ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীবাদ অঙ্ক কষার বিষয় নয়

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

জঙ্গীবাদ অঙ্ক কষার বিষয় নয়

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স এ্যান্ড পিস (আইআইপি) সম্প্রতি অঙ্ক কষে বলেছে, সন্ত্রাসী তৎপরতা ঝুঁকির শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান । ২০১২ সালে এই সংস্থাটি বিশ্ব সন্ত্রাসী সূচক (এষড়নধষ ঞবৎৎড়ৎরংস ওহফবী) প্রস্তুত করা শুরু করে এবং তারা বলছে, এ বছরের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৪টি দেশের মধ্যে ২৩তম। ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭তম ছিল। এই তালিকার ওপরের দিকে আছে ইরাক, তারপর আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নাইজিরিয়া আর সিরিয়া। এই সূচক অনুযায়ী অনেকটা সন্ত্রাসমুক্ত দেশ হচ্ছে আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়া। বাংলাদেশে বা পাকিস্তানের সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশকে তারা তাদের অঙ্কের সূচকে নিয়ে এসে বলেছে, এই দেশগুলোও চরম সন্ত্রাসী ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ সব দেশের মধ্যে আছেÑ এঙ্গোলা, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আইভরি কোস্ট, ইথিওপিয়া, ইরান, ইসরাইল, মালি, মেক্সিকো, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও উগান্ডা। আইআইপি উল্লেখ করেছে তাদের তথ্যের মূল উৎস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যে সব কারণে তারা বাংলাদেশকে এত ওপরে তুলে দিয়েছে তার মধ্যে আছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, মহিলাদের রাজনৈতিক অধিকারের ঘাটতি, আন্তঃগোষ্ঠী সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব। বাস্তবে সন্ত্রাসের মতো বিষয়টি অঙ্ক দিয়ে মাপা প্রায় দুষ্কর। সন্ত্রাস শুধু গাণিতিক হিসাব নয়। সন্ত্রাস অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আইআইপির এই সূচক প্রচার হওয়ার পর গত ১৮ নবেম্বর নিরাপত্তা বিশ্লেষক এউন ম্যাকস্কিল লন্ডন হতে প্রকাশিত দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় এক নিবন্ধে এই সূচকের বরাত দিয়ে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১’র পর সারাবিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকা- পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আর এ সময়ে ১৮,০০০ মানুষ সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। যাঁদের বেশিরভাগই প্রাণ হারিয়েছেন ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম, তালেবান আর আল কায়েদার হাতে। আইআইপি সযতেœ এড়িয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকা-ের এই যে রমরমা অবস্থা তার জন্য এককভাবে যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্ররা কতটুকু দায়ী সে বিষয়টি। তা তারা একবারও উল্লেখ করেনি। এক-এগারোর পর সে দেশের বিশিষ্ট দার্শনিক চিন্তাবিদ নওম চমস্কি যুক্তরাষ্ট্র হতে প্রকাশিত ‘মান্থলি রিভ্যুতে’ সে বছর ৬ নবেম্বর এক সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রধানসারির সন্ত্রাসী রাষ্ট্র (ঞযব টহরঃবফ ঝঃধঃবং রং ধ খবধফরহম ঞবৎৎড়ৎরংঃ ঝঃধঃব)। পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে, বুশ জুনিয়র যখন সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার জন্য ইরাক আক্রমণ করলেন তখন তিনি সদর্পে ঘোষণা করলেন, এটি হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ‘তুমি হয় আমাদের সাথে অথবা আমাদের বিরুদ্ধে।’ এই ডায়ালগটি একেবারেই বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘বেন হার’ হতে ধার করে নেয়া। রোমান সেনাপতি মেসালা জেরুজালেম দখল করলেন। সেখানে তিনি তাঁর ইহুদী বন্ধু জুডা বেন হারকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘হয় তুমি আমার সাথে আছ অথবা ওদের (জেরুজালেমবাসী) সাথে।’ মেসালা যাঁদের পরাজিত করেন তাঁরা মূলত ইহুদী ছিলেন আর বেন হার ছিলেন নগরের একজন বড়মাপের ধনাঢ্য ব্যক্তি । ইরাক দখল করার অজুহাত হিসেবে বুশ সাদ্দামের কাছে ভয়াবহ সব গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে প্রচার করলেন। বুশ একজন মধ্য মেধার রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং তিনি তাঁর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কলিন পাওয়েলের কথায় বিশ্বাস করেছিলেন। পাওলের কাছে যে তথ্য ছিল তা ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট। সাদ্দাম বুশের পিতা সিনিয়র বুশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ১৯৯০ সালে প্রথম গাল্ফ যুদ্ধের আগে সাদ্দাম সিনিয়র বুশকে বলেছিলেন, কুয়েত বাঁকা পদ্ধতিতে (ঝষধহঃ উৎরষষরহম) ইরাকের তেল তুলে নিচ্ছে। তা বন্ধ না হলে তিনি কুয়েতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সাদ্দাম জানতেন যুক্তরাষ্ট্র আর কুয়েত একেবারে হরিহর আত্মা। সিনিয়র বুশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। সাদ্দাম কুয়েত আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। বাকিটা ইতিহাস। এটি অস্বীকার করার কোন কারণ নেই সাদ্দাম খুবই খারাপ মানুষ ছিলেন। একনায়ক তো ছিলেনই, তার ওপর তাঁর নিজের দেশের মানুষকে গ্যাস প্রয়োগ করে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু দেশটিতে কোন জঙ্গীবাদ ছিল না। বুশের কৃপায় এখন সেই ইরাকে জঙ্গীবাদের চাষ হয়। ইরাক দখল করার পর প্রমাণিত হয়েছিল সেই দেশটার বারোটা বাজিয়ে বুশ পক্ষান্তরে বিশ্বশান্তির বারোটা বাজানোর সূত্রপাত করেছিলেন। সেখানে কখনও কোন গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। বুশের আরও আগে সেই সত্তরের দশকে আফগানিস্তানে আর এক খেলা শুরু হয়েছিল, যার পেছনে মূল কলকাঠি নেড়েছিল সেই যুক্তরাষ্ট্র। চমস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ছিল এই খেলার মূল খেলোয়াড়। তাঁরা বিন লাদেন নামক এক দানব সৃষ্টির প্রকল্পে হাত দিল। লাদেন বুশ সিনিয়রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। লাদেন পরিবার সৌদি আরবের বৃহৎ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক। সিনিয়র বুশের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। দুইজনের খোশ মেজাজের ছবি একাধিকবার আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাই আফগানিস্তানের বাদশা জহির শাহ এক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন সরদার দাউদ খান। অভিযোগ আছে, ক্ষমতার এই পালাবদলে সোভিয়েত ইউনিয়নের হাত ছিল। কারণ তারা চাইছিল আফগানিস্তান দখল করে পশ্চিম এশিয়ায় তাদের ক্ষমতার বলয় সম্প্রসারণ করতে। এর পর আফগানিস্তানে ঘন ঘন ক্ষমতার পালাবদল শুরু হয় এবং তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএর হাত থাকাটা বিচিত্র কিছু নয় বলে অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন। চমস্কি তাঁর সাক্ষাতকারে ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্ট কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জিভন্যু ব্রেজনেস্কির বরাত দিয়ে বলেছেন, ব্রেজনেস্কি একাধিকবার বলেছেন, তাঁরা আফগানিস্তানে এমন একটি ফাঁদ পেতেছিলেন যাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পা দেয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে এই অজুহাতে প্রবেশ করতে পারে। ব্রেজনেস্কি বেশ খোশ মেজাজেই বলেছেন, এই পরিকল্পনায় তাঁরা সফল হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের সমাজতান্ত্রিক সরকারকে রক্ষা করার জন্য সেখানে সেনা অভিযান শুরু করে এবং সেই অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র সিআইএ পাকিস্তানের আইএসআইর সহায়তায় আফগানিস্তানে তাদের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য প্রথমে মুজাহিদীন ও পরে তালেবান সৃষ্টি করে এবং তার দায়িত্ব দেয়া