ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএসএমএমইউতে সেমিনারে ॥ টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ নভেম্বর ২০১৪

বিএসএমএমইউতে সেমিনারে ॥ টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান

মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগের চিকিৎসা নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিআইবি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। আমি লাইন বাই লাইন পড়েছি। কোথাও লেখা নেই কে কাকে ঘুষ দিয়েছে। অনুমান নির্ভর রিপোর্ট দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোথায় কাকে কত টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে এটি স্পষ্ট করে উল্লেখ না করলে বুঝা যাবে প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগ ও দ্য সোসাইটি ফর স্টাডি অব চেস্ট পেইন যৌথভাবে এই লাইভ ওয়ার্কশপ এবং সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জুলফিকার রহমান খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু সিদ্দিক, দ্য সোসাইটি ফর স্টাডি অব চেস্ট পেইনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ সজল কৃষ্ণ ব্যানর্জি, বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এসএম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সাধন মজুমদার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোহাম্মদ নুরুল হক। স্বাস্থ্য সেক্টরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনরায় চালু ও আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে সরকার দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ করে গরিব মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। দেশে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়লেও হৃদরোগের চিকিৎসা সেবায় দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন পোলিও মুক্ত। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে সামগ্রিক চিকিৎসা সেবারই অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি এ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় বেসরকারী হাসপাতালের তুলনায় অর্ধেক। ক্ষেত্র বিশেষে তিন ভাগের এক ভাগ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের মানও উন্নতমানের। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এখানে অসংখ্য রোগী আসেন। কিন্তু একটি মাত্র সিটিস্ক্যান ও এমআরআই মেশিনের মাধ্যমে রোগীদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন চিকিৎসা ও বিভাগ সংযোজিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে সব সময় দিক-নিদের্শনা দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দুটি অত্যাধুনিক বহির্বিভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়েছে। যা শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে জটিল রোগ গবেষণার ক্ষেত্রে নুতন নতুন কর্মসূচী হাতে নেয়া হচ্ছে। অতি শীঘ্রই একটি ৭০০ বেডের অত্যাধুনিক সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দিন দিন হৃদরোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দ্য সোসাইটি ফর স্টাডি অব চেস্ট পেইনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, মানসিক দুশ্চিন্তা, কায়িক পরিশ্রম কম করা, ধূমপান ইত্যাদি কারণে হৃদরোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাঁরা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কায়িক পরিশ্রম বিশেষ করে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করতে হবে। মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা দরকার। এছাড়া ধূমপান ও মদপান না করা এবং হৃদবান্ধব খাবার যেমন-শাকসবজি, ফলমূল, ছোটমাছ, চামড়া ছাড়া পরিমাণ মতো মুরগির মাংস খাওয়া ও কুসুম ব্যতীত ডিমের সাদা অংশ খাওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। দ্য সোসাইটি ফর স্টাডি অব চেস্ট পেইনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এসএম মোস্তফা জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া লাইভ ওয়ার্কশপ অন কমপ্লেক্স করোনারী ইন্টারভেনশন এবং সায়েন্টিফিক কনফারেন্সের মাধ্যমে হৃদরোগের চিকিৎসায় গবেষণালব্ধ জ্ঞানের আদান-প্রদান, জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, জ্ঞান ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিনিময়, অত্যাধুনিক গাইডলাইন তৈরি ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যা দেশব্যাপী হৃদরোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োগের মাধ্যমে হৃদরোগীদের সঠিক ও সর্বাধুনিক চিকিৎসাতেও ভূমিকা রাখবে।
×