ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শতক হাঁকিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২২ নভেম্বর ২০১৪

শতক হাঁকিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে সাকিব

মিথুন আশরাফ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ চিগুম্বুরার বলটি শটে ঠেলে দিয়ে পপিং পিচে যেতেই শতক হয়ে গেল সাকিব আল হাসানের। ব্যাট মাটিতে নামিয়ে রাখলেন, হাতের গ্লাভসও মাটিতে খুলে রাখলেন; হ্যালমেটও খুলে ব্যাট-গ্লাভসের সঙ্গে রেখে মুশফিককে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর ড্রেসিংরুমের দিকে হাত দিয়ে ব্যাটিংয়ের মতো করে কয়েকবার দেখাতে থাকলেন। সে কী আনন্দ সাকিবের! শাস্তি কমার পর যে ওয়ানডেতে নেমেই শতক করে দেখালেন। ৯৯ বলে ১০ চারে ১০১ রান করে আউট হওয়ার আগে শতকটি আবার এলো চারবছর পর! এ শতকে সাকিব বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেনই না শুধু, ধরাছোঁয়ার বাইরে যেন চলে গেলেন। পাঁচ শতকও কারও নেই। সেখানে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ছয় শতক যে এখন সাকিবেরই। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য জুলাইতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয় সাকিবকে। জিম্বাবুইয়ে সিরিজে খেলানোর জন্য সাকিবের শাস্তি কমানো হয়। টানা তিন টেস্টে জেতা বাংলাদেশ দলের হয়ে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে না পারা ঝাল যেন মেটান জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। ফিরেই শতক করেন। এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্বও দেখান। টেস্ট সিরিজ শেষে যখন শুক্রবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে খেলতে নামেন, প্রথম ম্যাচেই শতক হাঁকান বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। ২০১০ সালের অক্টোবরে যে সর্বশেষ শতক করেছিলেন, চারবছর পর আবার সাকিবের ব্যাট থেকে শতক আসে। এ শতক করে সাকিব ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতকও তুলে নেন। চারবছর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রানের ইনিংস খেলে সাকিব ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে শতক তুলে নিয়েছিলেন। তখনই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাঁচ শতক হয়ে যায় সাকিবের। তার পেছনে আছেন ৪ শতক করে করা শাহরিয়ার নাফীস ও তামিম ইকবাল। সাকিব এ শতক করতে অনেক ভেবেচিন্তে খেলেছেন। দলের বিপর্যয়ের সময় হাল ধরেছেন। ৩১ রানে তামিম, এনামুল, মাহমুদুল্লাহকে হারানোর পর, ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাকিব ব্যাট হাতে নামেন। তখন মনে হচ্ছিল দল বিপাকে পড়ে গেছে। সেখান থেকে আর সামলে নিতে পারবে না। কিন্তু সাকিব বলে কথা। দমে যাওয়ার পাত্র নন। ৭০ রানে মুমিনুল আউট হয়ে গেলেও সাকিব হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে সাকিব এগিয়ে যেতে থাকেন। সপ্তম বলে গিয়ে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান। এক রান করে নিতে থাকেন। উইকেট আঁকড়ে ধরে খেলেন। পরের ২৮ বলে কোন বাউন্ডারিই মারেননি সাকিব! দলকে বাঁচানোর কী ইচ্ছা, এতেই বোঝা যায়। ৫৭ বলে গিয়ে সাকিব অর্ধশতক পূরণ করেন। তখন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭টি অর্ধশতক হয় সাকিবের। এ স্কোর যে শতকে যেতে পারে, তা বোঝাই যাচ্ছিল। শুধু শতকই করেননি সাকিব, দলকেও ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। ৯৫ বলে গিয়ে শতক করেন সাকিব। যেই শতক করেন, তার কী যে আনন্দ লেগেছে; তা শতক উদযাপন দেখেই বোঝা গেছে। দলও ততক্ষণে ২০০ রান অতিক্রম করে ফেলেছে। যিনি এত সুন্দরভাবে সঙ্গ দিলেন সেই মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে দেশের হয়ে রেকর্ড জুটিও গড়লেন সাকিব। যে কোন দলের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি গড়লেন এই দুইজন। সাকিব যখন শতক করেন তার আগেই রেকর্ড জুটি গড়া হয়ে যায়। এরপর যখন শতকের দিকে এগিয়ে গেলেন, ৯৬ রান করতেই চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হয়ে তামিমের ৯৫ রানের পর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড গড়ে ফেললেন সাকিব। আর শতক করে এ স্টেডিয়ামে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে শতক করলেন সাকিব। এর আগে ১১ ম্যাচ খেলে এ স্টেডিয়ামে সাকিবের রান ছিল মাত্র ১৩৮। সেখান থেকে এক লাফে ১২তম ম্যাচে এসে ২৬.৫৫ গড়ে ২৩৯ রান জমা হয়ে গেছে সাকিবের। সাকিব এখন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছেন। ১৩৭ ম্যাচ খেলে ৩৫.৪৫ গড়ে ৬ শতক ও ২৬ অর্ধশতকসহ ৩৯৩৬ রান করেছেন। আর ৬৪ রান হলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪০০০ রানের ক্লাবে প্রবেশ করবেন সাকিব। সাকিব যে ছয়টি শতক করেন এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩৮ ম্যাচ খেলে তৃতীয় শতক করেন। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ১০৪, একই বছর মিরপুরে ১০৫* ও এবার ১০১ রান করেন সাকিব। বাকি তিনটি শতকের মধ্যে ২০০৭ সালে কানাডার বিপক্ষে অপরাজিত ১৩৪, ২০০৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৮ ও ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৬ রান করেন সাকিব। এ অলরাউন্ডারের কাছ থেকে দীর্ঘ চারবছর কোন শতক মিলছিল না। এ সময়ের মধ্যে ১১ অর্ধশতক আসলেও শতক হয়নি। অবশেষে সাকিব শতক করলেন। সেই শতকে বাংলাদেশও চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বেশি ২৮১ রানের স্কোর গড়ল। তা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে তোলা সাকিবের ১০১ রানের অসাধারণ ইনিংসে। এ ইনিংস আবার সাকিবকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে।
×