ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গত বছর বিশ্বে বলি ১৮ হাজার

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে ॥ নিহতের সংখ্যা ৫ গুণ বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে ॥ নিহতের সংখ্যা ৫ গুণ বৃদ্ধি

বিশ্বে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহতদের সংখ্যা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ১৮ হাজার লোক নিহত হওয়ার ঘটনাগুলোর অধিকাংশের জন্য ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম তালেবান ও আল কায়েদাই দায়ী। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ৯/১১ থেকে এ কারণে নিহতদের সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যত্র মার্কিন নেতৃত্বে সন্ত্রাস দমন চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও নিহতদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স ২০১৪ শীর্ষক এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। সিডনি ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক্স এ্যান্ড পিসের তৈরি করা ঐ রিপোর্টে ২০১৩ সালে প্রায় ১৮ হাজার লোক সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এভাবে নিহতদের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ বেশি। চারটি জঙ্গী দল অধিকাংশ হত্যাকা-ের জন্য দায়ী। সেগুলো হলো ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট (আইএস), নাইজিরিয়ার বোকো হারাম, আফগানিস্তানের তালেবান এবং বিশ্বে বিভিন্ন অংশে সক্রিয় আল কায়েদা। ইরাকই সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এতে ২০০০ এবং ২০১৩-এর মধ্যবর্তী সময়ের সন্ত্রাসবাদের প্রবণতা নিয়ে অনুসন্ধান করা হয় এবং এতে মার্কিন ভিত্তিক গ্লোবাল টেররিজম ডাটাবেজকে কাজে লাগানো হয়। সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহতদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ৯/১১-এর পর পাশ্চাত্যের অনুসৃত সন্ত্রাস দমন কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণ করে, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে ড্রোন হামলা চালায় এবং বিশ্বজুড়ে অন্য বাহিনীকে দিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো হয়। ২০০১ সালে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার ঘটনার পর বুশ প্রশাসন সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই শুরু করেছিল। কিন্তু এ লড়াই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল বা হ্রাস করতে ব্যর্থ হয়, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ এবং অন্যত্র অভিযান চালাতে ৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতদের সংখ্যা গত ১৪ বছরে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০০০ সালে ৩,৩৬১ থেকে ২০১২ সালে ১১,১৩৩-এ এবং ২০১৩ সালে ১৭,৯৫৮ তে দাঁড়ায়। ২০১৩ সালে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহতের ৮০ ভাগ পাঁচটি দেশ ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নাইজিরিয়া ও সিরিয়াতে মারা যায়। কেবল ইরাকেই ৬ হাজারেরও বেশি প্রাণ হারায়। ২০০০ সাল থেকে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত মোট ১,০৭,০০০ জানের শতকরা ৫ ভাগের মৃত্যু অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) অন্তর্গত উন্নত দেশগুলোতে ঘটেছিল। অধিকাংশ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ঐ সংস্থার সদস্য। কয়েকটি ভয়াবহ হামলা এসব দেশেই ঘটেছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হামলা, ২০০৫-এ লন্ডনে সংঘটিত বোমা হামলা এবং ২০১২ সালে নরওয়েতে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। সন্ত্রাসবাদ বেশি সংখ্যায় লোকজনের নিহত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ক্রমশ ছড়িয়েও পড়ছে। ২০১৩ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে ৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছিল এমন দেশের সংখ্যা ২৪-এ দাঁড়ায়। ২০০৮ সালে এরূপ দেশের সংখ্যা ছিল ১৯। রিপোর্টে ক্রমবর্ধিত সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এমন ১৩টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়, এ্যাঙ্গোলা, বাংলাদেশ, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, আইভরি কোস্ট, ইথিওপিয়া, ইরান, ইসরাইল, মালি, মেক্সিকো, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও উগান্ডা। রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৩ সালে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের শতকরা ৬৬ ভাগের মৃত্যুর জন্য চারটি প্রধান দলই দায়ী। তাদের মধ্যে তালেবান যোদ্ধাদের সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে ৬০ হাজারের মধ্যে, ইসলামিক স্টেটের ২০ হাজার, আল-কায়েদার ৩ হাজার ৭শ’ থেকে ১৯ হাজারের মধ্যে এবং বোকো হারামের ৫শ’ থেকে ৯ হাজারের মধ্যে বলে ধারণা করা হয়। এতে বলা হয়, চারটি দলের সবগুলোই ইসলাম সম্পর্কিত ওয়াহাবী চরমপন্থী মতবাদকে কাজে লাগিয়ে থাকে। রিপোর্টে বলা হয়, ধর্মীয় চরমপন্থীদের উত্থান রোধ করার জন্য ইসলামের ভেতরকার বিশ্বাসযোগ্য শক্তিগুলোর উচিত মধ্যপন্থী সুন্নী মতবাদের প্রসার ঘটানো। তবে বাইরের প্রভাবশালী দেশগুলোকে নয়, মধ্যপন্থী সুন্নী দেশগুলোকেই এতে নেতৃত্ব দিতে হবে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ধর্মীয় মতবাদই সন্ত্রাসবাদের একমাত্র চালিকাশক্তি নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই রাজনৈতিক বা জাতীয়বাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ফলে সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু হওয়ার আরও বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।
×