ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আঙ্গুল বাঁকা করতে বাধ্য করবেন না ॥ মহিউদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১১ নভেম্বর ২০১৪

আঙ্গুল বাঁকা করতে বাধ্য করবেন না ॥ মহিউদ্দিন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বার বার সময় দিয়ে যাচ্ছি। এবার আর ধরাবাঁধা সময় নয়, ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলে শুরু হয়ে যাবে অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন। ঘেরাও, অবরোধের মতো কর্মসূচী দিতে আমাদের বাধ্য করবেন না। চট্টগ্রাম বন্দরে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, অবৈধ ঠিকাদার সাইফ পাওয়ারকে কালোতালিকাভুক্ত করে জরিমানা আদায়সহ বন্দরের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে যে কোন মুহূর্তে এ আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে। আঙ্গুল বাঁকা করতে আমাকে বাধ্য করবেন না। আমরা দুর্বল নই। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে আন্দোলন চলছে বলে যদি দুর্বলতা ভাবা হয় তাহলে মারাত্মক ভুল হবে। নৌ মন্ত্রণালয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের সব গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। যে সাগরডাকাতির মতো ঘটনা হয়েছে তা ঢাকা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই সময় থাকতে এসব বিষয় নিয়ে ব্যবস্থা নিন। নচেৎ ফেঁসে যাবেন। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এ ঘোষণা দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বন্দর রক্ষা পরিষদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শ্রমিক নেতা মোঃ ওয়াহিদুল্লা সরকার। সাংবাদিক সম্মেলনে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে এত কালের নজিরবিহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা আরও বেগবান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় শেষ করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে যে কোন মুহূর্তে। ইতোপূর্বে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের কারণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এহেন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ধিকৃত হয়েছে। বন্দরে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সরকারের সকল মহলকে অবহিত করা হয়েছে। অতঃপর নৌপরিবহনমন্ত্রী সংবাদপত্রের মাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। আমি এই পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে সে প্রস্তাব গ্রহণ করে নৌপরিবহনমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাই। এতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য বৈঠকের প্রস্তাব করেছি। তিনি বলেন, হজ পালনে আমি একমাসেরও বেশি সময় সৌদি আরবে ছিলাম। তারা ওই পুরো সময় অনুধাবনের সময় পেয়েছেন। উপর্যুপরি আন্দোলন কর্মসূচী না আসায় যারা ভেবেছেন আন্দোলন ঠা-া হয়ে গেছে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আমাদের এই আন্দোলন নিয়ে কুচক্রীমহল বহু বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অথচ, আমাদের আন্দোলনের চাপে ইতোমধ্যে চবক কর্তৃপক্ষ ডিপিএম (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) বাতিল করেছে। এনসিটির অপারেশন কর্মকা- আগামী জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড) প্রক্রিয়ায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) মাধ্যমে পরিচালনা না করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) মাধ্যমে করাটা যে বেআইনী কাজ ছিল তা দেরিতে হলেও অনুধাবন করেছে। কিন্তু এই বেআইনী কাজটি এখন বন্ধ করা হয়নি। ঢাকা আইসিডির (ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো) চুক্তি মোতাবেক সাইফ পাওয়ারটেক গত বিশ মাসে ধরে কাজ শুরু না করার পরও চুক্তি বাতিল করেনি, সাইফ পাওয়ারকে জামানত বাজেয়াপ্ত, জরিমানা করা হয়নি এবং কালো তালিকাভুক্তও করা হয়নি। বেআইনী ও দুর্নীতির মাধ্যমে বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। আর সেই লুটের টাকার ভাগ স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তাই তারা সাইফের অবৈধ কর্মকা-কে সমর্থন করে যাচ্ছে; যা অত্যন্ত উদ্বেগ ও দুঃখজনক। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে পুরাতন স্টিভেডরদের নাম পরিবর্তন করে বার্থ / শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, সাইফ পাওয়ারটেক স্টিভেডর না হওয়া সত্ত্বেও তাকে অবৈধ ও বেআইনীভাবে বার্থ/টার্মিনাল অপারেশন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ সময় সিসিটিতে অপারেশনের নামে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) প্রায় ২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। সাইফ পাওয়ারটেক ১টি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য দরপত্র প্রদান করেছিল ১২০০ টাকার স্থলে ১৫৫ টাকায়। এভাবে সাইফ পাওয়ারটেক সিসিটি অপারেশনের নামে পূর্বাপর প্রায় ১৬০ কোটি টাকার বেশি বন্দর থেকে নিয়ে গেছে। একটি কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজে ১৫৫ টাকা দেখানো হলেও এতে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর বিল নিচ্ছে ১৫৫ টাকা। নামানোর পর তা স্টেকিং পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে আবার নিচ্ছে ২৫০ টাকা। নামানোর কাজে এবং স্টেকিং পর্যন্ত নিয়ে যেতে ব্যবহার করছে বন্দরের মূল্যবান যন্ত্রাপাতি। সেই যন্ত্রপাতির জ্বালানি, মেরামত থেকে শুরু করে সব খরচ দিচ্ছে চবক। অথচ, চবকের যন্ত্রপাতি ব্যবহার বাবদ আদায়কৃত বিল পকেটে ভরছে সাইফ পাওয়ারটেক।
×