ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভেনিস উৎসবে বাংলাদেশী পরিচালকের চলচ্চিত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ নভেম্বর ২০১৪

ভেনিস উৎসবে বাংলাদেশী পরিচালকের চলচ্চিত্র

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরই বিভিন্ন কারণে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয় ইতালির ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব। ইতালির ভেনিসের লিদো দি ভেনেছিয়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো অন্যতম এই বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসব ‘৭১তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল-২০১৪’। এ উৎসবে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশী পরিচালক কাজী টিপুর স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘১৮+’ প্রদর্শিত হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ উৎসব শুরু হয়। এ উৎসবে মোট ৩২টি দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি পরিচালক কাজী টিপুর ‘১৮+’ চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। ইতালির মিলানো পৌরসভা এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত দেড় ঘণ্টার চলচ্চিত্রটি এর আগে ইতালির বিভিন্ন শহরের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রদর্শিত হয়। সে সময় এ চলচ্চিত্রের জন্য ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন পরিচালক। পরিচালক কাজী টিপু জানিয়েছেন ‘১৮+’ চলচ্চিত্রটি ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানোর বিভিন্ন স্থানে চিত্রায়ন করা হয়েছে। এতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন কারিনা নামে এক ইতালীয় মেয়ে। এছাড়াও আরও অনেক চরিত্রে ইতালীয় শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। ইমরান তার পরিবার এবং কমিউনিটির সঙ্গে বাংলায় কথা বলে, ইতালীয়দের সঙ্গে ইতালীয় ভাষায়। চলচ্চিত্রে একই সঙ্গে দুটি ভাষার ব্যবহার এবং দুই সংস্কৃতির টানাপোড়েন দেখানো হয়েছে। চলচ্চিত্রের কাহিনীতে দেখা যায় ইমরান নামের এক ছেলে শৈশব থেকে প্রাবাসী বাবা-মার সঙ্গে ইতালির মিলানো শহরে থিতু হয়। ধীরে ধীরে সে বড় হতে থাকে, এদেশের স্কুল কলেজে পড়ে, ইতালীয় বন্ধু-বান্ধবী তৈরি হয়। একসময় সে কারিনা নামের এক ইতালীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে। এদিকে ইমরানের বাবা-মা চান ছেলেকে বাংলাদেশি সংস্কৃতি, বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে ধরে রাখতে। দোটানায় পড়ে যায় ইমরান। ঘরের পরিবেশ এবং বাইরের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারে না সে। সে বুঝতে পারে না কোনটা তার আসল ঠিকানা। একসময় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ইমরান। এক রাতে পার্কের মধ্যে বসে বন্ধুদের সঙ্গে নেশা করার সময় সেখানে হানা দেয় ইতালীয় পুলিশ। ইমরানের অন্য বন্ধুরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। চলচ্চিত্রটির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় ইমরান একটি নদীর কিনারে একা একা বসে একটা কাগজের নৌকা বানায়। নদীর পানিতে নৌকাটা ভাসিয়ে দিয়ে সে মনে করে এই নৌকাটার যেমন কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই, তার জীবনেরও সঠিক কোন ঠিকানা নেই। তাঁর মতো হাজার হাজার ইমরান প্রবাসে বেড়ে উঠতে গিয়ে দুই সংস্কৃতির মাঝে পড়ে দিক হারিয়ে ফেলছে। কোথায় তারা চলেছে, কোথায় তাদের শেষ ঠিকানা, তারা কেউ জানে না। এদিকে ইমরানের বাবা একজন ব্যবসায়ী। তিনি সারাক্ষণ টাকার পেছনে ছোটেন। ছেলেমেয়েকে সময় দেন না। রাতে বাসায় ফিরে পড়ে থাকেন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের খবর নিয়ে। এ চ্যানেল থেকে ও চ্যানেলে যান আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কোথাও ভাল কোন খবর খুঁজে পান না। ইমরানের মা একজন পুরোদস্তুর গৃহিণী। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে তার বিভিন্ন চাহিদার কথা মাকে জানায়। মা তা মেটাতে না পারায় সে অবাধ্য বেয়াড়া হয়ে ওঠে। মা কিছুই করতে পারেন না। বাবাকেও জানাতে ভয় পান। নীরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকে না। ‘১৮+’ সম্পর্কে পরিচালক কাজী টিপু বলেন, চলচ্চিত্রের গল্পটা একটা সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। বছর দুই আগে ইমরান নামের এক প্রবাসী ছেলেকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাঁর ভেতরের টানাপোড়েনগুলো আমার মনে দাগ কেটেছে। আমার মনে হয়েছে আমাদের প্রবাসী কমিউনিটির সচেতনতা বাড়ানোর জন্য হলেও বিষয়টি পর্দায় তুলে আনা দরকার। প্রবাসীরা যখন আমার চলচ্চিত্রটা দেখেছে তখন তাদের কাছে মনে হয়েছে তাঁরা দেখছে না, আয়নার সামনে বসে আছে। আমি মনে করি এখানেই আমার সফলতা। তিনি বলেন, কানের পরই বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হলো ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল। যতদূর মনে পড়ে সম্ভবত এর আগে কোন বাংলাদেশি পরিচালকের চলচ্চিত্র ভেনিসের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়নি। এখানে আমার চলচ্চিত্রটি দেখাতে পেরে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারের প্রেজেন্ট করতে পেরেছি বলে আমি মনে করি। শুধু বিনোদনের জন্য নয় দায়িত্ববোধ থেকে আমি চলচ্চিত্রকে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। আগামীতে আরও ভাল কাজ করতে চাই। কাজী টিপু জানান, ‘১৮+’চলচ্চিত্রটি ঢাকায় কয়েকটি প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে তাঁর। ভাল বিনিয়োগ পেলে এ বছরের শেষ নাগাদ নতুন কাজে হাত দেবেন বলে জানান তিনি।
×