ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী

আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১০ নভেম্বর ২০১৪

আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার ভিশন নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশে যেন একজন মানুষও ক্ষুধায় মারা না যায়। রবিবার সকালে খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার পাশাপাশি সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বাজারজাত এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যপ্রাপ্তি সহজলভ্য করতে খাদ্য উৎপাদন অবশ্যই বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়সমূহ পরিদর্শনে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রবিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। এ সময় তিনি মন্ত্রণালয়টির নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ও এর বাস্তবায়নের খোঁজখবর নেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গতিশীলতায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সত্যিই এক দুরূহ কাজ। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত নির্দেশনা ও রূপরেখা অনুসরণ করে এ যাবত নেয়া আমাদের পদক্ষেপগুলোর ভাল ফল পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটি লক্ষ্য আছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। আমরা অন্যের কাছে হাত পাততে চাই না। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে, কৃষকদের কাছে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে, কৃষির আধুনিকায়নে এবং গবেষণার ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে পদক্ষেপ নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর দল ও পূর্ববর্তী বিএনপির মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করে বলেন, আমাদের নীতি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু বিএনপি ও তার সাবেক অর্থমন্ত্রীর নীতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতÑ দাতাদের কাছে সাহায্য চাওয়া। অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন। এছাড়া এ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকা ইকফাত বক্তৃতা করেন। এতে খাদ্যমন্ত্রী দারিদ্র্য হ্রাসে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সময়সীমার আগে সাফল্য অর্জনের জন্য এফএও কর্তৃক ৩৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে দেয়া ‘ডিপ্লোমা এ্যাওয়ার্ড’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। ভয়াবহ বন্যার পর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলশ্রুতিতে এটা সম্ভব হয়েছিল এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার চিরকাল অন্যের কাছে হাত পাতার নীতিতে বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার যারা খেতে পারত না তাদের জন্য একবেলা, যারা একবেলা খেত, তাদের জন্য দু’বেলা এবং যারা দু’বেলা খেত তাদের জন্য দিনে তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করেছে। এখন সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সব মানুষের পুষ্টি নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনে উদাহরণ সৃষ্টিকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি। অথচ এফএওর মহাপরিচালক এক সময় খাদ্য উৎপাদন খাতে সংস্থাটির প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের দীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সাফল্য আমাদের সেসব পদক লাভে সহায়তা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বছরের পর বছর জনসংখ্যা বেড়েছে। অথচ আবাদী জমি কমেছে। কিন্তু আমাদের কৃষি উৎপাদন কখনও কমেনি। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ১.৯০ কোটি মেট্রিক টন, যা বর্তমানে ৩.৬৮ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২০১৪ সালে ৩ কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সাফল্যের ফলে ২০১২ সালের পরে সরকারী খাতে চাল আমদানি করতে হয়নি। বরং আমরা চাল রফতানির উদ্যোগ নিয়েছি। শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানির প্রক্রিয়া চলছে।
×