ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদক সমীপে

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

সম্পাদক সমীপে

আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বরেন্দ্র অঞ্চল। এ এলাকায় দিনে দিনে দ্রুত ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর প্রধানতম কারণ কৃষিতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক ব্যবহার। অন্যদিকে এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানির ধারণক্ষমতা হ্রাস পাওয়া অর্থাৎ নদ নদীর তলদেশে ভরে ওঠা, নদী হারিয়ে যাওয়া, দখল, নদী ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত করাও অন্যতম। এছাড়াও ভূউপরিস্থ পানির আঁধার খাল, বিল, পুকুর হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত ঘটানোর জন্য বড় বড় বৃক্ষ, ছোটখাটো জঙ্গল, ঝোপঝাড় হারিয়ে যাচ্ছে। এসব এলাকায় এখন ভূগর্ভস্থ পানি পেতে ১৫/১৬ ফুট গর্ত করে এরপর মেশিনের সাহায্যে পানি প্রাপ্তির নিরন্তর চেষ্টা করতে হয়। বিশেষজ্ঞের ধারণা যে ২০৯০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ৪০ শতাংশ ফসলী জমি বিলীন হওয়ার সম্ভাবনাসহ মাটি এবং পানির লবণাক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছবে যে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন লবণ সহিষ্ণু কৃষি বীজসমূহ এই মাত্রা সইতে পারবে না বলে ধারণা। সুন্দরবনসহ জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে। অধিকহারে সংগঠিত জোয়ার, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে। এই উভয় প্রান্তের সমস্যার জন্য মূলত দায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত দ্রুত চাহিদা বৃদ্ধি ও মোকাবেলার চেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদী সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে ও বাস্তবায়নের সমস্যা, অসচেতনতা মূলত এর মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে আমাদের দেশের মাঝখানে অর্থাৎ ঢাকা শহরে বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা সাময়িক হলেও নগরজীবনে সমস্যা বিরাট হচ্ছে দিন দিন। এটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নদী খাল জলাশয় দখল, ড্রেনেজ ব্যবস্থার ত্রুটি, পানি নিষ্কাশনের রাস্তার বাধাগ্রস্ততা ইত্যাদি বড় কারণ। ফলত সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার নগরীতে পরিণত হয় ঢাকা। একদিকে পানি প্রাপ্তির কষ্ট, সমস্যা অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা। অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মোকাবেলায় নানা রকম পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। নিরন্তর চেষ্টা চলছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আশু প্রয়োজন উভয় প্রান্তের জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, নদী ড্রেজিং পুকুর জলাশয়সহ জলাধার সংরক্ষণ, অধিকহারে বৃক্ষ রোপণ করা (অবশ্যই দেশী বৃক্ষ), নদীগুলোর উভয় পার্শ্ব ও জেগে ওঠা চর নিয়ে পরিকল্পনামাফিক ক্ষেত্র তৈরি করাসহ গবেষণালব্ধ বিকল্প বৃক্ষ ও বন সৃজনভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরি জরুরী, কৃষি ক্ষেত্রে খরা লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসল, পানি কম ব্যবহার্য ফসলের জাত আরও ব্যাপকতর উদ্ভাবনসহ ব্যবহার করা। ধান উৎপাদনে পানি কম ব্যবহারের পদ্ধতিগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়াসহ পানির অপচয় না করার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। চীনের একটি অঞ্চলে লবণাক্ত পানি শোধন প্রক্রিয়ায় পানযোগ্য করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে পত্রিকায় বেরিয়েছে। লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য এ বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। ঢাকার আশপাশে নদী, খাল, জলাশয় রক্ষাসহ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গভীর করে দূষণমুক্তভাবে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ ব্যাপারে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সচেতনতা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সহযোগিতা করতে হবে। কেননা, এ অবস্থা থেকে কেউ আলাদাভাবে কী রক্ষা পাবে? কঙ্কন সরকার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।
×