ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওপেনহার্ট সার্জারিতে লাগবে না পুরো বুক চেরা

সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে রোবটে অস্ত্রোপচার

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৪

সলিমুল্লাহ মেডিক্যালে রোবটে অস্ত্রোপচার

নিখিল মানখিন ॥ দেশে নাক, নাক গলার অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে রোবট । সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশী এক চিকিৎসক। তিনি হলেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রাজিবুল হক। শীঘ্রই স্বল্প খরচে ও নিরাপদে রোবটের সাহায্যে নাক, কান, গলার অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি রোবটের মাধ্যমে অপারেশনে দেশের চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলেও তিনি মনে করছেন । ডাঃ রাজিবুল হক জনকণ্ঠকে জানান, উন্নত দেশে বিভিন্ন ধরনের সার্জারি যেমন- জেনারেল, অর্পোপেডিক, হৃদরোগ, মূত্রথলি সার্জারিতে রোবটের ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে কোন কোন সময় ৬ মিলিমিটার পর্যন্ত দেহ ছিদ্র করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু নাক, কান, গলার চিকিৎসায় রোবটের যন্ত্র যখন মানবদেহে ঢোকানো হয় তখন কোন ছিদ্রের প্রয়োজন হয় না। রোবটের হাত বড় ও ৫ মিলিমিটার ডায়ামিটার হওয়ায় খুব সহজেই মুখের ভেতর জায়গা করে নিতে পারে। এমনকি রোবট ৩৬০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে ঘুরতে ও অপারেশন করতে সক্ষম। অন্যান্য অপারেশন থেকে রোবটিক সার্জারির প্রধান দিক হলো সার্জন কোন প্রকার যন্ত্রপাতি সরাসরি রোগীর ওপর ব্যবহার করেন না। রোবটই অপারেশন করে। সার্জন দূর থেকে অপারেশন সাইডের থ্রী ডি ভিউ দেখে রোবটের মাধ্যমে অপারেশন করিয়ে নেন। ডাঃ রাজিবুল হক আরও জানান, মানবদেহে যেসব অপারেশন সরাসরি করা করা কঠিন সেসব অপারেশনের জন্যই রোবটের সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে। রোবট যন্ত্র সেসব জায়গায় সূক্ষ্ম ও সুন্দরভাবে অপারেশন করতে সক্ষম। এছাড়া চিকিৎসক অপারেশন এলাকা থ্রী ডির মাধ্যমে দেখতে পান বলে ক্ষতস্থান সূক্ষ্মভাবে তার চোখে ধরা পড়ে। নাক, কান ও গলার ক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার চিকিৎসাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে তিনি মন্তব্য করেন। জানা গেছে, ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রাজিবুল হক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে রোবটিক সার্জারির ওপর উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তিনি পেনসিলভানিয়া মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ ওয়াইন স্টেইনের অধীনে এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। স্টেইন ২০০৫ সাল থেকে রোবটিক সার্জারির ওপর উচ্চতর গবেষণা করে আসছেন। সার্জারি বিশেষজ্ঞরা জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানা রোগ নির্ণয় ও সংশ্লিষ্ট কাজে আগে থেকেই রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের রোবট উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছেন, যা ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরে যাবতীয় রোগ নির্ণয় এবং অস্ত্রোপচারের কাজও সহজেই করা যাবে। স্নেকবট নামের এ রোবট দিয়ে হৃৎপি-, প্রোস্টেট ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগের অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। ক্যামেরা, কাঁচি, চিমটা এবং নানান ধরনের সেন্সর ছোট্ট এ রোবটগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। তবে ডাক্তারদের হাতেই থাকবে এই স্নেকবট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব। এসব রোবটকে যথাযথভাবে প্রোগ্রাম করে নিলে এরা নিজেরাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্রোপচার সফলভাবেই করতে সমর্থ হবে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বিশেষ ধরনের কাজের জন্য যদি এ ধরনের রোবট বিশেষায়িতভাবে তৈরি করা যায়, তাহলে তা আরও সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। এ ধরনের রোবট আসলে একটি বিশেষ ধরনের টুলস। আর তাই এগুলোকে যথাযথভাবে তৈরি করতে পারলে সঠিক কাজটি করিয়ে নেয়া সম্ভব। স্নেকবট বা একই ধরনের রোবট ব্যবহার করে অত্যন্ত জটিল অস্ত্রোপচার অনায়াসে ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব। এতে চিকিৎসার খরচও অনেক কমে যাবে । আরও ক্ষুদ্রাকৃতির রোবট তেরিতে নিয়োজিত বিজ্ঞানীরা। এসব রোবটের মাথার আকৃতি হবে দশ সেন্টের কয়েনের চাইতেও ক্ষুদ্র। এই ধরনের ক্ষুদ্রাকৃতির রোবট ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার করলে রোগীর শরীরের ওপরও চাপ কম পড়বে এবং সেই সঙ্গে রোগীকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ ওপেনহার্ট সার্জারির কথা বলা যায়। সাধারণত এই অস্ত্রোপচার করতে বুকের পুরো অংশটাই কেটে নিতে হয়। আর রোবট ব্যবহার করে এটি করতে রোবটকে প্রবেশ করানোর উপযোগী একটু অংশ কেটে নিলেই হয়। এ ধরনের অপারেশনে যথাযথভাবে টিউমারের অংশটি কেটে ফেলা হয়। পাশাপাশি এসব রোবটের সাহায্যে ঠিক কোন্ কোন্ নার্ভ অক্ষত রাখতে হবে, সেটাও নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা সহজ। ভবিষ্যতে এসব রোবটের ব্যবহার আরও বাড়বে। কেননা, এসব রোবটের সাহায্যে এমন সব সূক্ষ্ম কাজ করা যায়, যা সাধারণভাবে হাতে করা যায় না। চিকিৎসা ক্ষেত্রের এসব রোবটের আকার ছোট হয়ে এলেও এসব রোবটের সক্ষমতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এসব রোবটের ব্যবহার আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রোবট শুধুমাত্র কেবলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে শীঘ্রই এমন ধরনের রোবট আসছে যেগুলো দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তারবিহীন এসব রোবট তেরি হলে সেগুলো আরও বেশি সহজ ও দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
×