাপোল বন্দরে ট্রাফিক পরিদর্শক। আর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপাপ্ত) আব্দুল হান্নান বিএনপির লোক। এদের অত্যাচারে সাধারণ কর্মচারীরা আজ অতিষ্ঠ। চেয়ারম্যানের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে আব্দুল হান্নান সব জায়গা থেকে কমিশন আদায়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান এগুলো জেনেও না জানার ভান করে আছেন। আব্দুল হান্নান নিজেও একজন অত্যাচারী হিসেবে সকল কর্মচারীর নিকট পরিচিত। এই দুবৃর্ত্ত কর্মচারী চক্রটির মাধ্যমে চেয়ারম্যান আওয়ামীপন্থীদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো পঁজি করে নাটক সাজিয়ে কারণ দর্শানো নোটিস, বিভিন্ন বিভাগীয় মামলা, সাময়িক বরখাস্ত এমনকি চাকরি হতে বরখাস্ত পর্যন্ত করে যাচ্ছেন। ভোমরা স্থলবন্দরে তিনি দু’জনের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একইভাবে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী জোয়ার্র্দ্দার (ছাত্র জীবনে থানা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক ছিলেন) ও ওয়্যারহাউজ সুপারিনটেনডেন্ট মহিউদ্দিন হাওলাদার (যিনি বাগেরহাট জেলা ছাত্র শিবিরের প্রচার সম্পাদক ছিলেন)। প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আলী, এস্টেট অফিসার রেজাউল করীমকে তিনি তার অপকর্মের এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। সর্বমোট ৭-৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে খুশি করে তাদের বিভিন্ন অবৈধ আয়ের পথ করে দিয়ে এই চেয়ারম্যান চরম স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছেন। সামান্য অভিযোগ দাঁড় করিয়েই তার এজেন্টদের সাক্ষী বানিয়ে আওয়ামীপন্থীদের নিধন করে যাচ্ছন এক এক করে। ইতোমধ্যে তার নিধন তালিকায় থাকা বেনাপোল বন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুত) আবু জায়ের কেরামত আলীকে তিনি চাকরিচ্যুত করেছেন। এই প্রকৌশলী ছাত্রজীবনে ঢাকা পলিটেকনিক্যাল কলেজের ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ের অডিটর জামাল উদ্দিন জীবনকে মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে তার এজেন্টকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে একধাপ নিচে নামিয়ে দিয়েছেন। যার এক মাত্র কারণ জামাল উদ্দিন (জীবন) ছাত্র জীবনে চট্টগ্রাম মহানগরীর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। বন্দরের অডিটর (ছাত্র জীবনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) আলী আশরাফ কে জোর করে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পদ না থাকা সত্ত্বেও সেখানে বদলি করেছেন। তার এহেন কর্মকা- থেকে রেহাই পাননি নি¤œপদের অফিস সহায়ক কর্মচারীগণও বলে অভিযোগ আছে। সূত্র বলেছে, বাগেরহাটের সন্তান এই আমলা ব্যক্তিটি পারিবারিক জীবনে দু’টি বিবাহ করেছেন। ছাত্রজীবনে সাতক্ষীরায় থাকা অবস্থায় তার ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। সেখানে তার দু’টি সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বরিশালে; সেখানেও তার একটি মেয়ে রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে এযাবত অফিস আদেশের বাইরে তিনি ৫ বার এবং অফিস আদেশ নিয়ে ৭ বার সাতক্ষীরায় অবস্থান করেছেন। জেলা সার্কিট হাউসের কথা বললেও তিনি অবস্থান করেন তার ১ম বিবাহিত স্ত্রীর পিতার বাড়িতে। লোকটির পারিবারিক জীবনেও নানাবিধ অসচ্ছতার অভিযোগ পাওয়া যায়। জানা গেছে, বাংলাদেশ স্থলবন্দরের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী তার অযাচিত নির্যাতনে আজ অতিষ্ঠ। বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত রয়েছেন। স্থলবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চাচ্ছেন তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ অপসারণ। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এতই অতিষ্ঠ যে এই চেয়ারম্যানের দৌরাত্ম বন্ধ না হলে যে কোন সময় দেশের সকল স্থলবন্দরে একযোগে কার্যক্রম বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন; যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা-কে স্থবির করে দিতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে পরিত্রাণের জন্য দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান মোয়েজ্জদ্দীনের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান এবং প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে, চেয়ারম্যান মোয়েজ্জদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহের বিষয়ে কথা হয় বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে চাকরিচুত প্রকৌশলী আবু জাহের মোঃ কেরামত আলী সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে টেলিফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে বেনাপোল স্থল বন্দরের একটি দূর্বৃত্ত চক্র পাতানো ষড়যন্ত্র করে আমাকে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানকে দিয়ে চাকরিচুত করেছেন। আমি বিশ্বাস করি চেয়ারম্যান সম্পূর্ণ তার দলাদলী আঞ্চলীকতা ও দূর্নীতি পরায়নাতার স্বার্থে এই অন্যায় কাজটি করেছেন। আমি ইতোমধ্যে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরের ২৭ তারিখে হাইকোর্টে একটি রিটপিটিশন দায়ের করেছি। যা নিয়মিত মামলা হিসাবে গ্রহনের নিমিত্তে শোনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। আসল কথা হলো মোয়েজ্জদ্দীন আহমেদ নামে এই লোকটি বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমি মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের লোক আমি ছাত্র জীবনে ছাত্র লীগের নেতা ছিলাম এটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে চেয়ারম্যান মোয়েজ্জদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি জামায়াতের সঙ্গে কোনভাবেই যুক্ত নন। ছাত্রজীবনেও কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আসলে বন্দরের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র যাদের বিরুদ্ধে আমি বিভিন্ন সময়ে সুনির্দিষ্ট ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি তারাই এ রকম মিথ্যা রটনা চালাচ্ছে সাংবাদিকদের কাছে। আঞ্চলিকতা ও দলাদলি তৈরি করার বিষয়টি সঠিক নয়।
×