ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুধুই পোস্টার চাইল্ড!

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

শুধুই পোস্টার চাইল্ড!

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতির বিচারে বিশ্বব্যাপী গবেষকগণ বাংলাদেশকে ‘পোস্টার চাইল্ড’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সুবিশাল অংশ এক সময় বনবনানীতে পরিপূর্ণ ছিল। আস্তে আস্তে বনাঞ্চলের পরিধি ছোট হয়ে আসছে। মানুষ ব্যাপকভাবে গাছ নিধন করে নির্বিচারে বন জঙ্গল উজাড় করছে। সে সব জায়গায় গড়ে উঠছে বিভিন্ন কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট আর বসতবাড়ি। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে আর কার্বনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। পরিণামে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সিডর, সাইক্লোনের মতো আবহাওয়ার তা-ব। পোস্টার চাইল্ড হিসেবে আখ্যায়িত বাংলাদেশের ক্ষতি ব্যাপক হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। ক্ষতি যে শুধু ভবিষ্যতেই হবে তাই নয়, এরই মধ্যে বহু ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বেশ কিছুকাল ধরে বাংলাদেশের জলবায়ুতে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। কখনও আগাম বর্ষা, আগাম বন্যা, অতিবৃষ্টি, কখনও প্রচন্ড খরা। কোন বছর তীব্র দাবদাহ, কোন বছর তীব্র শীত। আর ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগও প্রায়ই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কখনও জলোচ্ছ্বাস, কখনও ঘূর্ণিঝড়, কখনও আইলা, কখনও সিডর, কখনও নার্গিস। এসবের ফলে ঝড়, ঝঞ্ঝা, সাগরের প্রবল জোয়ার, অকাল বর্ষণ ইত্যাদি কারণে ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে ইতিমধ্যেই পড়েছে বাংলাদেশ, যার ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। এই দুর্যোগে মানুষ হারাচ্ছে বাস্তুভিটা, নষ্ট হচ্ছে জমি, প্লাবিত হচ্ছে লবণাক্ত জল। মানুষ হয়ে পড়ছে শরণার্থী। সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উচ্চতা এখনই বাড়ছে। এমন বাড়তে থাকলে একদিন উপকূলের আরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে। নষ্ট হবে সবুজ ও বহু ফসলি জমি, ডুবে যাবে বহু গ্রামজনপদ। প্রভাব পড়বে কৃষিতে, সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে। দেশের নদ-নদী ভাঙ্গছে ব্যাপকভাবে। মানুষ হচ্ছে গৃহহারা। ফলে দলে দলে লোক আসছে শহরে আশ্রয়ের আশায়, কাজের আশায়, এই ধারা শুধু অব্যাহতই থাকবে না, বৃদ্ধি পাবে বলে সবার আশঙ্কা। সেজন্যই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির ব্যাপারে সহায়তার ন্যায্য অধিকারী। সরকার এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের দাবি উপস্থাপন করছে আরও জোরালোভাবে। সম্প্রতি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-২০ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন বিশ্ব নেতারা। রবিবার অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের শেষ দিনে নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক কর্মসূচী প্রণয়নের পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির দিক মোকাবেলায় ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে’ তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সব দেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জাপান এই ফান্ডে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করে। বিষয়টির মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ুর বিরূপ ক্ষতি মোকাবেলায় যথেষ্ট সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচের ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট রিক্স ইনডেক্স’ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মহাবিপর্যয় রোধে আমাদের সচেতন থেকে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করতে হবে এবং পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, বন-জঙ্গল সুরক্ষাসহ সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রেও সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ মনোযোগী হতে হবে। জলবায়ুর ঝুঁকি কমাতে পরিবেশবিনাশী কর্মকা- সর্বাগ্রে বন্ধ করা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করার জন্য সামাজিক আন্দোলনসহ গণসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন ।
×