ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ইসলামাবাদ গেল সুইনু বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১১ নভেম্বর ২০১৪

ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ইসলামাবাদ গেল সুইনু বাহিনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যদি চাওয়াটা হয় নিখুঁত, তাহলে পাওয়াটা হবে সুনিশ্চিত। তবে নিখুঁত প্রাপ্তির জন্য দরকার ইচ্ছা, পরিকল্পনা, পরিশ্রম করার মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস ও খানিকটা ভাগ্যের ছোঁয়াও। এসব কিছুর সমন্বয় ঘটাতেই সোমবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে বিমানে চাপাল সুইনুবাহিনীরা। তৃতীয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে প্রথমে তারা যাবে পাকিস্তানের করাচী, সেখান থেকে ইসলামাবাদ। আগামী ১১-২০ নবেম্বর থেকে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশসহ অংশ নিচ্ছে আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। এই আট দল দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলবে। গ্রুপের সেরা দুই দল খেলবে সেমিফাইনালে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা একটাইÑ ফাইনালে খেলা।’ তবে কোচ নোরিওর ভাষ্য ভিন্নÑ জেতার জন্য সেরাটাই দেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। গত ৪ অক্টোবর থেকে দলের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রথম বিদেশী কোচ নোরিও। মধ্য অক্টোবরে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ মহিলা দলের উপদেষ্টা কোচের দায়িত্বও। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের ইতিহাস এক যুগও হয়নি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের প্রথম অংশগ্রহণ ২০১০ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে। নেপালের কাছে ০-১ গোলে হেরে যাত্রা শুরু। তবে সেবার তাম্রপদক করায়ত্ত করে চমকে দেয় বাংলাদেশী মহিলা ফুটবলাররা। এই সাফল্য বজায় থাকে ওই বছরেই কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এও। ৪ ম্যাচের ২টিতে জয়, দুটিতে হার। বাংলাদেশ পৌঁছে যায় সেমিতে। সেখানে অবশ্য নেপালের কাছে ০-৩ গোলে হারায় স্বপ্নভঙ্গ হয়। এ আসরে ২০১২ সালে (শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত) অবশ্য গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় লাল-সবুজ জার্সিধারীদের (শ্রীলঙ্কার কাছে ২-১ গোলে হার)। ৫৪ বছর বয়সী সুকিতাতের কোচিং ক্যারিয়ার মন্দ নয়। ১৯৮৯ সালে টয়োটা মোটর কর্পোরেশনের কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু। এরপর পর্যায়ক্রমে কাজ করেছেন নাগয়া গ্রামপাস এইট, গুয়াম জাতীয় দলসহ বিভিন্ন ক্লাবের হেড কোচ হিসেবে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে লাওস জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। দলের অধিনায়ক সুইনু প্রু মারমা। সেন্টার মিডফিল্ডার। রাঙ্গামাটির কাউখালির তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আরেক ছোট বোন মাইনু প্রু মারমাও মিডফিল্ডে খেলেন। তিনিও আছেন এবারের সাফগামী দলে। ২০০৪ সালে মেয়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য আনসার থেকে প্রথম দল গড়া হয়েছিল। সেই আসরে সুইনুর দল হয় রানার্সআপ। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে নজর কেড়েছিলেন। সেই সুবাদে দক্ষিণ কোরিয়া সফরের জন্য অনুর্ধ-১৭ মহিলা ফুটবলারদের দলে সহজেই সুযোগ পান। দক্ষিণ কোরিয়ায় সেই স্বপ্নের সফর শেষে ২০০৬ সালে খেলতে যান উড়িষ্যাতেও। এ ছাড়া দেশে দুইবার খেলেন আন্তঃজেলা টুর্নামেন্টে। প্রথমবার ঢাকা জেলার হয়ে শিরোপা জয়ের পর দ্বিতীয় আসরে খেলেন নিজের জেলা রাঙ্গামাটির হয়েই। চ্যাম্পিয়ন হন সেবারও। গত বছর আনসার দলের হয়ে অংশ নেন মহিলা ফুটবলের প্রথম জাতীয় লীগে। ইতোমধ্যে জাতীয় দলের হয়ে ৫টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। ২০১০ কক্সবাজারে ও ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এসএ গেমসে, ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুর্ধ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপে ও অলিম্পিক বাছাইয়ে অংশ নেন। বাংলাদেশে মহিলা ফুটবলের সূচনাপর্বে সেই ২০০৪ সাল থেকেই জাতীয় দলে নিয়মিত তিনি। সর্বশেষ এসএ গেমসে অংশ নেন দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে। দক্ষিণ এশিয়ার সাত দলের মধ্যে জেতেন তাম্রপদকও। প্রথম দুটো ইন্দো-বাংলা গেমসেও সফল সুইনুরা। সেখানে কলকাতার মেয়েদের হারিয়ে জিতেছিলেন সোনা। এবারের সাফগামী ২৯ সদস্যের বাংলাদেশ দলে রয়েছেন ২০ ফুটবলার, ৮ কর্মকর্তা ও একজন রেফারি অথচ প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দলের সঙ্গে যাচ্ছেন না কোন চিকিৎসক কিংবা ফিজিও! এ প্রসঙ্গে বাফুফের মহিলা ফুটবল উইংয়ের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘জাপানী কোচ সুকিতাতে নোরিওর চাহিদা অনুযায়ী দলের সঙ্গে তিন স্থানীয় কোচকে পাঠাতে হচ্ছে আর আয়োজকরা টিম কন্টিনজেন্ট ২৭ জনে বেঁধে দেয়ায় দলের সঙ্গে চিকিৎসক পাঠানো যাচ্ছে না।’ তবে দলের সঙ্গে চিকিৎসক না থাকলেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সমস্যা হবে না বলে জানান কিরণ, ‘আমরা পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের দলের সঙ্গে একজন চিকিৎসক রাখবেন বলে জানিয়েছে।’ অনুর্ধ-১৬ মহিলা দলের ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন, খাজিদা আক্তার শিমা, মিডফিল্ডার কৃষ্ণা রানী, জাহান মৌসুমী, স্ট্রাইকার বিপাশা মালী ও লিপি আক্তার সুযোগ পেয়েছেন ইসলামাবাদগামী জাতীয় মহিলা দলে। এ প্রসঙ্গে সুকিতাতে বলেছেন, ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা ফুটবলে বাংলাদেশের খেলাগুলো আমি দেখেছি। আমার কাছে তাদের খেলা ভাল লেগেছে। তাই তাদের জাতীয় দলে ডেকেছি। আশা করি বড় পরিসরে তারা নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হবে।’ এখন দেখার বিষয়, সাফে এবার কেমন ফল করে নোরিও বাহিনী।
×