ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকিং-এ শক্ত নিয়ম কঠোর বাস্তবায়ন দরকার

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

ব্যাংকিং-এ শক্ত নিয়ম কঠোর বাস্তবায়ন দরকার

১০ নবেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতা।’ এবারের স্মারক বক্তৃতাটি দেন বিখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ প্রফেসর অমিয় বাগচি। এর আয়োজক যথারীতি ব্যাংকিং খাতের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)’ যারা দামী একটা ডিগ্রী ‘এমবিএম’ও দেয়। এই বক্তৃতা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান এবং এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ ড. নুরুল ইসলাম। বলা যায় স্মারক বক্তৃতাটি একটি বার্ষিক নিয়মিত ঘটনা। প্রতি বছর বিখ্যাত ব্যক্তিগণ ব্যাংকিং খাতের ওপর বক্তৃতা দেন। বিষয় সুনির্দিষ্ট : ‘ইথিকস ইন ব্যাংকিং।’ ‘ইথিকস’-এর বাংলা করা যায় সম্ভবত ‘নৈতিকতা।’ ব্যাংকিং-এ নৈতিকতা বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বক্তাগণ অনেক সমসাময়িক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন, যা আমাদের জন্য অবশ্যকরণীয় হয়ে ওঠে। যেমন কয়েক বছর আগে ‘নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতা’ দিতে এসে ভারতের ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গবর্নর জালান সাহেব বলেছিলেন, বিশ্বায়িত ইউনিফরম ব্যাংকিং নীতিমালা কোন কাজের নয়। যেমন পুঁজি, ঋণের শ্রেণীবিন্যাসকরণ, প্রভিশনিং, সম্পদের মূল্যায়ন, ঝুঁকি নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একই নীতিমালা অনুসরণ করে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের জন্য। একেকটি দেশ একেকভাবে বড় হচ্ছে। তার উন্নয়ন কার্যক্রম, উন্নয়ন গতি, ব্যবসায়িক বৈশিষ্ট্য, লোকজ সংস্কৃতি, ব্যবসায়িক সংস্কৃতি ইত্যাদিও ভিন্ন ভিন্ন। এমতাবস্থায় সব দেশের ব্যাংকের জন্য একই নিয়ম-নীতি অনুসরণ শেষ অবধি ফল দেবে না। জালান সাহেবের পর ২০১৪ সালে স্মারক বক্তৃতা দিতে এসে প্রফেসর বাগচি ভিন্নভাবে একটা খুবই অনুধাবনযোগ্য কথা বললেন। ২০০৭ সালের দিকে মার্কিন অর্থনীতিতে ধস নামে। ধসটি নামায় ব্যাংকাররা। কিভাবে? বাজার অর্থনীতির নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক খাতের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকগুলো সেবামূলক কাজ থেকে হাত গুটিয়ে নেয়। এর নাম ‘ব্যাংকিং ডিরেগুলেশন।’ এর পরিণতিই হলো মার্কিন অর্থনীতির ধস। প্রফেসর বাগচি বলেন, ব্যাংকগুলো ফাটকা ব্যবসায় মেতে ওঠে। এর জন্য যে সমস্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রধান নির্বাহী) দায়ী তাদের বিচার হয়নি। হয়েছে যারা ফাটকায় অংশগ্রহণ করেছে। এর থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রফেসর বাগচি ব্যাংকারদের বলেছেন শেয়ার ব্যবসা থেকে দূরে থাকতে। নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি বলছেন দুটো কথা। প্রথমত, ব্যাংকারদের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করার ক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ ‘ডিসক্রিশন’ ব্যবহার করার ক্ষমতা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা করা এবং ঋণ বিতরণে তার ওপর বিধিনিষেধ থাকতে হবে। এসব বিধিনিষেধ আরোপ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রফেসর বাগচি চীনের উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করেন। চীন রফতানির ওপর নির্ভর করেছে। কিন্তু পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারকে সুরক্ষা দিয়েছে। ফলে বড় বড় কোম্পানির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়নের জন্য চীন বৈদেশিক মুদ্রাসহ ঋণ বণ্টনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। প্রফেসর বাগচি বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবসায় শক্ত ‘রেগুলেটরি কাঠামো’ থাকা দরকার। এবং এই কাঠামোটি রক্ষার যথাযথ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকাও দরকার, যাতে ধনী ব্যক্তিরা ‘সিদ্ধান্ত’ কিনে নিতে পারে। এদিকে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রফেসর