হয় বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, আইমান আল জাওয়াহিরির মতো চরম উগ্রপন্থীদের। শুরু হয় আফগানিস্তান কা-ের নতুন অধ্যায়। চমস্কির মতে, এই কর্মকা-ে গোয়েন্দা তথ্যের মূল উৎস ছিল সিআইএ, মিসর, পাকিস্তান, ফ্রান্স আর ইসরাইল। বিশাল অঙ্কের অর্থ এসেছে সৌদি আরব থেকে। বেশিরভাগ যোদ্ধা এসেছে অন্য দেশ হতে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিল পাকিস্তান, মিসর, আর সৌদি আরবের। আজকে যে সব জঙ্গী বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবান হয়ে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এই জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সিআইএ, পাকিস্তান আর মিসর। তাদের বলা হয়েছে, তারা ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের অজান্তেই তারা আগামী দিনের বিশ্বের জন্য একটি স্থায়ী জঙ্গী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল, যারা বর্তমান বিশ্বের যে কোন স্থানে সুযোগ পেলেই প্রাণঘাতী সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, একবার সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান হতে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সৃষ্ট এই তালেবানরা তাদের বন্দুকের নলটা খোদ যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই ঘুরিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকরা কখনও ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না এবং বার বার তাঁরা একই ভুল করেই যান। তবে একবার বারাক ওবামার সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিলারি ক্লিনটন সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন, মুজাহিদ আর তালেবানদের যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা করা ছিল এক চরম ঐতিহাসিক ভুল। এই তালেবানরাই পরবর্তীকালে মিসরের আনোয়ার সাদাতকে হত্যা করেছিল। বর্তমানে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চলই তালেবানদের দখলে। বুশের ইরাক দখলের পর সেই দেশে এখন জঙ্গীবাদের চাষ তো হয়ই, তার ওপর দেশটা এখন অন্তত তিন খ-ে বিভক্ত। মিসরে সিআইএর মদদে হোসনি মোবারক তথাকথিত তাহরির স্কয়ার বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাত হলো। কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ায় গণতন্ত্র রফতানি করতে তৎপর হলো। উৎখাত হলেন লিবিয়ার লৌহমানব গাদ্দাফি। সাদ্দাম, মোবারক আর গাদ্দাফির মধ্যে চরিত্রগত অনেক মিল আছে কিন্তু এই তিন একনায়ক তাদের দেশে কখনও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেননি। এখন সারাবিশ্বে এ সব দেশ হতে জঙ্গীবাদ রফতানি হয়। লিবিয়াতে এতদিন পরও কোন সরকার নেই। তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের লাভ। দেশে দেশে যত অস্থিতিশীলতা থাকবে যুক্তরাষ্ট্র সেই সব দেশের ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে বেশ উৎসাহিত হবে। এই কাজটি তারা বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কামিয়াব না হওয়ার একমাত্র কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা। তবে তারা যে হাল ছেড়ে দিয়েছে, তা কিন্তু নয়। কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশে যে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিফেন্স বার্নিকাট আসছেন। তিনি তো কয়েক মাস আগে মার্কিন সিনেটের ফরেন রিলেসেন্স কমিটিতে অনেকটা আজান দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি আছে সুতরাং তার কাজ হবে এ বিষয়ে কাজ করার। আশা করি সরকার আগে থেকেই সাবধান হবে। বর্তমানে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ওলটপালট করে দিচ্ছে আইএস (ইসলামিক স্টেট)। গত ১৬ নবেম্বর বিশ্লেষক টেরেন্স ম্যাককয় ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছেন, এই আইএস তো যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতা ও সহায়তায় সৃষ্টি হয়েছে। ইরাক দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সন্দেহভাজন সকল ইরাকীকে নিয়ে দেশটির দক্ষিণ অঞ্চলের ইরাক-কুয়েত সীমান্তসংলগ্ন গারমা শহরের কুখ্যাত বুকা কারাগারে বন্দী করে রাখে। এই সন্দেহভাজনদের মাঝে অনেক দুর্ধর্ষ জঙ্গীও ছিল। একসঙ্গে থাকার কারণে তারা ভবিষ্যত পরিকল্পনা করার অনেক সুযোগ পায়। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে এই কারাগার হতে আটককৃত অনেককেই মুক্ত করে দেয়া হয় যাদের মধ্যে আজকের আইএসের অনেক নেতাও ছিলেন। ইরাকের পুলিশ প্রধান সাদ আব্বাস মাহমুদের মতে, ছাড়া পাওয়া নব্বই ভাগ কয়েদিই পরবর্তীকালে আইএসের জঙ্গীর খাতায় নাম লিখিয়েছে। প্রাপ্ত হিসাব মতে, বর্তমানে এক লাখ জঙ্গী আইএসের হয়ে পুরো সিরিয়া, ইরাক আর তুরস্কের কিছু অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আল কায়েদা। বর্তমান আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি ভারত ও বাংলাদেশেও আইএসের তৎপরতা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী, আইএসের প্রধান গণমাধ্যম শাখা ‘আল-হায়াত’ একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করে তাদের জিহাদী যোদ্ধাদের ইউরোপীয় দেশগুলোতে সন্ত্রাস সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন। আইএসের কাছে যে অস্ত্রভা-ার আছে তা দিয়ে তারা আগামী দুই বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে আর এ সব অস্ত্রের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। আর সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে এই সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে তরুণরা দেশত্যাগ করছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে। ঠিক যেমনটি সত্তর বা আশির দশকে আফগানিস্তানের মুজাহিদ ও আল কায়েদার ক্ষেত্রে হয়েছিল। এরা শুধু যাচ্ছেই না, তারা বিভিন্ন নিরীহ মানুষের শিরñেদও করছে আর সেই ভয়াবহ দৃশ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে ইসলামকে কলুষিত করছে। আইএস এখন বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী জঙ্গী সংগঠন। প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, তাদের ভা-ারে এই মুহূর্তে কম করে হলেও দুই বিলিয়ন ডলার পরিমাণের অর্থ মজুদ আছে। তারা এও বলেছে, তারা অচিরেই সৌদি রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করবে। আইআইপি জঙ্গীবাদের বা সন্ত্রাসী ঝুঁকির যে সূচক তৈরি করেছে, তা অঙ্ক কষে তৈরি করার বিষয় নয়। সন্ত্রাসবাদ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বৈশ্বিক আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা আর যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় পরাশক্তিগুলোর ভূমিকার ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ জঙ্গীবাদের ঝুঁকিতে নেইÑ এই কথা কেউ বলবে না। এই সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র কক্সবাজার, টেকনাফ আর উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। এই শিবিরগুলোর জন্ম তো মিয়ানমার সরকারের তাদের নাগরিক রোহিঙ্গা উৎখাত কর্মসূচীর কারণে। সেই কর্মসূচী বন্ধ করার জন্য কোন একটি পরাশক্তি অথবা জাতিসংঘ তো কখনও কোন ভূমিকা পালন করে না। এমন অবস্থা ফিলিস্তিনেও। ইরাক, লিবিয়া, মিসর অথবা সিরিয়ায় যদি যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র রফতানি করতে না চাইত তাহলে সে সব দেশ কি জঙ্গীদের অভয়ারণ্য হতো? সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদের জন্ম, বিস্তার এবং তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে অঙ্ক কষে বিভ্রান্তিকর আগাম বার্তা না দিয়ে এ সব সংস্থার উচিত নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে তাদের গবেষণা কার্য পরিচালনা করা। চিহ্নিত করা উচিত কেন বর্তমান বিশ্বে জঙ্গীবাদের এই ব্যাপক বিস্তার। ২২ নবেম্বর, ২০১৪ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
×