ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইটওয়াশ

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

হোয়াইটওয়াশ

অবশেষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। রবিবার তৃতীয় টেস্টের ৮৫তম ওভারে জিম্বাবুইয়ের এম শাংগুয়েকে আউট করার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দর্শকরা আনন্দে ফেটে পড়ে। এটা ছিল বাংলাদেশের সপ্তম টেস্ট জয়। এই বিজয় অবিস্মরণীয়। ৩-০ তে এই প্রথম ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় করল বাংলাদেশ। মুহূর্তেই চট্টগ্রামসহ সারাদেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠল। এটা সবসময়ই দেখা গেছে, ক্রিকেটে যতবারই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ ততবারই ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সারাদেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আনন্দের বন্যায় ভেসে গেছে। ক্রিকেট যে আমাদের ঐক্য ও সংহতির অন্যতম প্রতীক এ কথা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। আর এবারের বিজয়ের তো কোন তুলনা হয় না। যেন অনেকদিনের খরার পর বৃষ্টি এসেছে। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ নিমিষেই ভুলিয়ে দিয়েছে দীর্ঘ ১০ মাসের পরাজয়, বঞ্চনা ও হতাশা। ২০১৪ সালের শেষপ্রান্তে এসে এই ৩-০ সিরিজ জয় দেশকে আগামীতে দীর্ঘকাল প্রেরণা জোগাবে। মুশফিক, সাকিব, তামিম, মুমিনুল, তাইজুল ও জুবায়েরদের নৈপুণ্য সারাবিশ্বে জাতির সম্মান ও গৌরব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট জগতে বাংলাদেশ এখন আর কারও করুণার পাত্র নয়। এবারের বিজয়ের মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের র‌্যাঙ্কিংয়ে নয় নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আমাদের রেটিং নম্বর এখন ৩২। দশ নম্বরে নেমে যাওয়া জিম্বাবুইয়ের রেটিং নম্বর এখন ১৮। এখন থেকে টেস্ট ক্রিকেট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠে আসার চেষ্টাই হতে হবে আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। চট্টগ্রামে শেষ টেস্টের পঞ্চম দিন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৯ উইকেট। আগের দিন হ্যামিলটন মাসাকাদজা ও সিকানদার রাজা জুটিতে যোগ হয়েছিল ৬৭ রান। রবিবার ৯৩ রানে এ দু’জনের জুটি ভাঙতেই বাংলাদেশের সামনে ৩-০ সিরিজ জয়ের পথ খুলে যায়। বাকিটা সময় অনেকটা একতরফা আধিপত্য ছিল বাংলাদেশের বোলারদের। জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংস ৩৭৪ রানে থেমে যেতেই চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে যায় লাল-সবুজের বিজয় উৎসব। জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশের মধ্য দিয়ে অর্জিত এ বিজয়ে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেতে বাংলাদেশের সময় লেগেছে ১৪ বছর। একমাত্র ইংল্যান্ডের লেগেছে এর চেয়ে কম সময়; তাদের লেগেছে ৯ বছর। এছাড়া অন্য সব দেশের লেগেছে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সময়। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশ বিজয় অর্জনে শ্রীলঙ্কার লেগেছে ১৯ বছর, পাকিস্তানের ৩০ বছর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৪ বছর, অস্ট্রেলিয়ার ৪৩ বছর ও ভারতের ৬১ বছর। তবে এসব পরিসংখ্যান দেখে খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। নতুন উদ্যমে ক্রিকেটের আরও বেশি উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক যে অবিস্মরণীয় সাফল্য পেয়েছেন তা তাকে আগামীতে ধরে রাখতে হবে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩-০ তে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রমুখ। আমরাও এই স্মরণীয় জয়ের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে তাঁদের আরও সাফল্য কামনা করি।
×