ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে এবার ভ্রাম্যমাণ আদালত

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

নদী দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে এবার ভ্রাম্যমাণ আদালত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুধু উচ্ছেদ অভিযান নয়, এবার নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোন ব্যক্তি নদী দখল, দূষণের সঙ্গে জড়িত থাকলে, উদ্ধার করা জায়গা পুনরায় দখলের প্রমাণ পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দখলকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিআইডব্লিটিএ জানিয়েছে, নদী সংক্রান্ত যেসব আইন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য তালিকাভুক্ত হয়নি সেসব আইন মোবাইল কোর্ট আইনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। পরিবেশ অধিদফতর, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য নদ-নদীর নাব্যতা এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ২৫তম সভায় নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বুধবার নৌমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত টাস্কফোর্সের সভায় নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়াও নদীর যেসব স্থানে পিলার স্থাপনে আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে সেসব স্থানে পিলার স্থাপনে আদালতের নির্দেশনা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে টাস্কফোর্সের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিস দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ। তিনি জানান, আদালতের রায় অনুযায়ী সিএস ও আরএস ম্যাপ ধরে সীমানা জরিপ করা হলেও পুনরায় আদালতের কাছে এ ধরনের নির্দেশনা চাওয়া আদালত অবমাননার শামিল। এছাড়াও টাস্কফোর্সের সভায় বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল হিসেবে পরিচিত বুড়িগঙ্গার শাখা নদী উদ্ধার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সভায় র‌্যাব ও নৌ পুলিশের জন্য নদীর বরাদ্দ দেয়া জায়গা বাদ দিয়ে সমপরিমাণ জায়গা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে একবার উদ্ধার হওয়ার পর পুনরায় যারা নদীর জায়গা দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। ঢাকার নদী দখল উদ্ধারের ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ এবং মনিটারিংয়ের অভাবে উদ্ধার হওয়া জায়গা পুনরায় দখলরোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে দখলদারদের বিরুদ্ধে বার বার অভিযান চালিয়েও নদী রক্ষায় কোন কাজে আসেনি। ২০০৯ সালে নদীর রক্ষায় আদালতের যুগান্তকারী রায়ের পর নতুন করে নদী রক্ষায় কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। বিশেষ করে এ দফায় অভিযানের পাশাপাশি নদীর সীমানা পিলার স্থাপন ও নদীর পাড় বাঁধাই করে দেয়া হয়েছে। তবে নদীর পাড় বাঁধাইয়ের পাশাপাশি ওয়াকওয়ে নির্মাণে অগ্রগতি হলেও সীমানা পিলার নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের প্রবাহ ধরেই পিলার স্থাপন করায় এ বিতর্কের জন্ম নেয়। যদিও আদালতের রায়ে সিএস ও আরএস ম্যাপ অনুসরণ করে পিলার স্থাপনে অনুমতি দেয়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে শুষ্ক মৌসুম এবং বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবাহ যে পর্যায়ে যায় তার মাঝামাঝি পর্যায়ের বেলাভূমিই হলো নদীর প্রকৃত সীমানা। আইন অনুযায়ী নদীর এই সীমানার মধ্যে কেউ কোন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। বিআইডব্লিটিএ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে চার নদীর জরিপ কাজ ও সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। যেসব এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা অপসারণ করে সঠিক স্থানে পিলার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় ভুলভাবে বসানো সীমানা পিলার অপসারণ করে সঠিক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে। ভুলভাবে পিলার বসানোর কারণে তুরাগ নদীর এই অংশে ৩১ বিঘা জমি দখল করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। অভিযানের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করেছে বিআইডব্লিটিএ। মূলত সীমানা পিলার নিয়ে বিতর্ক উঠার পর আদালত গত জুলাই মাসে এ বিষয়ে পুনরায় আর একটি আদেশ প্রদান করে। আদালতের আদেশে যেসব স্থানে সীমানা পিলার বসানো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেসব এলাকায় সঠিক স্থানে সীমানা পিলার বসানের নির্দেশ দেয়। নৌমন্ত্রী ও গাজীপুরের মেয়রের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিস ॥ ঢাকার চার নদী রক্ষায় হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে বাধা দেয়ায় আদালত অবমাননার অভিযোগে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সহকারী সচিব মোঃ হাফিজুর রহমানকে লিগ্যাল নোটিস দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ।
×