ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১৪ জঙ্গীর তালিকা হস্তান্তর করল এনআইএ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

১৪ জঙ্গীর তালিকা হস্তান্তর করল এনআইএ

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশে সফররত ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১১ জঙ্গীর তালিকা ও প্রায় ১৫টি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে। ভারতীয় এনআইএ-এর প্রতিনিধি দলটি বর্ধমান খাগড়াগড় কা-ের জঙ্গী তৎপরতার ওপর তৈরি করা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের হাতে জেএমবির জঙ্গীদের যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তারা ভারতে পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী। এসব জঙ্গীর প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও র‌্যাব সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বাংলাদেশের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক করেছে ভারতীয় এনআইএ-এর ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সন্ধ্যায় তারা উত্তরার র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হয়ে জঙ্গী দমনের কৌশল নির্ণয়ে তথ্যবিনিময় করেছেন। এর আগের দিন সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছেন তাঁরা। ভারতের তদন্ত জাতীয় সংস্থা এনআইএ-এর ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বুধবার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে ভারতে অবস্থান জেএমবির জঙ্গীদের মধ্যে যাদের তালিকা দেয়া হয়েছে তারা হচ্ছে ভারতে পুরস্কার ঘোষিত জঙ্গী। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পলাতক ১২ জেএমবির সদস্যকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ৭৭ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে তদন্ত সংস্থা এনআইএ। পলাতক ১২ জঙ্গীই বাংলাদেশের জেএমবির সদস্য। এর মধ্যে ৪ জঙ্গী বাংলাদেশের নাগরিক। পলাতক এসব জঙ্গী হচ্ছে, সাজিদ, নসরুল্লাহ, ইউসুফ শেখ, কওসর ও তালহা শেখ। এর মধ্যে সাজিদ ওরফে শেখ রহমত উল্লাহ ওরফে নারায়ণগঞ্জের মাসুদ রানা ওরফে মাসুম ধরা পড়েছে কলকাতায়। এই পাঁচজনকে ধরিয়ে দিতে পারলে তাদের মাথার পুরস্কার উল্লেখ করা হয় ১০ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরও রয়েছে ৩ জন, যাদের মাথার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এই ৩ জন হচ্ছে, হাবিবুর রহমান শেখ, হাতুড়ে শাহ নূর আলম, আমজাদ আলী শেখ। এ ছাড়া আরও ৪ জনের প্রতিজনের মাথার পুরস্কার ঘোষণা ৩ লাখ টাকা। এই ৪ জন হচ্ছে, বোরহান শেখ, রেজাউল করিম, আবুল কালাম ও জহিরুল শেখ। পলাতক ১২ জনের মধ্যে শাহ নুর আলম অসমের বরপেটা থেকে ফেরার। অপর ১১ জন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভুম, ও বর্ধমান থেকে ফেরার। এর মধ্যে ৪ জন সাজিদ, নসরুল্লাহ, কওসর ও তালহা বাংলাদেশের নাগরিক বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা তৈরির সময়ে বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে জেএমবির সদস্য বাংলাদেশী নাগরিক শাকিল আহমেদ ও সুবাহান ম-ল শেখ। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ওপর ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা জঙ্গী তৎপরতার একটি প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে জঙ্গীরা দুই দেশের সীমান্ত পথে আসা-যাওয়া করে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে এবং তারা দুই দেশের জন্যই হুমকি। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জঙ্গী তৎপরতা, আশ্রয়দাতা, মদদদাতা, অর্থের উৎস ইত্যাদি। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীরা কিভাবে বর্ধমানসহ রাজ্যের বিভিন্নস্থানে সংঘটিত হয়ে গ্রেনেড-বোমা তৈরি করে নাশকতার নীলনক্সার ছক তৈরি করেছে তার বিবরণ রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে কয়েক শ’ কোটি টাকা পাচার হয়েছে তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এনআইএ খুঁজছে সানি, মিজান ও ফারুককেও ॥ ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গী ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারুমিজান এবং ওই ঘটনার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী ফারুক হোসেনকে খুঁজছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাও (এনআইএ)। মঙ্গলবার ঢাকা সফররত এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তালিকা এনআইএ কর্মকর্তারা সোমবারের বৈঠকে দিয়েছেন, তাতে সানি, মিজান ও ফারুকের কথা রয়েছে আর বাংলাদেশের তদন্ত সংস্থাগুলোও তাদের খুঁজছে। বর্ধমানের ঘটনায় এনআইয়ের হাতে গ্রেফতার শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ যে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মাসুম সে বিষয়েও পুলিশ ‘অনেকটা নিশ্চিত’ হতে পেরেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন তিনি। তবে বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য। এই তথ্যের সঙ্গে এনআইয়ের তথ্যের অনেক গরমিল রয়েছে। মাথার পুরষ্কার বাড়ল ॥ জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) ও মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারুমিজানের সন্ধান এখনও মেলেনি। কেউ তাদের ধরিয়ে দিলে অথবা সন্ধান দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ বিভাগ। এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিন জঙ্গী ছিনতাই হওয়ার পর তাদের প্রত্যেকের জন্য দুই লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ সদর দফতর। রবিবার সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজনভ্যানে বোমা মেরে ও গুলি করে দ-প্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন, রাকিব ও মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয়া হয়। এই তিনজনের মধ্যে প্রথম দুইজন মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আর মিজান যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি। ওই হামলায় প্রিজনভ্যানে থাকা পুলিশ কনস্টেবল আতিকুল ইসলাম (৩০) নিহত হন, আহত হন আরও দুই পুলিশ সদস্য। ত্রিশাল থেকে পালানোর সময় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাকিবকে আটক করে পুলিশে দেয় জনতা। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য দাড়ি কামিয়ে ফেললেও তার গলা, হাতে ও পায়ে ডা-াবেড়ির দাগ দেখে পুলিশ তাকে শনাক্ত করে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রাকিব। বোমা মিজান ভারতে ॥ ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যান থেকে ছিনতাই হওয়া জেএমবি জঙ্গী মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান (৩৫) বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। মিজান মাসখানেক আগেও কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাটে অবস্থান করছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির শূরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয়া হয়। পালানোর পথে ওইদিনই মির্জাপুরে গ্রেফতার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাকিব। পলাতক জঙ্গীদের সীমান্ত পার হওয়া ঠেকাতে সতর্কতা জারি করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এনআইএ কর্মকর্তারা বলেছেন ॥ ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির বিরাট এক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে বোমা তৈরি হচ্ছে। মিজান জেএমবির তরুণ জঙ্গীদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেনÑ এমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানী জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়েবার কুখ্যাত জঙ্গী নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈয়েবার ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং ভারতে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা নতুন করে মিজানের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছেন। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে বেলা আড়াইটা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই বৈঠকে এনআইএ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থার মহাপরিচালক শারদ কুমার। বাংলাদেশের ছয় সদস্যের কমিটির নেতৃত্বে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সোমবার ঢাকা পৌঁছানোর পর এনআইএর প্রতিনিধি দলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি পরিচিতি সভায় অংশ নেয়। তারা বাংলাদেশের ছয় সদস্যের কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বর্ধমানের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনের নামের তালিকা হস্তান্তর করেন বলে জানা গেছে। কতজন জঙ্গীর নাম উল্লেখ করেছেন ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, অল্প কিছু, অল্প কয়েকজনের নাম দিয়েছেন তারা। এসব জঙ্গী কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, তারা বাংলাদেশী কি নাÑ এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোন তথ্য দেননি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এক জঙ্গীর শত নাম থাকে। এ নামগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। আসলে তারা কোন দেশের নাগরিক, তা তদন্ত শেষে জানা যাবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের তদন্ত সংস্থা এনআইএ জঙ্গীদের কয়েকজনের নামের তালিকা এবং ১০-১৫টি মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন ভারতে গিয়ে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, দোকানদারিসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সংস্থাগুলো তাদের চেনে কি-না, কিংবা তাদের সম্পর্কে জানে কি-না, সেটাই জানতে চেয়েছেন তারা। সন্দেহভাজন জঙ্গীদের কয়েকজনের আত্মীয়স্বজনের নাম-পরিচয়ও পরীক্ষার জন্য বলেছেন এনআইএ কর্মকর্তারা। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর এনআইএ তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরপরই ওই ঘটনায় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা বলেন এ সংস্থার কর্মকর্তারা। বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইএ। এর মধ্যে শেখ রহতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশীও রয়েছে বলে তাদের দাবি। সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গী নেটওয়ার্কের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে এনআইএ। গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার একটি ছকও কষছে জঙ্গীরা। এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং ঢাকা সফরে আসেন এনআইএ প্রতিনিধি দলটি। এনআইএ’র মহাপরিচালক শারদ কুমারের সঙ্গে এই প্রতিনিধি দলে আছেন সংস্থার উপ-মহাপরিদর্শক সজীব ফরিদ, আইজি (তদন্ত) সঞ্জীব কুমার সিং ও ডিআইজি (তদন্ত) অনুরাগ তানখা। বাংলাদেশের ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক সামছুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) প্রধান আকবর হোসেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান জাবেদ পাটোয়ারি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোখলেসুর রহমান, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান এনআইএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি সভার পর বলেছিলেন, ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশ- দুই দেশেই দুষ্কৃতীরা রয়েছে। এদের খুঁজে বের করা দরকার। তাদের এই আবেদন উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে আমরা মনে করি। ভারত ও বাংলাদেশের ভূখ- দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করতে না দেয়ার বিষয়ে দুই দেশই একমত বলেও তিনি মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র সচিব। র‌্যাবের সঙ্গে বৈঠক ॥ ভারতের এনআইএ-এর ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তরার র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন। র‌্যাবের ডিজি মোঃ মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে র‌্যাবের এডিজি, সকল পরিচালকগণ ও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এনআইএ বৈঠকে জঙ্গীদের তালিকা দিয়েছেন। একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন যাতে সুপারিশও আছে। জঙ্গীবাদ সম্পর্কে জনসেচতনা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারা জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা, মদদদাতা এসব জানতে চেয়েছেন এনআইএ’র কর্মকর্তারা। বিএনপি-জামায়াতের নেত্বতাধীন জোট সরকারের সময়ে সারাদেশে একযোগে জেএমবি যে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালিয়েছিল তার মধ্যে এখনও হামলাকারী কোন জঙ্গী গ্রেফতারের বাইরে আছে কিনা সেটাও জানতে চেয়েছেন তারা। কোন সরকারের সময়ে জঙ্গী তৎপরতা কেমন ছিল এবং এতদিন জঙ্গীরা কিভাবে এত তৎপরতা চালিয়েছে সেই বিষয়েও জানতে চেয়েছেন এনআইএ কর্মকর্তারা। মিয়ানমারের জঙ্গী গ্রেফতার ॥ বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের কা-ে হায়দ্রাবাদে গ্রেফতার হয়েছে মিয়ানমারের এক নাগরিক জঙ্গী। হায়দ্রাবাদ থেকে মিয়ানমারের এক নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃত রোহিঙ্গা যুবকের নাম খালিদ ওরফে খালিদ মোহাম্মদ। ওই যুবক রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সদস্য। এই সংগঠনটির সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, ২৮ বছর বয়সী খালিদ একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় তার জঙ্গী ক্যাম্প রয়েছে। এনআইএ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিয়ানমারের উগ্রপন্থী সংগঠন তেহেরিক-ই-আজাদি আরাকানের হয়ে পাকিস্তানের তেহেরিকেই তালিবানের কাছ থেকে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন খালিদ। ভুয়া নাম-পরিচয়ে তিনি হায়দ্রাবাদের ওই হোটেলে উঠেছিলেন। তার সঙ্গে বৈধ কাগজপত্রও ছিল না। সোমবার বিকেলে হায়দ্রাবাদের একটি হোটেল থেকে খালিদকে গ্রেফতার করে এনআইএ। তার কাছে এমন কিছু ভিডিও পাওয়া গেছে, যাতে জঙ্গী প্রশিক্ষণের বিষয় এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গী সংগঠন আইএসের কার্যক্রম, বোমা তৈরি ও বিষের গুণাগুণ নিয়ে লেখা কিছু বইও তার কাছে পাওয়া গেছে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয় এনআইএ। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে এনআইএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায়।
×