ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে নিরাপত্তা তৎপরতা বেড়েছে, সাক্ষী সুরক্ষায় সভা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ নভেম্বর ২০১৪

শেরপুরে নিরাপত্তা তৎপরতা বেড়েছে, সাক্ষী সুরক্ষায় সভা

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চূড়ান্ত বিচারে ফাঁসি বহাল থাকা বৃৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর প্রধান, জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের নিজ এলাকা শেরপুরে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবিরসহ তার পক্ষের লোকজনের হুমকি, হামলা ও নাশকতার আশঙ্কায় ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক এখনও কাটেনি। গত সোমবার ওই রায়ের পর থেকে রবিবার পর্যন্ত ৭ দিন অতিবাহিত হলেও সীমান্তবর্তী সোহাগপুর বিধবাপল্লীসহ রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য সাক্ষী, মামলার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের ওই আতঙ্ক-ভীতি এখনও কুরে কুরে খাচ্ছে। তবে রবিবার দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘উলফার কাছ থেকে জামায়াতের অস্ত্র সংগ্রহ, তোলপাড় : সোহাগপুর বিধবাপল্লীর নিরাপত্তা ও সাক্ষী সুরক্ষা দাবি’ শীর্ষক খবরে সাক্ষী সুরক্ষায় সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনসহ জরুরী সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নড়েচড়ে উঠেছে স্থানীয় প্রশাসন। এজন্য রবিবার দুপুুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনের সভাপতিত্বে তার সভাকক্ষে সাক্ষী সুরক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের মধুটিলা ইকোপার্কে জামায়াত-উলফার গোপন বৈঠক ও অস্ত্র ক্রয়ের খবরটি স্থানীয় প্রশাসন এড়িয়ে গেলেও মূলত সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে বেড়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। একটি সূত্রের দাবি, কামারুজ্জামানের নিজ নির্বাচনী এলাকার বিষয়টি চিন্তা করে তার ফাঁসি কার্যকরের প্রাক্কালে শেরপুরে সহসাই রেড এলার্ট জারি হতে পারে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে গণহত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে গত সোমবার সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ তার মৃত্যুদ- বহাল রাখে। চূড়ান্ত বিচারে ওই রায় শোনার পর পরই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা শেরপুর জেলা শহরে আনন্দে ফেটে পড়েন। কিন্তু আনন্দের সময় খুব একটা না গড়াতেই সেই বিধবাপল্লীতে ভীতি ছড়িয়ে দেয় কামারুজ্জামানের পক্ষের লোকজন। এলাকায় বেড়ে যায় কামারুজ্জামানের সাফাই সাক্ষী কাদির ডাক্তার ও আরশাদ আলীর বাড়িতে আগন্তুকদের আনাগোনা। শুরু হয় আতঙ্কের পালা। ওই অবস্থায় শনিবার বিধবাপল্লী আর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে আতঙ্ক আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী মধুটিলা ইকোপার্কে উলফা-জামায়াতের গোপন বৈঠকসহ উলফার কাছ থেকে জামায়াতের অস্ত্র ক্রয়ের একটি খবর। ফলে আতঙ্কের নতুন মাত্রায় তাঁরা একবারেই ভেঙে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একই দিন সোহাগপুর বিধবাপল্লী সংলগ্ন কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ১৫ সদস্যের একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। তারপরও পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন গতানুগতিক নীতি পাল্টে অধিক তৎপর হয়ে উঠে। ওই তৎপরতার অংশ হিসেবে রবিবার দুপুরে শেরপুরের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ রজনীগন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সুরক্ষায় অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব বিভাগের সদস্যদের আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থান নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অন্যথায় কারও অবহেলার কারণে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেলে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদেরই বহন করতে হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সভায় অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন চন্দ্র পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ শাহজাহান মিয়া, ৫ উপজেলার ইউএনও, ওসি, র‌্যাব, বিজিবি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন সাক্ষী উপস্থিত ছিলেন। সভায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মোহন মুন্সী, মজিবর রহমান পানু ও সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ জালাল উদ্দিন চূড়ান্ত বিচারে কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহালের পর থেকে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার বিষয় তুলে ধরেন। এ প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে ইতোমধ্যে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সোহাগপুর বিধবাপল্লীসহ রাষ্ট্রপক্ষের অন্যান্য সাক্ষীর প্রতিও পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব নজর রাখছে। এদিকে কামারুজ্জামানের রায় কার্যকরের মুহূর্তে সীমান্তবর্তী সোহাগপুর বিধবাপল্লীর অদূরে মধুটিলা ইকোপার্কে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির গোপন বৈঠকসহ অস্ত্র ক্রয়ের খবরটি স্থানীয় প্রশাসন প্রথম থেকেই এড়িয়ে গেলেও ওই বিষয়েও বেড়েছে তাদের তৎপরতা। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র মতে, ওই খবরটি জানার পর থেকেই পুলিশ-র‌্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে মধুটিলা বনবিভাগ রেঞ্জে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মধুটিলা ইকোপার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। ওই এলাকাতেও চলছে গোয়েন্দা তৎপরতা। এ ব্যাপারে শেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাজাহান মিয়া বলেন, বিষয়টি সত্য না মিথ্যা, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে সাক্ষীরা অনেকটা স্বস্তিতেই রয়েছেন। র‌্যাব-১৪ (জামালপুর-শেরপুর অঞ্চলের) ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন, কামারুজ্জামানের রায় কার্যকরকে সামনে রেখে সম্ভাব্য নাশকতাসহ রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাবের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী সীমান্তে উলফা-জামায়াতের গোপন বৈঠক ও উলফার কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ের খবরের সত্যতা নিরূপণে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।
×