ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে চট্টগ্রামে আক্ষেপ ঘোচালেন তামিম

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

অবশেষে চট্টগ্রামে আক্ষেপ ঘোচালেন তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ‘আমি চাচ্ছিলাম চট্টগ্রামে আমার হোম ভেন্যুতে অন্তত একটি শতক করতে। তা করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে।’-শতকের পর বলেছেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। বহুদিন, বহু বছর পর অবশেষে চট্টগ্রামে যে শতক পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচেছে তার। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট অভিষেকের প্রায় ৭ বছর পর জন্মস্থান চট্টগ্রামে শতক পেয়েছেন তামিম। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছেন ১৭১ বলে ১৪ চার ও ১ ছক্কায় ১০৯ রান। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট শতক করে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শতক করার দিক দিয়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে সবার উপরে অবস্থান করছেন তামিম। তাও আবার পরপর দুই টেস্টেই শতক করেছেন! বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই টেস্টে দুইবার শতক করে দেখান তামিম। এর আগেও তামিম ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে পরপর দুই টেস্টের টানা দুই ইনিংসে শতক করেছিলেন। লর্ডসে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রান করে অনার্স বোর্ডে স্থান করে নিয়েছিলেন। এরপর ম্যানচেস্টারে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১০৮ রান। এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৯ রান করার পর চট্টগ্রাম টেস্টেও করেছেন সমান রান। এ অসাধারণ ইনিংস আবার চট্টগ্রামবাসীকে দিয়েছে প্রশান্তি। প্রথমবারের মতো যে ‘লোকাল বয়’ তামিমকে চট্টগ্রামের মাটিতে শতক করতে দেখলেন চট্টগ্রামবাসী। এ ইনিংস খেলে তামিম দেশের মাটিতেও টানা দুই টেস্টে শতক করলেন। দেশের বাইরে তো আগেই করেছেন। খুব সুন্দরভাবে ইনিংসটাকে আরও বড় করে যান তামিম। কিন্তু ১০৯ রানের সময়ই বিপত্তি ঘটে। সিকান্দার রাজার বলে একটু আগে বেড়ে শট নেন। বল চলে যায় মিডঅনে। সেখানে থাকা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা বলটি তালুবন্দী করেন। তামিমের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। তবে এর আগেই তামিম তার ওপেনার সঙ্গী ইমরুলের সঙ্গে প্রথম উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড ২২৪ রানের জুটি গড়েন। বাংলাদেশের হয়ে তামিম প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুইবার পরপর দুই টেস্টে শতক করার যোগ্যতা দেখান। তামিম ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে শতক করার পর মুমিনুল হক (১৮১ ও ১২৬*) গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে শতক করেন। তামিমের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মুমিনুল। আবার তামিম দুই টেস্টেই শতক করার দিক দিয়ে এককভাবে নিজের নাম লেখান। মুমিনুল একবার, তামিম দুইবার এমন কৃতিত্ব গড়েন। তামিমের এ কৃতিত্বে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের অপেক্ষারও অবসান ঘটে গেল। তারা যে তামিমকে চট্টগ্রামে শতক করতে দেখতে চান, সেই আশা পূরণ হয়ে গেল। দেশে বিদেশে মিলিয়ে এর আগে ৯টি শতক করেছিলেন তামিম। টেস্টে ৫টি ও ওয়ানডেতে ৪টি শতক করেছিলেন। অথচ জন্মস্থান চট্টগ্রামের মাটিতেই তার কোন শতক ছিল না। এবার তামিম ক্যারিয়ারের ১০ নম্বর শতকটি করেন। সেই শতকটি আবার করেন চট্টগ্রামেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। খুলনা টেস্টের আগে কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে তামিমকে নিয়ে যেভাবে অনুশীলনে ব্যস্ত থেকেছেন। তার ফল ভালভাবেই মিলছে। যে ব্যাটসম্যান খুলনা টেস্টে ৩৩২ বল খেলে ৪৭৩ মিনিট উইকেটে থেকে মাত্র ১০ চার মেরে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। ধুন্ধুমার ব্যাটিং ভুলে সেøা ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ব্যাটসম্যানই কিনা ভিন্ন রূপে চট্টগ্রামে আবির্ভুত হলেন। ১৭১ বল খেলে ২৫২ মিনিট উইকেটে থেকে ১৪ চার ও ১ ছক্কায় ১০৯ রান করলেন! তামিম পারেন। তা আবারও প্রমাণ করলেন। শতক খড়ায় পড়ে যাওয়া তামিম দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চারবছর পর শতক পেয়েছিলেন। ৭ দিন পরই আরেকটি শতক করে ফেলেছেন। টেস্টে তামিমের ৬ শতকের মধ্যে তিনটি এসেছে বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১০ সালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ১৫১, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের খুলনা টেস্টে ১০৯ রান করার পর বুধবার আরেকটি শতক করেন চট্টগ্রামে। বাকি তিনটির মধ্যে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংসটাউনে ১২৮, ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ১০৩ ও ম্যানচেস্টারে ১০৮ রান করেন তামিম। চট্টগ্রামে তামিম এর আগে ৯ টেস্টে ১৮ ইনিংস খেলেন। আর ২০০৮ সালে টেস্ট খেলা শুরু করে ৩৬ টেস্ট খেলেন। কিন্তু একবারই চট্টগ্রামে শুধু শতকের কাছাকাছি যেতে পারেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। দুটি অর্ধশতকও ছিল। কিন্তু ছিল না কোন শতক। অপূর্ণতা তাই ছিলই চট্টগ্রামবাসীর, তামিমেরও। নিজ ভূমেই যে শতক অধরাই হয়ে ছিল। অবশেষে ৩৭ টেস্টে এসে চট্টগ্রামে ১৯ ইনিংসে গিয়ে অধরা শতকটি পান তামিম। চট্টগ্রামে যে শতক হচ্ছিল না, সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেন।
×