নুরুল ইসলাম বলেন, স্টক মার্কেটকে উৎসাহিত করার কোন কারণ দেখি না। বরং তাঁর মতে, বাংলাদেশের উচিত ‘নিয়ন্ত্রিত ও শক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা’ গড়ে তোলা। জার্মানি ও ফ্রান্সের শিল্পবিপ্লবকালীন অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সে সব দেশের উন্নয়ন হয়েছে ব্যাংক ঋণ দিয়ে, স্টক মার্কেট দিয়ে নয়। নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতার বক্তা প্রফেসর বাগচি ও প্রধান অতিথি প্রফেসর নুরুল ইসলামের অনেক বক্তব্য থেকে আমি আজকের আলোচনার জন্য কয়েকটা ইস্যু বেছে নিতে চাই। প্রথমেই ‘ব্যাংকিং ডিরেগুলেশন’ অর্থাৎ ব্যাংকিং থেকে রেগুলেশন তুলে নেয়া। এই কথা বলে ১৯৮২ সালের দিকে সরকারী ব্যাংক বেসরকারী করা হয়। বেসরকারী খাতে নতুন ব্যাংক দেয়া হয়। সুদ নির্ধারণের ভার ব্যাংকের ওপর ছাড়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বহু নিয়মে শিথিলতা আনা হয়। কিন্তু ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল ব্যাংকিং অর্ডিন্যান্স-১৯৬২ দ্বারা, যা ছিল একটা অকেজো আইন। ১৯৮২-৯০ এই আট বছরেই নতুন নতুন বেসরকারী ব্যাংকে অনিয়ম, বড় বড় অনিয়ম ধরা পড়ে। মূলত নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই। অপ্রতুল আইন, অপ্রতুল নিয়ম-বিধির ফাঁকে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সেই পুরনো ইতিহাসে আমি যাব না। তৈরি হয় নতুন আইন ‘ব্যাংক কোম্পানি এ্যাক্ট-১৯৯১।’ নতুন নতুন দফা যোগ করে ব্যাংকিং কোম্পানিজ অর্ডিন্যান্স-১৯৬২’কে আধুনিক করা হয়। কিন্তু এর ভেতরে ভবিষ্যতের সর্বনাশের বীজ বপন করে রাখা হয়। এতে আইন করা হয় বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আমানতের দশ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। লক্ষণীয় ‘আমানতের দশ শতাংশ’ ‘পুঁজির দশ শতাংশ’ নয়। এর ফল কি হয়েছে সবাই জানি। ২০০৯-১০ সালের শেয়ার ধসের অন্যতম প্রধান কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের শেয়ার ব্যবসায় অংশগ্রহণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদাসীনতা। তারপর অবশ্য শেয়ার ব্যবসা ব্যাংক ব্যবসা থেকে আলাদা করা হয়। মজা হচ্ছে, আজকে অর্থনীতিবিদরা যেভাবে প্রকাশ্যে এবং উচ্চকণ্ঠে শেয়ার ব্যবসার বিরোধিতা করছেন তা আগে করলে লাখ লাখ লোক ফতুর হতো না, ব্যাংকগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। বলতেই হয়, অর্থনীতিবিদরা অতীত আলোচনা ভালই করেন, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে খুব ভাল পরামর্শ সচরাচর দিতে পারেন না। ব্যাংকিং রেগুলেশনের কথা উঠলে সেখানেও রেগুলেটরদের বুদ্ধিহীনতার প্রচুর সাক্ষ্য পাওয়া যায়। যেমন ব্যাংকের পুঁজি। আজকের দিনে ব্যাংকের পুঁজি কত হবে তা নির্ভর করে খারাপ ঋণের ওপর। খারাপ ঋণ যত বেশি পুঁজি লাগবে তত বেশি। অর্থাৎ সম্পদের সঙ্গে দায়ের তুলনা যা যুক্তিসঙ্গত। অথচ ১৯৬২ থেকে ১৯৯১ সাল এই ২৯ বছর পুঁজির সঙ্গে সম্পর্ক দায়ের অর্থাৎ আমানতের। তখন আমানতের ছয় শতাংশ পুঁজি রাখা হতো। এটি ছিল ভুল। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, রেগুলেটরদের ভুলের কারণে ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অতীতে। তবু শক্ত রেগুলেশনের পক্ষে আমি। প্রফেসর বাগচি ও প্রফেসর নুরুল ইসলামের সঙ্গে একমত হয়ে বলতে চাই শক্ত, পোক্ত ও ভাইব্র্যান্ট ব্যাংকিং খাত করতে হলে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘দিগম্বর’ হলে চলবে না। দরকার শক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। কিন্তু আমাদের দেশে এই কাজটি নানা কারণে বিঘিœত হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি এ্যাক্ট ১৯৯১-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আমাদের সংসদ অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত সেসব ক্ষমতাও তারা ব্যবহার করতে পারে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নামীয় একটা বিভাগ নানা ছলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক ক্ষমতা খর্ব করে রাখছে। এটা কাম্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে করতে হবে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই দিকটির প্রতি সরকারের নজর দেয়া দরকার বলে মনে করি। মনে রাখা দরকার, দেশের সকল ব্যাংক এখন ‘পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।’ এদের মালিক হয় বেসরকারী খাতের ব্যক্তিগর্ব, না হয় সরকার। এতে কিছু আসে যায় না। এসব চলবে ‘কোম্পানিজ এ্যাক্ট-১৯৯৪’ দ্বারা। এর অধীনে ‘মেমোরেন্ডাম অব এ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘আর্টিকেলস অব এ্যাসোসিয়েশন’ তৈরি করা আছে। ওই বিধি মোতাবেক, আইন মোতাবেক দেশের সকল ব্যাংক চলবে। সরকারের ব্যাংক বলে ভিন্ন আইনে চলবেÑতা হয় না। কারণ ‘আর্টিকেলস অব এ্যাসোসিয়েশ’ ইত্যাদি সরকারেরই তৈরি সরকারী ব্যাংকের বেলায়। এটা হচ্ছে কোম্পানি কিভাবে চলবে তার কথা। আর ব্যাংকিং কোম্পানি হিসেবে প্রত্যেকটি ব্যাংককে মানতে হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১। এর তদারকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এই জায়গাটাতে সরকারের কিছু করার নেই। আশা করি সরকার এটা বুঝবে। আর বুঝলেই শক্ত ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলা সম্ভব। প্রফেসর অমিয় কুমার বাগচি স্বনামধন্য ব্যক্তি। প্রফেসর নুরুল ইসলাও স্বনামধন্য ব্যক্তি। দু’জনই বলছেন শেয়ারবাজার নয়, ব্যাংক ঋণকেই উন্নয়নের চাবিকাঠি করতে হবে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি ব্যাংকগুলোকেই সরবরাহ করতে হবে। এক সময় এ কথা বলা হতো না। কারণ আজকের দিনের ব্যাংক সবই ‘বাণিজ্যিক ব্যাংক।’ নামে কৃষি ব্যাংক আছে, উন্নয়ন ব্যাংক আছে (বিকেবি, রাকাব, বিডিবিএল ইত্যাদি)। কিন্তু এরা সবাই এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতোই কাজ করে। নাম থেকেই বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাজ কি তা বোঝা যায়। এক সময় এরা শুধু ‘ট্রেড ফিন্যান্সিং’ই করত। দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিত না। পরে তারা কিছু কিছু দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে শুরু করে, যা দরকার শিল্পায়নের জন্য। এখন অবশ্য দিন বদলেছে। এমন দিন ছিল যখন ব্যাংকের আমানত ছিল সব স্বল্পমেয়াদী। স্বল্পমেয়াদী আমানত দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়া যেত না। এখন সিংহভাগ আমানত দীর্ঘমেয়াদী (টাইম ডিপোজিট)। দিন দিনই তা বাড়ছে। এটা আমানতকারীদের শক্তি-সামর্থ্যরে কথাই জানান দেয়। তার মানে এই ‘টাইম ডিপোজিটের’ মালিকরা দীর্ঘ সময় ব্যাংকে টাকা রাখবে, তুলবে না সহসা। এই শক্তির ওপর ভরসা করে ব্যাংকগুলো এখন দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিতে পারে, দিচ্ছেও। আজকের যে বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশে শত শত, হাজার হাজার ছোট-বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, কাজ করছে, হাজার হাজার পোশাক কারখানা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পরিমাণ রফতানি করছেÑ এসবই কিন্তু ব্যাংক ঋণে তৈরি হয়েছে। লাখ লাখ লোক এসবে কাজ করছে। এর কৃতিত্ব ব্যাংক ও ব্যাংকারদের দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা তো আছেই। তবে এ কথাও সত্য দশটা কাজ করলে একটা ভুল হতেই পারে। একটা ভুলকেই আমরা বড় করে দেখি। ‘নৈতিকতা’কে বড় করে সামনে নিয়ে আসি। ‘ইথিকস’ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে বলে প্রচার করি, বেশি করে বলি। আমি ‘নৈতিকতা’কে কাজের সুবিধার্থে, বাস্তবতার আলোকে ‘নীতি’র মধ্যে সীমিত করছি। বলতে চাইছি ব্যাংকিং-এ নিয়ম-নীতি ও আইন শক্তভাবে প্রণয়ন করা দরকার। তারচেয়ে বেশি দরকার তার কঠোর বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ। যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শত শত কোটি টাকা জালিয়াতির মতো মারাত্মক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত তার বিচার যদি হয় ‘তিনি দু’বছর এমডি হতে পারবেন না’ তাহলে ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন হবে। বিশেষ করে যখন এক লাখ টাকা ‘ক্যাশ চুরির’ জন্য ব্যাংক ক্যাশিয়ারের চাকরি যায়। লেখক : সাবেক প্রফেসর, বিআইবিএম
×