ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবিগঞ্জ ও সুন্দরবনের ৪৬ বর্গকিলোমিটার নিরাপদ জোন ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

হবিগঞ্জ ও সুন্দরবনের ৪৬ বর্গকিলোমিটার নিরাপদ জোন ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার॥ এবার দেশে শকুন রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের দুটি এলাকাকে শকুন রক্ষার জন্য নিরাপদ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের হবিগঞ্জে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ও সুন্দরবনের ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রথমবারের মতো শকুনের নিরাপদ জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এসব এলাকায় শকুনের জন্য ক্ষতিকর ডাইক্লোফেনাক নামে ভ্যাকসিন গবাদি পশুর জন্য ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া শকুন রক্ষায় সরকার গরুর দেহে ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করেছে। কেটোপ্রফেন নামে অপর একটি ভ্যাকসিনও সরকার বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিলুপ্তির হাত থেকে এশিয়ার শকুন রক্ষা নিয়ে এক সেমিনারে এসব কথা জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক নেচার কনজারভেশন (আইইউসিএন) ও বন বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। সকাল ১০টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ সেমিনারের উদ্বোধন করেন। অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এক সময় সারাদেশে বাঘের দেখা মিললেও মানুষ বৃদ্ধির কারণে এবং বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এসব এলাকা থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়েছে। অথচ এক সময় বাঘ শিকারের জন্য মেলা বসত। এখন এসব দেখা যায় না। বিভিন্ন কারণে শকুনও এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ব্যবহারের কারণে বিশ্বে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আমরা এর জন্য দায়ী না হলেও বৈশ্বিক শিকার। তিনি বলেন, বনাঞ্চল কমে যাওয়ার কারণে বাঘের মতো শকুনের ওপর প্রভাব পড়ছে। গবাদি পশুর ওপর ক্রিটিক্যাল ওষুধ ব্যবহারের কারণে শকুন রক্ষা হুমকির মুখে পড়ছে। এসব ক্ষতিকর ড্রাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজিবুর রহমান বলেন, টেকসই উন্নয়নে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে পরিবেশের উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষা করতে শকুন রক্ষার কোন বিকল্প নেই। যেসব ওষুধের ব্যবহার শকুনের টিকে থাকার জন্য হুমকি সেসব ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা যেমন কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শ’তে। তেমনি বিভিন্ন কারণে দেশে এখন মোট শকুনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫শ’তে। অথচ সারাদেশেই এক সময় শকুনের অস্তিত্ব ছিল। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী বলেন, সিলেটের হবিগঞ্জে এবং সুন্দরবনের দক্ষিণ ও উত্তর এলাকায় শকুন রক্ষার জন্য একটি নিরাপদ জোন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শকুনের জন্য নিরাপদ জোন ছাড়া শকুন রক্ষার আর কোন পথ নেই। এছাড়া শকুনের জন্য ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। নিরাপদ জোন এলাকায় বসবাসকারীরা যাতে তাদের গবাদিপশুর জন্য কোন ধরনের ডাইক্লোফেনাক ওষুধ ব্যবহার না করে সেদিকে নজর রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে এ বিষয়ে নজরদারি করার জন্য বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নেচার কনজারভেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শকুন রক্ষায় নিরাপদ জোন ঘোষণা বিশ্বে বাংলাদেশেই প্রথম। এসব এলাকায় শকুনের জন্য ক্ষতিকর কোন ওষুধ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েক বছরে এশিয়ায় শকুন আশঙ্কাজনহারে হ্রাস পেয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে এক সময় ৪০ মিলিয়ন শকুনের অস্তিত্ব ছিল। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ হাজারে। বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে শকুনের দুটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। একমাত্র বাংলা শকুনের অস্তিত্ব রয়েছে। এ প্রজাতিটিও হুমকির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কারণে। অনুষ্ঠানে জানানো হয় শকুনের জন্য বিষাক্ত ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ও কেটোপ্রফেন পশু-চিকিৎসায় ব্যবহার করায় শকুন মৃত্যুর প্রধান কারণ। বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশের পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ হলেও কেটোপ্রফেন নিষিদ্ধ হয়নি। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীতেই এর অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এ শকুনের সংখ্যা দশ হাজারের বেশি হবে না। বাংলাদেশে বাংলা শকুন এখন বিরল প্রজাতি। সব মিলিয়ে এদেশে এর সংখ্যা পাঁচ ’র বেশি হবে না। এদেশ থেকে শকুন হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো প্রজননের আবাসস্থলের অভাব।
×