ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতার নাম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতার নাম

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে ॥ পদ্মা নদীর বুক চিরে জেগে উঠছে স্বপ্ন- যে স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু। সকল বাধা বিঘœ কাটিয়ে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। যার পুরো কৃতিত্ব বর্তমান সরকারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করব নিজেদের টাকায়। দিকে দিকে গ্লোগান ওঠে, ‘আমাদের পদ্মা সেতু আমরাই করব।’ তাঁর সেই প্রত্যয়ে, সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ সত্যি হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মায় মাথা তুলে দাঁড়াবে দেশের বৃহত্তম-৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের বৃহৎ স্বপ্ন সেতু। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। কোথাও চলছে রাস্তা নির্মাণের তোড়জোড়, কোথাও মাটি পরীক্ষার কাজ, কোথাও আবার চলছে নদীর ওপর প্লাটফর্ম নির্মাণ। আবার কোথাও বসানো হচ্ছে পাইল, তৈরি হচ্ছে বিরাটাকার ওয়ার্কশপ। ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ার পদ্মাপাড়ে মৎস্য আড়তের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু পরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সরকার বদলের পাশাপাশি সেতু প্রকল্পের কাজও থেমে যায়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছর এবং এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রকল্পের কাজ তেমন এগোয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সরকার গঠনের পর আবারও পদ্মা সেতু নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। চুক্তি হয় বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকাসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে মাঝপথে বিশ্বব্যাংক প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সাময়িক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে সরকার ঘোষণা দেয়, নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু বানানো হবে। সেই ঘোষণা মতো শুরু হয়ে গেছে কর্মযজ্ঞ। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর জন্য সিঙ্গাপুর, চীন ও জার্মানিতে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনার অংশ আগামী ২৭ নবেম্বর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ নাগাদ পদ্মা সেতুর মূল অংশের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সেতুর নির্মাণকাজের জন্য মাওয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ পাইল ফেব্রিকেশন ওয়ার্কশপ বানানো হচ্ছে। মাওয়ার পাশে কুমারভোগে সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে এ ওয়ার্কশপের নির্মাণকাজ চলছে। ওয়ার্কশপে তৈরি হবে সেতুর পাইল। সেই পাইলের স্টিলের প্লেট আনা হবে চীন থেকে। বিভিন্ন মালামাল নিয়ে বড় বড় জাহাজ ওয়ার্কশপের পাশে ভেড়ানোর সুবিধার্থে একটি জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই জেটির জন্য কংক্রিটের পাইল তৈরির কাজও চলছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে মাওয়ার কুমারভোগের মতো আরেকটি কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। সেতুর কাজের সুবিধার্থে মাওয়া ঘাটকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কুমারভোগের শিমুলিয়ায়। প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ ঘাটের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের কাজ। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তাটিও প্রায় প্রস্তুত।
×